ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ ঘিরে উদ্বেগের মাঝেই একটি রহস্যজনক রোগ সম্প্রতি ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে আঘাত হানে। দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ৬৭ থেকে ১৪৩ জনের মৃত্যু ঘটে। এই রোগটির ফ্লু-এর মতো একাধিক উপসর্গ রয়েছে যেমন জ্বর, মাথাব্যথা, কাশি, তাছাড়াও রয়েছে রক্তাল্পতা। জানা গেছে মূলত মহিলা এবং শিশুরা এই রোগে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়েছে । কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই রোগ সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায়নি। ডিআরসি-তে স্বাস্থ্য আধিকারিকরা জরুরিভাবে এই মারাত্মক প্রাদুর্ভাবের কারণ শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন।
এই অঞ্চলে প্রধান যে সমস্যা দেখা যায় তা হল ডায়াগনস্টিক টেস্টিং সেন্টারের পরিকাঠামোর অভাব। এর পাশাপাশি রয়েছে নমুনা সংগ্রহ, সেই নমুনা পরীক্ষাগারে নিয়ে যাওয়া এবং তা পরীক্ষা করার সমস্যা। কঙ্গোর মতো নিম্ন আয়ের অঞ্চলে ক্লিনিকাল পরীক্ষাগারে শুধুমাত্র সাধারণ কিছু প্যাথোজেন পরীক্ষা করা সম্ভব। বিরল রোগজীবাণু শনাক্তকরণের জন্য প্রায়শই নমুনাগুলো আরও বিশেষ পরীক্ষাগারে পাঠানোর প্রয়োজন হয়। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের জন্য আরেকটি প্রয়োজনীয় বিষয় হল প্রাদুর্ভাবের মাত্রা এবং তীব্রতা বোঝা। এক্ষেত্রে মৃত্যুহার এবং আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা উদ্বেগজনক। তবে এই ধরনের প্রাদুর্ভাবের প্রকৃত মাত্রা বের করা সহজ নয়, কারণ সমস্ত সংক্রামিত রোগী শনাক্ত করা যায় না। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে, ক্লিনিকের সংখ্যা কম এবং প্রায়শই লোকবলও কম থাকে। প্রকৃতপক্ষে, ডিআরসি-তে প্রতি ১০,০০০ ব্যক্তির জন্য ২ জনেরও কম ডাক্তার রয়েছেন। এমনকি যদি রোগীরা হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যানও তাহলেও সমস্ত সংক্রমণ নির্ণয় করা যায় না, সমস্ত রোগীর সংক্রমণের জন্য পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না আবার যে সব সংক্রমণ শনাক্ত করা হয় তা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হয় না। ফলত টেস্টিং-এর অভাবে যে কোনো ধরনের রোগ মানুষের জন্য ঝুঁকির সৃষ্টি করে। তাছাড়াও নতুন সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব কয়েক বছর ধরে নিয়মিত ঘটেছে। গবেষকদের মতে এই ধরনের সংক্রমণের জন্য আংশিকভাবে দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যার পরিবর্তন, নগরায়ন, বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে গাছ কেটে ফেলা। ফলে বেড়ে যাচ্ছে পশুপাখিদের থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণের হার। দুর্ভাগ্যবশত, দরিদ্র দেশগুলোতে এমন অনেক এলাকা থাকে যেখানে রোগ শনাক্ত হয় না বা দেরিতে ধরা পড়ে। কম নজরদারি, কর্মীর অভাব, কর্মীদের প্রশিক্ষণ বা তত্ত্বাবধানের অভাব এবং রিপোর্টিং-এর মান খারাপ থাকে। সংক্রামিত হওয়ার সময় থেকে, রোগটি নির্ণয় করার সময়, জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে জানানো, সব ক্ষেত্রেই বিলম্ব ঘটে। এর ফলে প্রাদুর্ভাবের রোগ নিয়ন্ত্রণের প্রতিক্রিয়া বিলম্বিত হয়। তাই সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। বিশ্বব্যাপী রোগের নজরদারির মান উন্নত না করলে পরবর্তী মহামারী শনাক্ত করতে আমাদের খুব দেরি না হয়ে যায়।