ওষুধ বনাম ব্যায়াম

ওষুধ বনাম ব্যায়াম

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৮ নভেম্বর, ২০২৫

ডায়াবেটিস বা মধুমেহ প্রতিরোধে বহুল ব্যবহৃত ওষুধ ‘মেটফরমিন’ নিয়ে নতুন এক গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসকেরা মনে করে এসেছেন মেটফরমিনের সঙ্গে নিয়মিত ব্যায়াম এই রোগের ঝুঁকি দ্রুত কমায়। কিন্তু রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়–নেতৃত্বাধীন একটি গবেষণা জানাচ্ছে, বিষয়টি এত সরল নয়। উল্টে, ব্যায়ামের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকার কমিয়ে দিতে পারে মেটফরমিন। মাইটোকন্ড্রিয়ার কিছু প্রক্রিয়া কমিয়ে, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায় এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এই মেটফরমিন। আবার ব্যায়ামেও ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে। যেমন মাইটোকন্ড্রিয়ার দক্ষতা বাড়া বা অ্যারোবিক সক্ষমতা বৃদ্ধি সেগুলোকে বাধা দিতে পারে। ফলে ওষুধের কার্যকারিতাই ব্যায়ামের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে কিছুটা ঠেকিয়ে দেয়। অথচ ২০০৬ সাল থেকে চিকিৎসা-নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, রক্তশর্করা বাড়ার ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের মেটফরমিনের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। ধারণা ছিল, দুটি প্রমাণিত পদ্ধতি একে অপরকে শক্তিশালী করবে। অথচ নতুন গবেষণা বলছে, দুইয়ের সমন্বয় সবসময় সদর্থক হয় না। প্রধান গবেষক অধ্যাপক স্টিভেন মালিন বলেন, “প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে মেটফরমিন ব্যায়ামের লাভ কমিয়ে দেয়।”

মেটাবলিক সিন্ড্রোমের ঝুঁকিযুক্ত ৭২ জন প্রাপ্তবয়স্কদের (যা ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ায়) চারটি দলে ভাগ করা হয়: ১। বেশি ব্যায়াম ও মিছিমিছি ওষুধ, ২। বেশি ব্যায়াম ও মেটফরমি্‌ন, ৩। কম ব্যায়াম ও মিছিমিছি ওষুধ, ৪। কম ব্যায়াম এবং মেটফরমিন।

ফলাফল বলছে, ব্যায়াম রক্তনালির কার্যকারিতা বাড়ায় তা সে ব্যায়াম বেশি বা হালকা যা–ই হোক না কেন। কিন্তু মেটফরমিন যুক্ত করায় এই উন্নতি স্পষ্টত কমে যায়। একই সঙ্গে ফিটনেস বাড়ার হার, দেহের প্রদাহ কমার হার, ও উপবাসী অবস্থায় রক্তে শর্করা কমার প্রবণতাও দুর্বল হয়ে যায়। মালিনের ভাষায়, “যদি কেউ ব্যায়াম করে এবং মেটফরমিন খায়, তাতে রক্তে শর্করা কমে না। এটা সমস্যা। ফিটনেসও বাড়ছে না মানে শারীরিক সক্ষমতা উন্নত হচ্ছে না। দীর্ঘমেয়াদে এর ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।” শারীরিক সক্ষমতা বাড়লে একজন মানুষের দৈনন্দিন কাজ, যেমন- সিঁড়ি ভাঙা, শিশুদের সঙ্গে খেলা, সক্রিয় জীবনযাপন সহজ হয়। ব্যায়ামের এই সাধারণ উপকারগুলিই যদি কমে যায়, তাহলে জীবনমান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে হঠাৎ মেটফরমিন বা ব্যায়াম বন্ধ করা ঠিক হবে না। বরং চিকিৎসকদের উচিত রোগীর অগ্রগতি খুঁটিয়ে দেখা এবং দুই ব্যবস্থার পারস্পরিক প্রভাব বিবেচনা করা। মালিনের আশা, ভবিষ্যৎ গবেষণায় এমন উপায় বের হবে, যাতে ওষুধ ও ব্যায়াম দুটিরই ইতিবাচক প্রভাব বজায় থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ টাইপ–২ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। রোগ প্রতিরোধে জীবনধারা পরিবর্তন ও ওষুধ, দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যদি দুই পদ্ধতি ঠিকমতো সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি বাড়তে পারে। এই গবেষণার সাহায্যে রোগ প্রতিরোধ নির্দেশিকা আরও উন্নত করা সম্ভব হবে।

 

সূত্র: Metformin Blunts Vascular Insulin Sensitivity After Exercise Training in Adults at Risk for Metabolic Syndrome. The Journal of Clinical Endocrinology, 2025

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 3 =