ভারতে আধুনিক বিশ্ববিজ্ঞানের সূত্রপাত হওয়া না-হওয়া সম্বন্ধে গোপাল হালদারের মন্তব্যটি স্মরণীয়। ‘সম্রাট আকবরের কাল পর্যন্ত ধরিলে মনে করিতে পারি, উহা (ভারত) এলিজাবেথের যুগ হইতে গৌরবে ম্লান নয়। …তবু এক শতাব্দী পার হইতেই দেখি – ভারতবর্ষ একেবারে ম্লান। ইহার কারণ অবশ্য আছে। কিন্ত যে কারণটি সহজেই চোখে পড়ে তাহা বৈজ্ঞানিক ঔৎসুক্য। গেলিলিও-বেকন সে যুগের জন্মদাতা। উহার তুলনায় মনে হয় আমাদের তখনকার সমস্ত চেষ্টাই যেন ‘ভারতীয় মস্তিষ্কের অপব্যবহার’। তাই শতখানেক বৎসরের মধ্যে ইউরোপ যখন মধ্যযুগের সামন্ততন্ত্র হইতে নতুন বণিকতন্ত্রে নবজন্ম লাভ করিল, আমরা তখনো রহিলাম সেই সামন্ত যুগেই। ইহার ফলে আমাদের জীবনে বিজ্ঞানও স্বাভাবিকভাবে আসিল না, আসিল পরবর্তী কালে সাম্রাজ্যবাদের প্রয়োজনে।’
বিজ্ঞান-ইতিহাসবেত্তা জোসেফ নীডহ্যাম অবশ্য ‘পাশ্চাত্য বিজ্ঞান’ কথাটা সম্বন্ধে আপত্তি তুলেছিলেন। তাঁর যুক্তি, বিজ্ঞান মানুষের এমনই এক কর্মকাণ্ড, যা সাত ঘাটের জল ছাড়া বাঁচেই না। একথা ঠিক, আধুনিক যুগে বিজ্ঞান মূলত পশ্চিমেই বিকাশ লাভ করেছে। কিন্ত সেই বিকাশের পেছনে পৃথিবীর অন্য অন্য প্রাচীন সভ্যতার মৌলিক অবদান রয়েছে। সেইসব মৌলিক অবদান ছাড়া আধুনিক বিজ্ঞান ঠিক এই রূপে গড়ে উঠতে পারত না। নীডহ্যাম তাই Ecumenical Science কথাটা ব্যবহার করার পক্ষপাতী ছিলেন। বাংলায় বলতে পারি বিশ্বজনীন বিজ্ঞান।
আধুনিক বিশ্বজনীন বিজ্ঞান ষোলো থেকে উনিশ শতক পর্যন্ত ইউরোপে, তারপর বিশ শতকে উত্তর আমেরিকায়, অধুনালুপ্ত সোভিয়েত রাশিয়ায় ও জাপানে ব্যাপকভাবে বিকাশ লাভ করেছে। ইউরোপ থেকে ঔপনিবেশিক প্রসারণের সূত্রে আধুনিক বিজ্ঞান পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে প্রসারিত হয়। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে যে-দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যেমন ছিল, সেই অনুযায়ী দেশে দেশে বিজ্ঞানের বিভিন্ন মাত্রার বিকাশ ঘটে – জাপানে একরকম, চীনে একরকম, ভারতে একরকম, রাশিয়ায় একরকম, মধ্যপ্রাচ্যে একরকম। এদের মধ্যে গুণগত ও পরিমাণগত মাত্রাভেদ বিপুল, কিন্ত এরা সবাই একই বিশ্বজনীন বিজ্ঞানের অঙ্গ। ঔপনিবেশিক সূত্রে ব্রিটিশদের হাত থেকে পাওয়া (কেড়ে নেওয়া বললে আরও যথাযথ হয়) সেই বিশ্বজনীন বিজ্ঞান বাংলায় কী রূপ নিল, এবং কী ধরণের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ঘাতপ্রতিঘাতের জন্ম দিল, এখানে তা নিয়ে আলোচনা করব।
সুকুমার সেন ‘পুরোনো পুঁথির বাজে পাতায় একসময়ে… কিছু মশাল তুবড়ি হাউই ইত্যাদি আতশবাজির কিছু ফর্মুলা’ পেয়েছিলেন। ‘সেটুকুই বাংলা দেশে ফলিত রসায়নচর্চার একমাত্র সাক্ষ্য। কিন্ত সে তো বিজ্ঞানচর্চা নয়। …আমদের দেশে ইংরেজি শিক্ষা প্রবর্তনের আগে বিজ্ঞানের অনুশীলন অসম্ভব ছিল। তার প্রধান কারণ আমাদের মনের ধারা। এ জগৎ মায়া, এ জগৎ মিথ্যা। …এই অধ্যাত্মসর্বস্বতার কুজঝটিকা সর্বদা ঘিরে রাখলে বাস্তবদৃষ্টি প্রসারিত হয় না। বিদেশের হাওয়া এসে সেই কুয়াশা খানিকটা পাতলা করে দিলে পরে তবেই আমাদের বিজ্ঞান-অনুসন্ধিৎসা জেগেছে।’ বাস্তবিক, বাংলায় উপনিবেশিক যুগের সূত্রপাত যখন ঘটে তখন এখানকার সংস্কৃতি ছিল কার্যত এক-মহলা। সে মহলে প্রায় একচ্ছত্র অধিকার ছিল অধিবিদ্যার।
