এ ডি এইচ ডি চিকিৎসার বিশ্ব পর্যালোচনা 

এ ডি এইচ ডি চিকিৎসার বিশ্ব পর্যালোচনা 

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫

অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার (এ ডি এইচ ডি)/ অমনোযোগ ও অতি চঞ্চলতার চিকিৎসা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রচুর বিতর্ক, বিকল্প পদ্ধতির ভিড়, এবং নানা দাবি–দাওয়া চলছে। এসবের মধ্যে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পেশাদার চিকিৎসকরাও প্রায়ই দ্বিধায় পড়েন—আসলে কোন পদ্ধতি কার্যকর? এই জট খুলতেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ এক সমন্বিত পর্যালোচনা চালালেন ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা। ২০০-রও বেশি মেটা-অ্যানালিসিস বিচার করে গবেষণাটিতে দেখা গেছে —শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক দুই ক্ষেত্রেই ওষুধই এখনও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও স্বল্পমেয়াদি কার্যকর পদ্ধতি। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (সি বি টি)/ বোধবুদ্ধি ও আচরণগত পরিবর্তনে সহায়ক চিকিৎসা পদ্ধতি । এটিই পরীক্ষায় তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী, প্রমাণসমর্থিত চিকিৎসা।

গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটি প্যারিস নানটেরে (ফ্রান্স), ইনস্টিটিউট রবার্ট-ডেব্রে ডু সার্ভিউ ডি এল’এনফ্যান্ট (ফ্রান্স) এবং যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ সাদাম্পটন-এর বিজ্ঞানীরা। এর ফলাফল ২০২৫ সালের ২৭শে নভেম্বর প্রকাশিত হয়েছে দ্য বি এম জে পত্রিকায়। এই গবেষণাটি সরকারি গবেষণা তহবিল থেকে সমর্থন পেয়েছে। শুধু পর্যালোচনাই নয়, দলটি চালু করেছে একটি ব্যবহারবান্ধব অনলাইন টুল—’Evidence-Based Interventions for ADHD’— যা সাধারণ পাঠক, অভিভাবক এবং চিকিৎসকদের জন্য চিকিৎসার প্রমাণভিত্তিক মান বোঝার এক স্বচ্ছ ও সহজ উপায় তৈরি করেছে।

গবেষণার প্রধান লেখক অধ্যাপক সামুয়েল কর্তেসে স্পষ্টভাবে বলেছেন, এ ডি এইচ ডি -তে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবাররা তথ্যের বিভ্রান্তিতে পর্যুদস্ত। কে কী বলছে, কোন চিকিৎসা আসলে ফল দেবে আর কোনটা শুধু প্রচার—তা বোঝা কঠিন। এই পর্যালোচনা তাই প্রমাণের ভিত্তিতে চিকিৎসা-নির্দেশনা দিতে চায়।

পর্যালোচনাটি দেখিয়েছে—শিশু ও কিশোরদের জন্য পাঁচটি ওষুধ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দুটি ওষুধের কার্যকারিতা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে সি বি টি–রও কার্যকর ভূমিকা প্রমাণিত। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সব প্রমাণই মূলত স্বল্পমেয়াদি, অথচ বাস্তবে বেশিরভাগ রোগী দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসা নেন। সে কারণে দীর্ঘমেয়াদি ফলাফলের ঘাটতি নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে একটি বড় প্রশ্ন থেকেই যায়। তাই দীর্ঘমেয়াদি ফলাফলের ক্ষেত্রে আরও গবেষণা জরুরি।

অ্যাকুপাংচার, মাইন্ডফুলনেস, ব্যায়াম—এসব বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। গবেষণা বলছে, এগুলোর কিছু সুফল দেখা গেলেও প্রমাণ খুবই দুর্বল—কম অংশগ্রহণকারী, উচ্চ পক্ষপাতঝুঁকি এবং প্রয়োজনের তুলনায় কম গবেষণা নকশা এই সীমাবদ্ধতার কারণ। শিশুদের সি বি টি এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মাইন্ডফুলনেসের দীর্ঘমেয়াদি গবেষণারও ওই একই সমস্যা। তবুও লক্ষণীয় যে দীর্ঘমেয়াদে মাইন্ডফুলনেসই একমাত্র বড় ইতিবাচক প্রভাব দেখাতে পেরেছে।

 

গবেষক ড. করঁতো গসলিঁর মতে, ভুল তথ্য ও ভুল চিকিৎসা মানুষকে অযথা সময় ও টাকা খরচ করায়। তাদের তৈরি ওয়েব অ্যাপ চিকিৎসা–নির্বাচনে রোগী ও চিকিৎসককে একইসঙ্গে ক্ষমতায়িত করতে পারে। ফলে চিকিৎসায় আস্থা, মানসিক প্রস্তুতি এবং ফলাফল—সবই উন্নত হবে।

গবেষকরা আশা করেন, এই প্রকল্পটি এ ডি এইচ ডি চিকিৎসা নিয়ে আন্তর্জাতিক নির্দেশিকা ও বাস্তব ক্লিনিক্যাল চর্চার মানদণ্ডকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে, যেমনটি তাদের পূর্ববর্তী অটিজম-সংক্রান্ত গবেষণায় দেখা গিয়েছিল।

 

সূত্র : “Benefits and harms of ADHD interventions: umbrella review and platform for shared decision making” by Corentin J Gosling, Miguel Garcia-Argibay, et.al; 27th November 2025, BMJ.

DOI: 10.1136/bmj-2025-085875

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight − 4 =