
বিভিন্ন ধরনের ওয়াইন ভিন্ন স্বাদ এবং ভিন্ন স্পর্শের অনুভূতি দেয়। কোনোটাতে মনে হতে পারে মুখের ভেতর কেউ যেন শিরিস কাগজ দিয়ে ঘষে দিচ্ছে। আবার আরেকটা পুরোনো ওয়াইন সেই জায়গাতেই স্পর্শের দিক দিয়ে নরম এবং মসৃণভাবে গড়িয়ে যায়। এই বৈপরীত্যের রহস্য কেবল ট্যানিনের পরিমাণে নিহিত নেই। এর মূল কারণ, ট্যানিন অণুগুলির গঠনের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে।
পেন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মিশা কওয়াসনিয়েভস্কির নেতৃত্বে একদল গবেষক তৈরি করেছেন এক নতুন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি ট্যানিন-অণু ভেঙে যায় উচ্চ-রেজোলিউশনের এক ম্যাস স্পেকট্রোমিটারে। এটি একটি অত্যাধুনিক যন্ত্র, যা খুবই সূক্ষ্মভাবে কোনো জটিল রাসায়নিক পদার্থকে ভেঙে তার অণু বা উপাদানগুলোর ভর ও গঠন বিশ্লেষণ করতে পারে। আর প্রতিটি ভাঙা অংশের অনন্য ছাপ নেওয়া হয়। যেন একরকমের অদৃশ্য রসায়নকে এক পাঠযোগ্য স্বরলিপিতে পরিণত করে ফেলা হচ্ছে। এই দিয়ে ওয়াইন প্রস্তুতকারীরা বুঝতে পারেন স্বাদের ভেতরের গাণিতিক কাঠামো। প্রোসায়ানিডিন নামের অণুটি তৈরি হয় ‘ফ্লাভানল ক্যাটেচিন’ নামের একটি যৌগের অনেকগুলি অংশ একসাথে জুড়ে। ২ থেকে শুরু করে ১২টারও বেশি অংশ একটা শৃঙ্খলের মতো গঠন তৈরি করে। এই শৃঙ্খলের বাঁক, শাখা ও বন্ধনের ধরনই নির্ধারণ করে অণুটি কীভাবে আমাদের লালার প্রোটিনের সাথে বন্ধনে আবদ্ধ হবে।
বড়ো ও জটিল শৃঙ্খলগুলি লালার স্নিগ্ধতা কমিয়ে দেয়, ফলে মুখে তৈরি হয় খসখসে অনুভূতি। একে বলে কষা ভাব বা ‘অ্যাস্ট্রিনজেন্সি’। আবার ছোট শৃঙ্খলগুলি মসৃণ ও ভেলভেটের মতো লাগে। এই দুই ওয়াইনের ট্যানিনের পরিমাণ এক হলেও, স্পর্শের দিক থেকে মুখে এদের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। শীতল আবহাওয়ায় ফলিত আঙুরের চামড়া পাতলা হয়, ফলে সেখানে ট্যানিন কম থাকে। তাই পেনসিলভেনিয়া বা স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ওয়াইনগুলি তুলনামূলকভাবে হালকা মনে হয়। আবার ক্যালিফোর্নিয়া বা অস্ট্রেলিয়ার ওয়াইন তুলনায় ভারী। গবেষকরা তিন স্তরের ভোল্টেজ ব্যবহার করে ট্যানিন অণু ভাঙেন : হালকা, মাঝারি ও উচ্চ। এতে ডাইমার(২ ইউনিট বা অংশ), ট্রাইমার(৩ ইউনিট বা অংশ) এবং বড়ো পলিমারগুলো(অণুর মধ্যেকার অনেকগুলি অংশ) সব আলাদা করে ধরা যায়। এই পদ্ধতি পরীক্ষিত হয়েছে ১৯টি মিশ্রণে এবং ৮টি বাণিজ্যিক সাইডার বা ফলের গাঁজনে। ফল একেবারে নিখুঁত। এখন ছোট ছোট ওয়াইন প্রস্তুতকারী সংস্থা প্রতিদিন সকালে এক মিনিটের পরীক্ষাযতেই জানতে পারবে তাদের ফার্মেন্টেশন বা গাঁজানোর প্রক্রিয়া কোন দিকে যাচ্ছে। তারা বুঝে নিতে পারবে কখন ওয়াইন রাখার পাত্র বদলানো উচিত, কখন আরও কাঠের সুবাস যোগ করতে হবে। বিজ্ঞান ও স্বাদের এই যুগলবন্দি এক নতুন ধারা আনছে পানীয় জগতে।