এশিয়া থেকে ইউরোপ

এশিয়া থেকে ইউরোপ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

বোলতার মতোই দেখতে এক ধরনের পতঙ্গ হল ভীমরুল। এরা বোলতার থেকে আকারে বড়ো, কালো রঙের। অনেকসময় এদের পিঠের দিকে হলুদ দাগ দেখা যায়। ইংরেজিতে এদের বলে জায়েন্ট হর্নেট। সাধারণত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ভীমরুল দেখতে পাওয়া যায়, বিশেষ করে চিন এবং তাইওয়ানে। তবে জানা গেছে সম্প্রতি ইউরোপে প্রথম এই জায়েন্ট হর্নেট দেখা গেছে। এরা সাধারণত গাছের গুঁড়ি বা মাটির নীচে বাসা বাঁধে । বাইরে থেকে দেখলে এদের বাসা ভালোভাবে বোঝাই যায় না। আবহাওয়ার পরিবর্তনে এদের প্রকোপ বাড়ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। উজ্জ্বল রং, মানুষের ঘাম, মিষ্টি গন্ধ বা জিনিসে আকৃষ্ট হয় এরা। গতি সম্পর্কেও এরা ভীষণ সচেতন। মানুষ বা পশু যে দিকেই ছুটুক, ওরা দারুণ ভালো বুঝতে পারে। কামড়ের ভয়ে মানুষ যত দৌড়োয়, এরা ততই তেড়ে যায় তাদের দিকে। একা নয়, একসঙ্গে ঝাঁক বেঁধে।
বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় এরা ভেসপা সোরর নামে পরিচিত। এরা গেকোর মতো বড়ো সরীসৃপ প্রাণীকে আক্রমণ করে খেয়ে ফেলে এবং সম্প্রতি এশিয়ার বাইরে দ্বিতীয়বারের জন্য এদের দেখা গেছে। ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশনে বলা হয়েছে এই দৈত্যাকার হর্নেট যদি মহাদেশে তাদের সংখ্যা বিস্তার করে তবে তা শুধু মানুষ নয় মৌমাছি এবং অন্যান্য প্রাণীদের ক্ষেত্রেও হুমকির কারণ হতে পারে। নিউজিল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েলিংটনের পতঙ্গবিজ্ঞানী ফিল লেস্টারের মতে ঘটনাটি বেশ উদ্বেগজনক। এই প্রজাতির ভীমরুল মৌমাছি ভক্ষণ করে। এরা অন্যান্য পোকামাকড়, বোলতা, এমনকি কিছু সরীসৃপ প্রাণীদেরও খেয়ে ফেলে। তাই এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তা বাস্তুতন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ইউনিভার্সিটি অফ ওভিডোর প্রাণিবিদ ওমর সানচেজ এবং তার সহকর্মীরা সেখানে পাওয়া মৃত হর্নেট পরীক্ষা করেন, তাদের ডিএনএ এবং শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলো পরিচিত প্রজাতির সাথে তুলনা করেন। ভেসপা সোরর একটি হিংস্র শিকারী হিসেবে পরিচিত এবং হর্নেটদের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো আকারের। এরা লম্বায় একটা ব্যাটারির মতো, প্রায় ৩ সেমি। এর আগে ২০১৯ সালে তাদের এশিয়ার বাইরে কানাডায় শনাক্ত করা হয়েছিল। সম্ভবত এরা জাহাজে করে এই মহাদেশে এসে ওঠে। তবে ভেসপা সোরর স্পেনে তার আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে ২০২৩ সালে জায়েন্ট হর্নেট আবার দেখতে পাওয়া গেছে। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে হয়তো একটা রানি ভীমরুল তার কলোনি তৈরি করা শুরু করেছে। তাই গবেষকরা সতর্ক করেছেন পতঙ্গের সংখ্যা কম থাকতে থাকতে এই প্রাণীদের নির্মূল করার কথা ভাবতে হবে।