ওজোনস্তরের ফুটো সারছে- বায়ুমণ্ডলে কমছে ক্ষতিকারক গ্যাসের মাত্রা

ওজোনস্তরের ফুটো সারছে- বায়ুমণ্ডলে কমছে ক্ষতিকারক গ্যাসের মাত্রা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ জুন, ২০২৪

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোন গ্যাসের (O3) একটা স্তর রয়েছে। ওজোনোস্ফিয়ার বর্মের মতো কাজ করে। সূর্য থেকে আসা ক্ষতিকারক অতিবেগুনী রশ্মির ৯৭ থেকে ৯৯% শোষণ করে এই ওজোনোস্ফিয়ার। ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে। আশির দশকের মাঝামাঝি বিজ্ঞানীদের চোখে ধরা পড়ে, দক্ষিণ মেরুর উপরে ওজোন স্তরে ফুটো হয়েছে। গবেষণায় জানা যায়, ওজোন স্তরের এই ফুটোর জন্য দায়ী ক্লোরোফ্লুরোকার্বন বা সিএফসি নামের এক যৌগ। ওজোন-ক্ষয়কারী এই যৌগগুলো প্রাথমিকভাবে রেফ্রিজারেশন, এয়ার কন্ডিশনার এবং অ্যারোসল স্প্রেতে পাওয়া যায়। ক্লোরিনযুক্ত ওই রাসায়নিক যৌগগুলো বাস্পীভূত হওয়ার পর জমা হয় স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে। সূর্য থেকে আসা অতিবেগুনি রশ্মি ওই ক্লোরিনযুক্ত যৌগগুলোকে ভেঙে দেয়। আর তার ফলে বেরিয়ে আসে ক্লোরিন গ্যাসের অণু। সেই ক্লোরিন অণুই স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে থাকা ওজোন স্তরটিকে ফুটো করে চলেছে। তার পরিমাণ যত বেড়েছে, ওজোন স্তরের ফুটোও ততটাই বেড়েছে । পৃথিবীকে রক্ষা করতে গোটা বিশ্ব মিলে ১৯৮৭ সালে মন্ট্রিয়ল চুক্তি সই করে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সিএফসি-র ব্যবহার বাতিল করার।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে ওজোন স্তর রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা এক বড়ো সাফল্যের মুখ দেখেছে। বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকারক গ্যাসগুলো প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। এই সমীক্ষায় দেখা গেছে বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তরের ফুটোর জন্য দায়ী ক্ষতিকারক গ্যাস, হাইড্রোক্লোরোফ্লুরোকার্বন (HCFCs) এর মাত্রা হ্রাস পেয়েছে, ২০২১ সালে তা শীর্ষে পৌঁছেছিল। ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিস্টলের গবেষক লুক ওয়েস্টার্ন-এর মতে এটি একটি বিশাল সাফল্য যে সবকিছু ঠিক দিকে যাচ্ছে। ওজোন স্তর রক্ষা করার প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার জেরে ২০১০ সালের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকারক সিএফসিগুলো তৈরি ও তার ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হয়েছিল। আশা কেরা হচ্ছে হাইড্রোক্লোরোফ্লুরোকার্বনের মতো যৌগ যা ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের বদলে ব্যবহার করা হচ্ছিল তা ২০৪০ সালের মধ্যে নির্মূল হবে। নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় জানানো হয়েছে তারা অ্যাডভান্সড গ্লোবাল অ্যাটমোস্ফেরিক গ্যাস এক্সপেরিমেন্ট এবং ইউএস ন্যাশনাল অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যান্ড ওশেনিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য ব্যবহার করে বায়ুমণ্ডলে এই ক্ষতিকারক গ্যাসের মাত্রা পরীক্ষা করেছে। সিএফসি এবং এইচসিএফসি দুটোই শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস, সুতরাং তাদের মাত্রা হ্রাস পেলে বিশ্ব উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সুবিধা হবে। সিএফসি বায়ুমণ্ডলে শত শত বছর ধরে থাকতে পারে কিন্তু এইচসিএফসির জীবনকাল প্রায় দু দশক। ফলত তারা উৎপাদিত না হলেও বায়ুমণ্ডলে তাদের অস্তিত্ব আগামী বছরগুলোতেও ওজোন স্তরকে প্রভাবিত করবে। গবেষকদের অনুমান ওজোন স্তরের পুনরুদ্ধার করতে সময় লাগতে পারে প্রায় চার দশক ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven − one =