ব্যাপারটা আশ্চর্যের কিছু নয়। রেনেসাঁসের আগে ইউরোপের অবস্থাও ঐরকম ছিল। ধর্মতত্ত্ব আর অধিবিদ্যার সেই অচলায়তন ভেঙে মানুষের মনকে বাস্তবের প্রতি উন্মুখ করাটা ছিল ইউরোপীয় রেনেসাঁসের অন্যতম কাজ। আধুনিক বিজ্ঞান সেই প্রক্রিয়ার অন্যতম প্রধান ফসল। বাণিজ্যে, ম্যানুফ্যাকচারে, অর্থনীতিতে যারা উদীয়মান শ্রেণী, যাদের হাতে ন্যস্ত হল সেই নতুন ভুবনের ভার, তাদের স্বার্থের সঙ্গে মিলে গেল বিজ্ঞানচর্চা। তাই ইউরোপে বৈজ্ঞানিক বিপ্লবটা সত্যি সত্যিই ঘটল। সেখানেও ‘বাইরের হাওয়া’-র ভূমিকা ছিল বইকি। বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ঘটার পেছনে বিরাট অবদান ছিল বহিরাগত ইসলামি সংস্কৃতির। মাত্র দু-তিনশো বছরের মধ্যে ইউরোপকে তার নিজস্ব বৈজ্ঞানিক ঐতিহ্যের বিস্মৃত উত্তরাধিকার ফিরিয়ে দিয়ে, নতুন বিজ্ঞানের পথ প্রশস্ত করে দিয়ে, ইসলাম নিজে তলিয়ে গেল ভয়াবহ বুদ্ধিবিমুখতার অতলে – যা থেকে আজ পর্যন্ত সে মুক্তি পেল না। ভেতর থেকে জমি তৈরি ছিল বলে ইসলামি সংস্কৃতির ঐ সংক্ষিপ্ত বারিসিঞ্চন ইউরোপে অত বড়ো ফসল ফলাতে পেরেছিল।
আমাদের দেশে অবস্থাটা অন্যরকম। যে-শ্রেণীর সজীব আগ্রহে ও স্বার্থে ইউরোপে বিশ্ববিজ্ঞানের নবজন্ম ঘটেছিল, এদেশে কোথায় সেই শ্রেণীর অস্তিত্ব? তাই ইসলামি সংস্কৃতির সজীব স্পর্শ আমারাও পেলাম, সংস্কৃতির কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার সুফলও ফলেছিল, কিন্তু তা বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ঘটাতে ব্যর্থ হল। ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সেরা পদার্থবিজ্ঞানী আবদুস সালাম এর একটা কারণের দিকে যথার্থভাবেই অঙ্গুলিনির্দেশ করেছেনঃ ‘বিজ্ঞানে আধিপত্য খোয়ানোর পর্বেই বড়ো বড়ো ইসলামি সাম্রাজ্যগুলো স্থাপিত হয়, তুর্কিতে ওসমানলি, ইরানে সাফ্ভি, ভারতে মুঘল)।’ তার পরে বিজ্ঞানে অগ্রসর ইউরোপীয় সংস্কৃতির প্রসাদও আমরা পেলাম। সেই জাদুস্পর্শেও তো আমাদের দেশে বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ঘটতে পারত। কিন্তু ঘটেনি। কারণ মাটি ভেতর থেকে তৈরি ছিল না। প্রথমে মায়াবাদ-প্রভাবিত ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির, তারপর অধঃপতিত ইসলামি সংস্কৃতির যৌথ পীড়নে তা মুমূর্ষু হয়ে পড়েছিল। তার ফুসফুস অক্সিজেন গ্রহণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল। তাই সমাজের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটা অংশের কথা বাদ দিলে ইউরোপীয় বৈজ্ঞানিক সংস্কৃতি তেমন কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি এখানে। আর ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীরা সে প্রভাব ফেলার ব্যাপারে খুব যে আগ্রহী ছিল, এমন অপবাদ কেউ দিতে পারবে না। কিন্তু সেজন্য তাদের দোষ দেওয়া ছেলেমানুষি। তারা তো এখানে দাতব্য করতে আসেনি। তারা স্পষ্ট বুঝেছিল এদেশের ঐ এক-মহলা অধিবিদ্যক সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখলে রাজনৈতিক অর্থে তাদের লাভ অনেক। অধীন জাতির হাতে আধুনিক বিজ্ঞানের চাবিকাঠি স্বেচ্ছায় তুলে দেওয়ার বাসনা স্বাভাবিক কারণেই তাদের ছিল না।
