এইচ এম পিভি – ভয় নাকি নির্ভয় !

এইচ এম পিভি – ভয় নাকি নির্ভয় !

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৫ জানুয়ারী, ২০২৫

করোনা ভাইরাসের মারণ কামরের পর, সারা বিশ্ব তটস্থ। এই বুঝি কোন নতুন ভাইরাস কিংবা রোগের উপদ্রব আসে আর সকলকে লকডাউন এ পাঠিয়ে দেয়। সম্প্রতি, এমনই উদ্বেগ দেখা দিয়েছে হিউম্যান মেটাপোনিউমো ভাইরাস (এইচ এম পিভি) নিয়ে। ডাক্তাররা আশ্বস্ত করছেন, ভয় তেমন নেই। তবে ছোট শিশু, বয়স্ক এবং যাদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা তুলনায় কম, তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি উদ্বেগজনক হতে পারে।

চীন। আপাতত সেখানে কেস সংখ্যা বেশ বর্ধিষ্ণু। চীনের পরে সংক্রমনের বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে মালয়েশিয়া, হংকং এ । ভারতে এখনো পর্যন্ত সাতটি কেস ধরা পড়েছে। জাপানসহ উন্নত এবং প্রতিবেশী দেশগুলি এ বিষয়ে বিশেষ নজরদারি রাখছে। আসলে, জাপান ইতিমধ্যেই ইনফ্লুয়েঞ্জার সঙ্গে বড়মাপের লড়াই করছে। ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯৪,২৫৯ কেস রেজিস্টার হয়েছে।

এইচ এম পিভি আসলে কি?

এটি একটি ভাইরাস। যা শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণ গুলি কিছুটা ফ্লু এর মতন। আবার কিছু ক্ষেত্রে মাম্পস এবং হামের সাথে এর মিল রয়েছে। মূলত শীতকাল এবং বসন্তের প্রথম দিকে যেমনটা হয়। সংক্রামিত ব্যক্তি বা পরিবেশের মধ্যে একজনের থেকে অপর জনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস। কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা, নাক বন্ধ থাকা এবং কিছু ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট – এইগুলি হল সাধারণ লক্ষণ। গুরুতর কেস গুলির ক্ষেত্রে বিশেষ লক্ষণ গুলি হল ক্রমাগত হাঁচি, শ্বাসকষ্ট, গলা ফুলে যাওয়া, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা। এই ভাইরাস যে কাউকে খুব কাবু করে দিতে পারে তা নয়। তবে, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) কম বয়সী, শিশু, বয়স্ক এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা নিতে বলছেন। নিউমোনিয়া বা ব্রঙ্কিওলাইটিসের মতন গুরুতর রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে, এনাদের ক্ষেত্রে।

ভাইরাসটি তিন থেকে ছ দিনের মধ্যে শরীরের মধ্যে বিকশিত হয়। রোগের তীব্রতা আর লক্ষণ অনুযায়ী আরো বেশ কয়েক দিন থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, এর কোন ভ্যাকসিন বা অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা এখনও পর্যন্ত উপলব্ধ নেই। যথেষ্ট পরিমাণ বিশ্রাম এবং শরীরকে হাইড্রেট রাখতে পারলেই সেরে ওঠা যায়। তবে গুরুতর ক্ষেত্রে অক্সিজেন সাপোর্টের দরকার পড়ে। সেক্ষেত্রে, হাসপাতালে ভর্তি করতেও হতে পারে।

রোগ থেকে বাঁচতে যা যা করণীয়

কমপক্ষে কুড়ি সেকেন্ড ধরে, ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া।
হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা।
সারফেস ক্লিনার দিয়ে বিভিন্ন জায়গা পরিষ্কার রাখা।
অসুস্থ হলে, অন্যদের কথা ভেবে, বাড়িতে থাকা।
হাচি বা কাশির সময় মুখে রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করা।
অসুস্থতার লক্ষণ আছে, এরকম মানুষজনের থেকে দূরে থাকা।

সোশ্যাল মিডিয়াতে উপচে পড়া নানান ধরনের পোস্ট ভয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা এ, মাইকোপ্লাসমা, নিউমোনিয়া, কোভিড ১৯ এর ভাইরাস সমন্বয়ে এই ভাইরাস তৈরি হয়েছে। তবে স্বস্তির কথা, এটি কোন নতুন ভাইরাস নয়, বরং বেশ কয়েক বছর ধরে ভারত সহ বিশ্বব্যাপী এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে অনেক আগেই। কিন্তু কিছু কিছু দেশে, যেমনটা আমাদের এখানেই এর উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি ঘটেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 + 4 =