
সময়ের দুই ব্যখ্যা (এরিস্টটোলের মত অনুযায়ী, কোন ঘটনা ‘কখন’ ঘটেছে তার পরিমাপ এবং নিউটনের মত অনুযায়ী, যখন কিছুই ঘটেনা তখনো যে ব্যাপার চলে) স্থানের (space) ক্ষেত্রেও পুনরাবৃত্তি হয়। সময়ের ক্ষেত্রে আমরা জিজ্ঞেস করি ‘কখন?’ আর স্থানের ক্ষেত্রে আমরা প্রশ্ন করি, ‘কোথায়?’ যদি প্রশ্ন করা হয়, ‘কলোসিয়াম কোথায়?’ একটা সম্ভাব্য উত্তর হতে পারে, ‘এটা রোমে।‘ অথবা, ‘তুমি কোথায় আছ?’ এর উত্তর হয়ত হবে, ‘বাড়িতে।‘ ‘কোথায় কোন বস্তু আছে?’ – এই প্রশ্নের মানে কোন কিছুর ধারেপাশে সেই উদ্দিষ্ট বস্তু আছে।
এরিস্টটোলই প্রথম খুব গভীরভাবে আলোচনা করেছিলেন এবং স্থানের মানে খুব তীক্ষ্মতার সাথেই বলেছিলেনঃ এক বস্তুর স্থান বলতে সেই বস্তুর চারপাশে যা ঘিরে আছে সেটাকে বোঝায়।
সময়ের ক্ষেত্রে যেভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, নিউটন সেভাবেই একটা প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, আমরা অন্যরকম ভাবে ভাবতে পারি। এরিস্টটোল যেভাবে স্থানকে বর্ণনা করেছেন, নিউটন সেই স্থানকে বললেন, ‘আপেক্ষিক, আপাত এবং সাধারন’। তিনি বললেন, ‘যদি কোথাও কিছু নাও থাকে তাহলে স্থানের অস্তিত্ব আছে যেটা চরম, সত্য এবং গাণিতিক।‘
এরিস্টটোল এবং নিউটনের মাঝে তফাৎ ভীষনভাবে উজ্জ্বল। নিউটনের মত অনুযায়ী, দুটো বস্তুর মাঝে একটা ‘ফাঁকা স্থান (empty space)’ থাকতে পারে। আর এরিস্টটোলের মত অনুযায়ী ‘ফাঁকা স্থানের’ ধারনাটাই অযৌক্তিক কারন স্থান বলতে কেবলমাত্র বস্তুর অবস্থান বোঝায়। যদি কোথাও কোন বস্তু না থাকে তাহলে সেখানে কোন স্থান থাকবে না। যদি দুটো বস্তু পরস্পরকে স্পর্শ না করে, তার মানে মাঝে কোন কিছু আছে, এবং কোন কিছু মানে বস্তুই আছে। ‘কিছু নেই’ হতেই পারেনা।
আমার দিক থেকে বলতে পারি, আমাদের দৈনিক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে উৎপন্ন স্থান সংক্রান্ত দুটো চিন্তাভাবনাই বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। আমরা যে পৃথিবীতে বাস করি সেখানকার এক অদ্ভূত দুর্ঘটনা এই দুই ধারনার মধ্যে তফাৎ এনে দেয়ঃ বায়ু এতটাই হালকা যে সেটা আমরা প্রায় অনুভবই করি না। আমরা বলতেই পারি, এই যে টেবিল, চেয়ার, পেন, ছাদ দেখছি, এবং আমার এবং টেবিলের মাঝে কোন কিছুই নেই। অথবা আমরা বলতে পারি আমাদের দুজনের মাঝে বায়ু আছে। কখনো আমরা বায়ুর কথা বলি, যেন সেখানে কিছু আছে, কখনো যেন সেখানে কিছুই নেই। গ্লাস টা খালি – এটা বলি যখন গ্লাসটা বায়ুপূর্ণ থাকে। যার পরিণামে আমাদের চারপাশের পৃথিবী কখনো প্রায় শুন্য থাকে যেখানে ইতস্তত কিছু বস্তু থাকে, অথবা বিকল্পভাবে ‘সম্পূর্ণভাবে বায়ুপূর্ণ’ থাকে। এরিস্টটোল এবং নিউটন – দুজনের কেউই এর অন্তর্নিহিত দর্শন বোঝার চেষ্টা করেন নি। তাঁদের দুই অন্তর্দৃষ্টি এবং উদ্ভাবনী পদ্ধতি ব্যবহার করে আমাদের চারপাশের পৃথিবীকে দেখেছেন – তাতে কখনো বায়ুকে যোগ করেছেন, কখনো করেন নি। একটা পতনশীল পাথরের ক্ষেত্রে বায়ুর প্রভাব খুব নগণ্য বলে আমরা ধরে নিতেই পারি বায়ু সেখানে নেই।
সময়ের ক্ষেত্রে, নিউটনের ‘ধারক স্থান (Container space)’ আমাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হয়। কিন্তু এটা খুবই সাম্প্রতিক একটা ধারনা যেটা তাঁর চিন্তাধারার বিশাল ব্যপ্তির কারণে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন আমাদের যা অন্তর্দৃষ্টিজাত মনে হয় সেটা অতীতের বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিক চিন্তাধারার ফসল।
নিউটনের ‘শুন্যস্থান’ প্রতিষ্ঠা পায় যখন টরেসিলি (Torricelli) বোতল থেকে বায়ু নিষ্কাশন করার পরীক্ষাটি করেন। খুব তাড়াতাড়ি এটা বোঝা গেল, বোতলের মধ্যে অনেক প্রাকৃতিক রাশি বর্তমান; যেমন, তড়িৎ এবং চুম্বক ক্ষেত্র, এবং অবিরত কোয়ান্টাম কণার ঝাঁক। কোন প্রাকৃতিক রাশিবিহীন পুরোপুরি শুন্যস্থান, ‘চরম, সত্য এবং গাণিতিক’ – এই অনিয়তাকার স্থান, নিউটনের পদার্থবিদ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এক উজ্জ্বল চিন্তাধারা। নিউটনের এই স্থানের কি সত্যি কোন অস্তিত্ব আছে? যদি অস্তিত্ব থাকে তাহলে কি অনিয়তাকার? যেখানে কোন কিছুরই অস্তিত্ব নেই — এমন কোন স্থান কি আছে?
সময়ের ক্ষেত্রেও ঠিক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।
এই সব প্রশ্নের উত্তর অকল্পনীয়ভাবে এই দুই তত্ত্বের সংশ্লেষনের সাহায্যে করা হয়েছে। এবং এটা সম্পন্ন করতে আরেকজন বিখ্যাত ব্যক্তিকে প্রবেশ করতে হোল।