একুশ শতকে খনিজ তেলের জায়গা নেবে ধাতব পদার্থ

একুশ শতকে খনিজ তেলের জায়গা নেবে ধাতব পদার্থ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৮ মে, ২০২২

গত ৮ ই মার্চ, ভারতীয় সময় ভোর ৫টা ৪২ মিনিট। বিশ্ববাজারে নিকেলের দাম হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করলো। এতই দ্রুত যে আতঙ্ক তৈরি হলো লণ্ডন মেটাল এক্সচেঞ্জে। মাত্র ১৮ মিনিটে এক টন নিকেলের দাম ১ লক্ষ ডলার ছাড়িয়ে গেল। ২৪ ঘন্টায় নিকেলের দাম বেড়ে গেল প্রায় ২৫০ গুন। কিন্তু কেন এই দাম বৃদ্ধি নিকেলের?

চেনা উত্তর আমাদের। ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা শুরুর পর বিশ্ববাজারে তৈরি ধাতব পদার্থের সংকট। রাশিয়ার উৎপাদিত তেল ‘যুদ্ধ অস্ত্র’ হয়ে ওঠার সাথে সাথেই জ্বালানির বিকল্প শক্তি হিসেবে উঠে আসে নিকেল খনিজটি। এই সংকটের দিকনির্দেশ এই যে- পৃথিবী ফসিলজাত জ্বালানির ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করে বিকল্প শক্তির দিকে এগোচ্ছে। দূষণের মাত্রা কম থাকবে, এমন ধাতব – যা শক্তি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে : এই দুই বৈশিষ্ট্য মিলিয়ে নিকেলের ভূমিকা হতে পারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসলে বিশ্ব এমন বিকল্প খনিজের দিকে যাচ্ছে যা, বৈদ্যুতিক ব্যাটারি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে মজুত করে রাখার কাজে লাগে। এসব খনিজের মধ্যে আছে- লিথিয়াম, নিকেল, গ্রাফাইট, ম্যাঙ্গানিজ এবং কোবল্ট। আগামী পৃথিবীর অর্থনীতি আরো বেশি বিদ্যুৎ ভিত্তিক হবে। আর তাতেই ভূমিকা রাখবে ফসিল জাত জ্বালানির বদলে নানান খনিজ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন কমপক্ষে ১৭ টি খনিজ পদার্থ আছে যা বিশ্বের জ্বালানি খাতের নতুন পর্বে উত্তরণের ক্ষেত্রে অতি জরুরি ভূমিকা পালন করবে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা আইইএ-র মতে ১৭ টি খনিজ পদার্থের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- লিথিয়াম, নিকেল, কোবল্ট, কপার, গ্রাফাইট, রেয়ার আর্থ পর্যায়ের বিরল ধাতুসমুহ। আইইএ-র বিশ্লেষক তায়ে ইউন কিম বলছেন, ২০৪০ সালের মধ্যে এসব খনিজের চাহিদা বিপুল বেড়ে যাবে। কার্বন্মুক্ত জ্বালানির ক্ষেত্রে এসব খনিজের ভূমিকা কেমন হবে তা নিয়ে একটি রিপোর্টও তৈরি করেছেন কিম। বিংশ শতাব্দির ইতিহাসে যেমন প্রাধান্য বিস্তার করেছে তেল, তেমনি একবিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে চাবিকাঠি হয়তো হয়ে উঠবে জ্বলানি উত্তর পর্বের নিয়ামক এসব খনিজ পদার্থ। যাদের বলা যেতে পারে ভবিষ্যতের খনিজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × four =