এলাকার জীববৈচিত্র্য জানার এক অনন্য উপায়

এলাকার জীববৈচিত্র্য জানার এক অনন্য উপায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বর্তমানে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পৃষ্ঠ থেকে সোয়াব নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার মাধ্যমে জৈব এবং অজৈব উপাদান সনাক্ত করতে সক্ষম। উগান্ডার কিবলে ন্যাশনাল পার্কের প্রায় দু ডজন গাছের পাতার সোয়াব নমুনা থেকে অত্যাশ্চর্যভাবে ওই পার্কের মেরুদণ্ডী প্রাণীর জীববৈচিত্র্যের একটি সঠিক জেনেটিক ছবি গবেষকদের কাছে উঠে এসেছে যার রিপোর্ট গবেষকরা কারেন্ট বায়োলজি নামে এক পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন। সোয়াবের নমুনার মাধ্যমে ৫২টি প্রাণীর এনভায়রনমেন্টাল ডিএনএ বা ই-ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩০টি প্রজাতি স্তরে সনাক্ত করা গেছে। এই সহজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খুব তাড়াতাড়ি কোনো নির্দিষ্ট এলাকার জীববৈচিত্র্যের একটি ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।, নিউ ব্রান্সউইকের রুটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জীববিজ্ঞানী, জুলি লকউডের বক্তব্যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। প্রায়শই ডিএনএ বললে কোশের অভ্যন্তরে নিরাপদে স্থিত একটি ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কিন্তু বাস্তবে এই জেনেটিক উপাদানটি আমাদের পরিবেশে ছড়িয়ে রয়েছে। গাছের গায়ে বা পুকুরের জলে বা যে কোনো জলাশয়ে এই ই-ডিএনএ জমা হয় ইংরেজিতে যাকে “পুল” বলে। ই-ডিএনএ সন্ধান করে তা বিশ্লেষণ করলে একটি এলাকায় কী প্রজাতি রয়েছে তা জানা যাবে, এমনকি যে প্রজাতি এখনো চিহ্নিত হয়নি সেগুলো সম্বন্ধেও একটা ধারণা জন্মাবে।
জার্মানির গ্রিফসওয়াল্ড ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী জ্যান গোগার্টেন কিছু মাছি থেকে ই-ডিএনএ সংগ্রহ করেন। এই মাছি মৃত প্রাণী বা মলের ওপর বসার কারণে তাদের পায়ে বা পাখায় ডিএনএ আটকে যায়। অন্যদিকে জীববিজ্ঞানী ক্রিস্টিনা লিংগার্ড বাতাস থেকে ই-ডিএনএ সংগ্রহ করেন। দুই বিজ্ঞানী কিবলে ন্যাশনাল পার্কে গিয়ে তাদের নিজ নিজ কৌশল তুলনা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু প্রয়োজনীয় এয়ার ফিল্টার স্থাপন করা সময়সাপেক্ষ ছিল। সেই সময় গোগার্টেন কাছাকাছি কিছু পাতা থেকে সোয়াব নমুনা সংগ্রহ করেন। গবেষকরা তারপরে বিশ্লেষণের জন্য সোয়াবগুলো ডেনমার্কে আনেন। ই-ডিএনএ-এর নমুনা থেকে তারা জানতে পারেন যে বিভিন্ন ধরনের পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী পার্কে বাস করে, যার মধ্যে রয়েছে গ্রেট ব্লু তুরাকো, আফ্রিকান বুশ হাতি প্রভৃতি। এছাড়াও তারা এমন কিছু প্রাণীর সন্ধান পান যাদের সচরাচর দেখা যায় না। অন্যান্য স্যাম্পলিং ডিভাইসের তুলনায় সোয়াব নমুনা সহজেই বয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। আর এই ই-ডিএনে সংগ্রহ করাও বেশ সহজ যেমন লকউড, একটি সাধারণ পেইন্ট রোলার ব্যবহার করে উদ্ভিদের পৃষ্ঠ থেকে ই-ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন। শুধুমাত্র সাধারণ কিছু ফরেনসিক কৌশল ব্যবহার করে সোয়াব সংরক্ষণ করা যায় এবং পরীক্ষাগারে নিয়ে যাওয়া যায়। তাই পদ্ধতিটি বেশ সহজ এবং যে কোনো ব্যক্তি এটি ব্যবহার করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − 13 =