ওজন কমানোর ওষুধ ও নারী স্বাস্থ্য

ওজন কমানোর ওষুধ ও নারী স্বাস্থ্য

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ইদানীং ওজন কমানোর ওষুধ ওজেমপিক খুব জনপ্রিয় হয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সতর্ক করেছেন, বিশেষত প্রজননক্ষম বয়সের নারীদের জন্য এই ওষুধগুলোর ব্যবহার যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ।
গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে মেডিক্যাল জার্নাল অব অস্ট্রেলিয়া-তে। এতে ২০১১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৬ লাখ নারীর চিকিৎসার নথিপত্র বিশ্লেষণ করা হয়। দেখা যায়, এই সময়ে ১৮ হাজারেরও বেশি নারী প্রথমবার জি এল পি-1 রিসেপ্টর এগোনিস্ট ব্যবহার শুরু করেছেন, কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ২১% নারী কার্যকর গর্ভনিরোধক ব্যবহার করছিলেন।
মূলত টাইপ-২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য তৈরি হলেও এই ওষুধগুলো এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে খিদে ও ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে। বিস্ময়কর বিষয় হলো, বর্তমানে এই ওষুধ অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রেসক্রাইব করা হচ্ছে এমন নারীদের যাদের ডায়াবেটিস নেই।
গবেষণার প্রধান লেখক ও ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট সহযোগী অধ্যাপক লুক গ্রজেস্কোভিয়াক জানান, শুধু ২০২২ সালেই ৬,০০০ এর বেশি নারী জি এল পি-1 চিকিৎসা শুরু করেছেন, এবং এর মধ্যে ৯০% এরও বেশি নারীর ডায়াবেটিস ছিল না। অথচ, প্রেসক্রাইব করার সময় গর্ভনিরোধক ব্যবহারের পরামর্শ খুব কম ক্ষেত্রেই দেওয়া হচ্ছে।

তাঁর মতে ,এই ওষুধগুলো কার্যকর হলেও গর্ভাবস্থায় একেবারেই নিরাপদ নয়। দেখা গেল, চিকিৎসা শুরু করার ছয় মাসের মধ্যেই প্রায় ২.২% নারী গর্ভবতী হয়েছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গর্ভধারণ ঘটেছে তরুণী ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে, এবং তিরিশোর্ধ্ব সুস্থ নারীদের ক্ষেত্রেও গর্ভধারণের হার বেশি ছিল।
বিশেষভাবে লক্ষণীয় বিষয় হলো,পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমে (পি সি ও এস) আক্রান্ত নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণের সম্ভাবনা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। কারণ ওজন কমে গেলে প্রজনন ক্ষমতা হঠাৎ উন্নত হতে পারে, যদিও তা অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণে পরিণত হয়।
পূর্ববর্তী প্রাণী-ভিত্তিক গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় জি এল পি-1 ওষুধ ভ্রূণের বৃদ্ধি ব্যাহত করতে পারে এবং হাড়ের গঠনে অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি করতে পারে। যদিও মানুষের ক্ষেত্রে প্রমাণ সীমিত, তবুও ঝুঁকিকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।
যুক্তরাজ্যে ইতিমধ্যে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে যে, এই ধরনের ওষুধ ব্যবহারের সময় নারীদের কার্যকর গর্ভনিরোধক ব্যবহার করা আবশ্যক। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় সেই নিয়ম যথাযথভাবে মানা হচ্ছে না।
গবেষকরা বারবার জোর দিয়ে বলছেন যে নারীদের জন্য এসব ওষুধ প্রেসক্রাইব করার সময় প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা এবং তার পাশাপাশি আরও স্পষ্ট নির্দেশিকা ও নিরাপদ ব্যবহারের নীতি তৈরি করা জরুরি। আর রোগীদেরও সবসময় চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ঝুঁকি-সুবিধা যাচাই করা উচিত।

সবশেষে গবেষকরা একটাই কথা বলছেন- এই ওষুধগুলোর গর্ভাবস্থা ও অনাগত সন্তানের ওপর প্রভাব নিয়ে আরও গবেষণা অপরিহার্য।
এইভাবে ওজন কমানোর ওষুধ তরুণীদের জন্য একদিকে কার্যকর সমাধান হলেও, অন্যদিকে অদৃশ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি তৈরি করছে। তাই সচেতন ব্যবহার ও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এগুলো গ্রহণ করা অত্যন্ত বিপজ্জনক।

সূত্র: “Incidence of GLP-1 receptor agonist use by women of reproductive age attending general practices in Australia, 2011–2022: a retrospective open cohort study” by Kailash Thapaliya, Arianne Sweeting, et.al; (1 September 2025), Medical Journal of Australia.
DOI: 10.5694/mja2.70026

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − 12 =