এক লিটার জলের বোতলে ২, ৪০,০০০ ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের টুকরো লুকিয়ে থাকতে পারে

এক লিটার জলের বোতলে ২, ৪০,০০০ ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের টুকরো লুকিয়ে থাকতে পারে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১১ জানুয়ারী, ২০২৪

আপনি যদি মনে করেন যে প্লাস্টিকের বোতল থেকে জল পান করে আপনি আপনার তৃষ্ণা নিবারণ করবেন, তাহলে আপনাকে আর একবার ভাবতে হবে। আপনি সম্ভবত আপনার শরীরের ভালোর চেয়ে বেশি ক্ষতি করছেন। একটি নতুন গবেষণায়, দেখা গেছে যে একটি এক লিটারের প্লাস্টিকের বোতল, ২,৪০,০০০-এরও বেশি ন্যানোপ্লাস্টিক টুকরো ধারণ করে। আমরা জানি যে একটি প্লাস্টিকের বোতলে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব রয়েছে, তবে নতুন গবেষণা দেখাতে চেয়েছে এক লিটার প্লাস্টিকের বোতল থেকে জল পান করার সময় আমরা ঠিক কত পরিমাণে ন্যানোপ্লাস্টিক কণা গ্রহণ করে থাকি। প্রসিডিংস অফ দি ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস জার্নালে ৮-ই জানুয়ারী প্রকাশিত এক নতুন গবেষণায়, কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকরা ব্যাখ্যা করেছেন তারা কীভাবে এক নতুন উন্নত লেজার প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা খুঁজে বের করেছেন, যা বোতলের জলে মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণার সংখ্যা ১০ গুণ বেশি এবং কিছু ক্ষেত্রে এটি ১০০-রও বেশি। গবেষকরা দেখেছেন যে প্রতি লিটারে ১,১০,০০০ থেকে ৩,৭০,০০০ পর্যন্ত ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণা থাকতে পারে, যার ৯০% হল ন্যানোপ্লাস্টিক। কলম্বিয়ার বায়োফিজিসিস্ট ওয়েই মিন, যিনি এই নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, তার মতে প্রতি লিটার বোতলের জলে গড়ে ২,৪০,০০০ প্লাস্টিকের টুকরো শনাক্ত করা গেছে।
চিহ্নিত কণাগুলোর প্রায় ৯০% ন্যানোপ্লাস্টিক হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে, যার পরিমাপ ১ মাইক্রোমিটারের কম। মাইক্রোপ্লাস্টিকের তুলনায় ন্যানোপ্লাস্টিকের কণা আমাদের পাচনতন্ত্র এবং শ্বাসযন্ত্রের মধ্যে দিয়ে আমাদের রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করার ক্ষমতা রাখে। পরবর্তীকালে, এই ক্ষুদ্র কণাগুলো হৃদপিণ্ডের পেশির মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে জমা হতে পারে, এবং ব্লাড-ব্রেন বেরিয়ার বা রক্ত-মস্তিষ্কের বাধা অতিক্রম করে মস্তিষ্কে পৌঁছতে পারে এমনকি প্ল্যাসেন্টা অতিক্রম করে অনাগত শিশুদের দেহে অনুপ্রবেশ করতে পারে। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির নাইক্সিন কিয়ান বলেন এই গবেষণাটি ন্যানোপ্লাস্টিক বিশ্লেষণের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ভাবা যেতে পারে, যা ন্যানো স্তরে প্লাস্টিক দূষণের বর্তমান জ্ঞানের ব্যবধান পূরণ করার প্রতিশ্রুতি রাখে। বিশ্লেষণে চিহ্নিত বিভিন্ন ন্যানোপ্লাস্টিক প্রকারের মধ্যে পলিইথিলিন টেরেফথালেট (PET) সবচেয়ে প্রচলিত হিসেবে দেখা গেছে।
PET হল বোতলজাত পানীয় শিল্পে ব্যবহৃত প্রধান প্লাস্টিক। গবেষকদের মতে এই ক্ষুদ্র কণা সম্ভবত বোতল কম্প্রেশনের সময় বা বোতলের ঢাকা খোলা বা লাগানোর সময় জলে প্রবেশ করে। পরীক্ষিত বোতলের জলের নমুনায় আরেকটি সাধারণভাবে পাওয়া প্লাস্টিকের ধরন হল নাইলন। কলম্বিয়ার ল্যামন্ট-ডোহার্টি আর্থ অবজারভেটরি-র (এলডিইও) ভূ- রসায়নের গবেষক বেইজহান ইয়ান বলেছেন যে এই কণাগুলো জলকে বিশুদ্ধ করার সময় ফিল্টার থেকে উদ্ভূত হতে পারে।
এখনও পর্যন্ত, গবষণায় জানা যায়নি যে ন্যানোপ্লাস্টিক রক্তের প্রবাহে প্রবেশ করার পর কী ঘটে তবে প্লাস্টিক তৈরি করতে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ শরীরে প্রবেশ করলে কী হয় তার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
প্লাস্টিক উত্পাদনে ব্যবহৃত বিপজ্জনক রাসায়নিক, যেমন বিসফেনল, থ্যালেটস, ডাইঅক্সিন, জৈব দূষক এবং ভারী ধাতু যা উচ্চ মাত্রায় ক্ষতিকারক তা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় এবং কিডনি, লিভার, হার্ট, স্নায়ুতন্ত্র এবং প্রজননের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে। এগুলো খাদ্য শৃঙ্খলের মাধ্যমেও জমা হতে পারে। গবেষকদের ধারণা আকার নয় বরং এর সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ছোটো জিনিস আমাদের শরীরের ভিতরে আরও সহজে প্রবেশ করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen + twenty =