আবদুস সাত্তার। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে থাকেন, গ্রামের নাম বনলতা। কয়েক বছর আগেও গ্রামেই বাসিন্দা ছিল ২০০০-এর-ও বেশি। বর্তমানে? থাকতে পেরেছেন ৫০০-র-ও কম মানুষ! অধিকাংশই চাষী। প্রত্যেক দিন একবার করে জোয়ার আসে আর সাত্তার খোঁজেন সমুদ্র কতটা ভাঙল তাদের গ্রামকে। গত দু’বছরে দু’টো সাইক্লোন হয়েছিল। গ্রাম সমুদ্রের জলে ভেসে চলে গিয়েছে! যেটুকু রয়েছে সেখানে শুধু সমুদ্রের নুন জল! দক্ষিণে, নদী উপত্যকায় আরও একটি গ্রাম, গাবুরা। সেখানকার বাসিন্দা ৪৩ বছরের নাজমা খাতুনের জবানবন্দী শুনবেন? বলেছেন, “গ্রাম ভর্তি শুধু জল। কিন্তু সেই নুন জলে হাত দেওয়া যাবে না! খাওয়া তো দূরের কথা। একসময় ছিল এখানকার মাটি বটে! আম, কাঁঠালের মত অনেকরকমের ফল, কত শষ্যের ফলন হতো এখানকার মাটিতে। ছোট ছোট পুকুর ছিল, কুয়োও ছিল। কত রোজগার ছিল আমাদের! সব চলে গিয়েছে। সমুদ্রের স্তরের উচ্চতা বেড়ে গিয়েছে, গ্রামের প্রায় পুরোটাই এখন নুন জলের তলায়! আমরা সে কয়েকজন এখন থাকি, সেলাই করে কোনওরকমে দিন যায়। তার চেয়েও গুরত্বপূর্ণ, আমাদের প্রায় সকলেই স্কিনের অসুখে আক্রান্ত!
বনলতার বাসিন্দাদেরও একই অবস্থা। বাংলাদেশের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম আর কয়েক দশকের মধ্যে পুরোটাই চলে যাবে সমুদ্রের তলায়! এরকম মন্তব্য প্রায়ই শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশের সয়েল রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট সংস্থার গবেষকদের মুখ থেকে। ২০০৯-এর হিসেবেই বলা হয়েছিল ৪০৭৭ বর্গ মাইল জমি সমুদ্রপৃষ্ঠের স্তরের উচ্চতার বৃদ্ধিতে জলের তলায় চলে গিয়েছে। আর লবণাক্ততা? গত ৩৫ বছরে ২৬ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে! বনবিবি গ্রামের মানুষ প্রত্যেকদিন ৪ কিলোমিটার হেঁটে রান্না এবং পানীয় জল আনতে যান!
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের শ্যামনগর অঞ্চলের বাসিন্দা প্রায় ৪ লক্ষ। কারও জন্য নেই বিশুদ্ধ পানীয় জল। সরকারি আধিকারিকদের বক্তব্য, ডিস্যালিনেশন পাম্পের প্রয়োজন লবণ জলকে বিশুদ্ধ পানীয় জলে পরিণত করতে। ৪ লক্ষ মানুষের জন্য সরকারের বরাদ্দ ৫০টি পাম্প! সরকারের টাকা নেই!
আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবে ২০০০ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে বাংলাদেশের ০.৪১ শতাংশ গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট ক্ষতি হয়েছিল। আর ২০১৯-এর একটা সাইক্লোনে সেই ক্ষতির পরিমাণ চলে যায় ৮.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে!
প্যারিসেও একই কাতর আবেদন ছিল বাংলাদেশের। গ্লাসগো ক্লাইমেট সামিটেও একইভাবে কাতর আবেদন রাখছে বাংলাদেশ উন্নত ও ধনী দেশগুলোর সামনে। আর্থিক অনুদান না হলে আবহাওয়া পরিবর্তনকে রোখা যাবে না।
সাত্তার, নাজমা খাতুনরা বলছেন, দেরি হয়ে গিয়েছে। আবার ঘুরে দাঁড়ানো প্রায় অসম্ভব। এখন অপেক্ষা, কবে নিজেদের গ্রাম ছেড়ে বাকিদের মত ওদেরও পালাতে হবে!