রামমোহনঃ বৈজ্ঞানিক সংস্কৃতির আহ্বায়ক
ফ্রান্সিস বেকনের পদ্ধতিতন্ত্র কতদূর বিজ্ঞানসম্মত, তা নিয়ে আধুনিক কালে যত বিতর্কই উঠুক, ঐতিহাসিক বিচারে এ কথা অনস্বীকার্য যে আরোহী পদ্ধতিতে বিজ্ঞান অনুশীলনের পথ বাতলে তিনি এক নতুন যুগের সৃষ্টি করেছিলেন। মধ্যযুগীয় বিজ্ঞান থেকে আধুনিক বিজ্ঞানের উত্তরণের সন্ধিলগ্নে আবির্ভাব ঘটেছিল তাঁর। আধুনিক বিজ্ঞানের এক কর্মসূচী যেন রচে দিয়েছিলেন তিনি। তার লক্ষ্য, তার উদ্দেশ্য, তার পদ্ধতি, তার সংগঠন, সমস্ত কিছুই তাঁর বিরাট মননের অন্তর্গত ছিল। প্রায় মন্ত্রের পবিত্রতা নিয়ে তিনি উচ্চারণ করেছিলেনঃ … ‘সবার চেয়ে বড় উপকারটি সাধন করবেন তিনিই যিনি নিছক একটা কাজের জিনিস আবিষ্কার না করে প্রকৃতিতে একটা আলো জ্বেলে দিতে পারবেন। সেই আলোর স্পর্শে আমাদের বর্তমান জ্ঞানের গণ্ডির পরপারে স্থিত অন্ধকার এলাকাগুলি উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। যিনি এ কর্মটি সাধন করবেন, তিনি কীর্তিত হবেন … মানবজাতির মঙ্গলবিধাতা রূপে।’
সেই বেকনের দেশ যখন পাকাপাকিভাবে আমাদের দেশ দখল করল, এবং নতুন শিক্ষাপদ্ধতি প্রবর্তন করতে চাইল, তখন মনে হতেই পারে যে তারা বেকনের দেখানো পথেই প্রজাদের হাঁটাতে চাইবে। কিন্তু ঘটনা ঠিক তার বিপরীত। ব্রিটিশ শাসকদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় বেকনেরই সমসাময়িক দিকপাল শেক্সপিয়ারের চর্চা বাঙালি শিক্ষিত মহলে ব্যাপক হয়ে উঠল, কিন্তু বিজ্ঞান-দর্শন নিয়ে চর্চার পথ তারা সযত্নে পরিহার করতে চাইল। আর, এমনই বিচিত্র পরিহাস ইতিহাসের, যে বেকনীয় দর্শন–ভিত্তিক শিক্ষা অন্য শিক্ষার তুলনায় কেন শ্রেষ্ঠ তা ‘বোঝাবার’ জন্য (যদিও বোঝানোর কোনো প্রয়োজন ছিল না) তাদের কাছে দরবার করলেন একজন ভারতীয় প্রজা। ১৮২৩ সালে লর্ড আমহার্স্টকে লেখা রামমোহন রায়ের সেই বহু আলোচিত চিঠির কথা সকলেই জানেন। সেখানে রামমোহন লিখেছেন যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেসব useful sciences নিয়ে চর্চা ক’রে অন্যান্য দেশের থেকে এগিয়ে গেছে, ভারতীয়দেরও সেই সব বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার জন্যে কোম্পানি বাহাদুর উদ্যোগ নিয়েছেন শুনে প্রথমটা তাঁর খুব আনন্দ হয়েছিল। কিন্তু তারপর জানা গেল গণিত, natural philosophy, রসায়ন, anatomy এই সব শেখানোর বদলে একটি সংস্কৃত বিদ্যালয় স্থাপন করার ব্যবস্থা হবে। সেখানে যা শেখানো হবে তা দু হাজার বছর আগেই জানা হয়ে গিয়েছে। পরবর্তীকালের দূরকল্পনাপ্রবণ লোকেরা তার সঙ্গে অসার ও শূন্যগর্ভ সূক্ষ্ম মাত্রা যোগ করেছে মাত্র। ভারতে সর্বত্রই এ ধরনের শিক্ষা খুব সুলভ। এ শিক্ষায় কোনো প্রয়োজন নেই আধুনিক ভারতের। ভারতের প্রয়োজন বেকনের দর্শনভিত্তিক বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা। অথচ তার বদলে কোম্পানি-সরকার সংস্কৃত-ভিত্তিক প্রাচীনমুখী শিক্ষারই প্রসার ঘটাতে চাইছে। এ-শিক্ষার সঙ্গে বেকন পূর্ববর্তী ইউরোপের শাস্ত্রবাদী শিক্ষার প্রচুর মিল দেখতে পেয়েছিলেন তিনিঃ মান্যবরের কাছে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ এই যে তিনি যেন লর্ড বেকনের রচনাদি প্রকাশিত হওয়ার আগে ইউরোপের বিজ্ঞান ও সাহিত্যের অবস্থার সঙ্গে তৎপরবর্তীকালের জ্ঞানের অগ্রগতির তুলনা করে দেখেন। ব্রিটিশ জাতিকে প্রকৃত জ্ঞানের সংস্রব থেকে বঞ্চিত করে রাখার উদ্দেশ্য থাকলে বেকনবাদী দর্শনকে কিছুতেই মধ্যযুগীয় ধর্মশাস্ত্রীদের দর্শনের জায়গা দখল করতে দেওয়া হত না। কেননা অজ্ঞতাকে চিরস্থায়ী করে রাখতে হলে মধ্যযুগীয় ধর্মশাস্ত্রীদের দর্শনের চেয়ে উপযোগী আর কিছুই হতে পারে না।
সরাসরি তুলনা দিয়ে রামমোহন লিখছেন, ‘অনুরূপভাবে, সংস্কৃত শিক্ষাপদ্ধতি অনুসরণ করে চললে এদেশকে সুনিশ্চিতভাবে অন্ধকারে রেখে দেওয়া যাবে।’ ‘সংস্কৃতি শিক্ষাপদ্ধতি’ বলতে রামমোহন যে আধুনিক বিজ্ঞানের ছোঁয়াচ-বর্জিত পশ্চাদমুখী শিক্ষাধারার কথা বলেছেন সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
সাধারণত এই দুই ধারার বিরোধকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষানীতির সংঘাত হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে। কিন্তু একে অধিবিদ্যাবাদী শিক্ষা আর বৈজ্ঞানিক শিক্ষানীতির সংঘাত হিসেবে দেখানো বেশী যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়। কারণ রামমোহন মোটেই নির্বিচারে পাশ্চাত্য শিক্ষার পক্ষপাতী ছিলেন না। পাশ্চাত্য শিক্ষা যে নানারকম, সেটা তিনি খুব ভালো করে উপলব্ধি করেছিলেন। তাই তিনি এক বিশেষ ধরনের পাশ্চাত্য শিক্ষা চালু করতে চেয়েছিলেন, যার ভিত্তি হবে বেকনবাদী দর্শন, যা দেকার্ত-এর দর্শনের সঙ্গে একত্রে আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তি রূপে তখন স্বীকৃত। কাজেই রামমোহন রায় যখন বেকনবাদের সপক্ষে বক্তব্য রাখছেন, তখন তিনি বিজ্ঞানের সেই প্রমাণিত সাফল্যের ভিত্তিতে দাঁড়িয়েই কথা বলছেন। অপরদিকে তিনি মোটেই নির্বিচারে সংস্কৃত শিক্ষাধারার বিরোধী ছিলেন না। বেদান্তদর্শনের ব্রহ্মবাদী সর্বজনীনতার প্রতি তাঁর অনুরাগ সুবিদিত। তিনি চাইছিলেন পুরোনো ভারতীয় চিন্তাভাবনাকে আধুনিক ছাঁচে ঢালাই করতে, আমাদের আধুনিক সংস্কৃতিকে আধুনিক বিশ্বজনীন বিজ্ঞানের স্পর্শে সজীব করে তুলত। তিনি বুঝেছিলেন, ভবিষ্যৎ ঐ দিকেই। রামমোহন রায়ের ঐ আবেদনের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের ঐতিহ্যাশ্রিত এক-মহলা সংস্কৃতিতে চিড় ধরার প্রথম সুস্পষ্ট লক্ষণ ধরা পড়ে। অর্থাৎ একদিকে সাম্রাজ্য পরিচালনার নিছক রাজনৈতিক স্বার্থে শিক্ষাকে এক-মহলা অধিবিদ্যক স্তরে আটকে রাখা হল, অন্যদিকে সংস্কৃতির দ্বিখন্ডনের প্রভাবে হিউম্যানিটিজ-ভিত্তিক শিক্ষার তুলনায় বিজ্ঞান শিক্ষাকে ছোটো করে দেখা হল। সব মিলিয়ে আমাদের দেশের ওপর এর বিষময় ফল ফলল। আজও আমরা এর মাশুল গুণে যাচ্ছি।