ওষুধের অণুর খোঁজে কম্পিউটার

ওষুধের অণুর খোঁজে কম্পিউটার

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ মার্চ, ২০২৫

বিজ্ঞানীরা কম্পিউটার প্রোগ্রামের সাহায্যে একটি নতুন অণু খুঁজে পেয়েছেন যা প্রদাহ কমানোর ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই প্রোগ্রাম কোটি কোটি বিকল্প (১০ সেক্সটিলিয়ন, অর্থাৎ ১-এর পরে ২২টি শূন্য!) পরীক্ষা করে সেরা সম্ভাবনাটি বেছে নিতে পারে। এই পদ্ধতি দ্রুত এবং আরও উন্নত ওষুধ তৈরিতে সহায়ক হতে পারে।
ওষুধ তৈরি করার পথে সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হলো পরীক্ষা করার জন্য অসংখ্য সম্ভাব্য অণু থেকে ঠিক অণুটিকে খুঁজে নেওয়া । নেচার কমিউনিকেশন এ প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় দেখা যায় কম্পিউটার অ্যালগরিদম ব্যবহার করে সম্ভাব্য ওষুধের অণুগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব। এই অ্যালগরিদম, প্রক্রিয়াটিকে দ্রুততর করে নতুন ওষুধ আবিষ্কারকে সহজ করে তোলে।বিজ্ঞানীরা কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে বিশাল উপাত্ত /তথ্যভাণ্ডার থেকে অণু খুঁজে বের করেন । এটি ব্যয়বহুল ওষুধ উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে দ্রুত করতে সাহায্য করতে পারে।

কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট এবং স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ওজিজি১(OGG1) এনজাইম (উৎসেচক ) নিয়ে গবেষণা করেছেন। এই প্রোটিন ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ মেরামত করতে সাহায্য করে। তারা এমন একটি অণু খুঁজতে চাইছিলেন যা এই এনজাইমের সাথে যুক্ত হয়ে এর কার্যকারিতা পরিবর্তন করতে পারে।
বিজ্ঞানীরা প্রোটিন – নকশা ব্যবহার করে ১০০টির বেশি নতুন অণু তৈরি করেন। পরে, এগুলিকে পরীক্ষায় ব্যবহার করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায় এই অণুগুলো এনজাইমের কাজ কমিয়ে দেয়, প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
আগে ওষুধ তৈরির জন্য হাজারো রাসায়নিক পরীক্ষা করতে হতো। কিন্ত ওই পদ্ধতি খুব ব্যয়বহুল এবং এভাবে ভালো ওষুধের উপাদান খুঁজে পাওয়া কঠিন।
এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা “ফ্র্যাগমেন্ট-ভিত্তিক ওষুধ ডিজাইন” নামে একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন।প্রথমে তারা একটি ছোট অণু খুঁজে নেন, যা প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
তারপর, ধাপে ধাপে এটিকে আরও উন্নত করে ওষুধ তৈরি করা হয়।
এ অনেকটা ধাঁধা মেলানোর মতো। প্রথমে একটি ছোট অংশ খুঁজে নেওয়া হয়, তারপর ধাপে ধাপে নতুন অংশ যোগ করে ওষুধ তৈরি হয়। শেষে, ওষুধের অণুটি ঠিক প্রোটিনটির সঙ্গে মিলে যায়। গবেষণায় বিজ্ঞানীরা একটি কোম্পানির সাহায্য নিয়েছেন, যা প্রয়োজন মতো অণু তৈরি করে দেয়।
বিজ্ঞানীরা এমন কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করেছেন, যা বাজারে থাকা কোটি কোটি অণুর মধ্যে উপযুক্তটি খুঁজে বের করতে পারে।
সুপারকম্পিউটার ব্যবহার করে তারা দেখেন কোন অণুগুলো উদ্দিষ্ট প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
প্রথমে বিজ্ঞানীরা দ্রুত তৈরি ও পরীক্ষা করা যায় এমন অণু খোঁজেন ও সফলও হন।
পরিশেষে, গবেষক আন্দ্রেয়াস লুটেনস নতুন অণু তৈরি করার জন্য একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম বানালেন।
গবেষকরা দেখলেন, ১০ সেক্সটিলিয়ন অণু খোঁজার জন্যও একই পদ্ধতি কাজ করবে।
এভাবে দ্রুত ওষুধের অণু খুঁজে কম্পিউটারে পরীক্ষা করা সুবিধা হবে।

বিজ্ঞানী জেনস কার্লসন জানান,
কম্পিউটার মারফত নতুন অণু খুঁজে পাওয়া গেলেও, সব অণু তৈরি করা সম্ভব নাও হতে পারে। ভবিষ্যতে এমন পদ্ধতি দরকার, যা কম্পিউটারে তৈরি করা অণুগুলোকে বাস্তবে বানাতে সাহায্য করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × one =