কচ্ছপদের চৌম্বক জ্ঞান

কচ্ছপদের চৌম্বক জ্ঞান

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

সামুদ্রিক কচ্ছপরা অনায়াসেই সমুদ্রে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দেয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন এরা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র ব্যবহার করে পথ নিরূপণ করে। কিন্তু কীভাবে এরা এই চৌম্বকীয় মানচিত্র শেখে ও মনে রাখে তা এখনও একটি রহস্য। চ্যাপেল হিলের নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কায়লা গোফোর্থের নেতৃত্বে একটি গবেষণায় অনুসন্ধান করা হচ্ছে কীভাবে এই প্রাণীরা বিশাল সমুদ্রের চারপাশে তাদের পথ খুঁজে পেতে চৌম্বকীয় সংকেত ব্যবহার করে। লগারহেড কচ্ছপরা খাবার এবং বাসা বাঁধার জন্য প্রায় ১০০০ মাইলেরও বেশি ভ্রমণ করে। তারা একই জায়গায় ফিরে যাওয়ার জন্য একটি মানসিক মানচিত্র এবং চৌম্বকীয় সংকেত ব্যবহার করে।গবেষণায় দেখা গেছে পরিযায়ী প্রাণীরা বিভিন্ন ভৌগোলিক এলাকার চৌম্বকীয় স্বাক্ষর চিনতে শিখতে পারে। সামুদ্রিক কচ্ছপরা এই শেখা সংকেতগুলি মুখস্থ দিকচিহ্নর মতো ব্যবহার করে নির্ভুলভাবে গন্তব্যে পৌছায়।

বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন সামুদ্রিক কচ্ছপের দুটি স্বতন্ত্র চৌম্বকীয় ইন্দ্রিয় রয়েছে। একটি কম্পাস ইন্দ্রিয় ও একটি মানচিত্র ইন্দ্রিয়। কম্পাস ইন্দ্রিয় তাদের সাধারণ দিক নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।অন্যদিকে মানচিত্র ইন্দ্রিয় তাদের পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র ব্যবহার করে নির্দিষ্ট অবস্থানগুলি চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।

অনেক পরিযায়ী প্রাণী, যেমন কিছু পাখি, একই রকম আধুনিক নেভিগেশন (চালনাবিদ্যা) পদ্ধতি ব্যবহার করে । এগুলি তাদের দিকনির্দেশনা এবং অবস্থানের সংকেতগুলিকে বুঝতে সাহায্য করে। কচ্ছপদের রক্ষার জন্য শুধুমাত্র চোরাশিকার কমানো বা বায়ু দূষণ রোধ করলেই হবে না। অনেকেই মনে করেন বিদ্যুতের তারের চুম্বকীয় প্রভাব কচ্ছপদের বাড়ি ফেরার পথে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। মানুষের কাজকর্মে এই চৌম্বকীয় পরিবেশ ব্যাহত হলে কচ্ছপদের খাদ্য এবং বাসা বাঁধার জায়গা খুঁজে পাওয়ার ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই সব আশ্চর্য প্রাণীদের রক্ষা করার জন্য সামুদ্রিক উন্নয়নের সতর্ক পরিকল্পনা প্রয়োজন। গবেষণায় বিজ্ঞনীরা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কচ্ছপগুলির জন্য বিভিন্ন চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করতে একটি বিশেষ অ্যান্টেনা সিস্টেম ব্যবহার করেছিল।অধ্যাপক রেইকো হেনিঙ কচ্ছপদের অনুসরণ করার জন্য যে অ্যান্টেনা তৈরি করেছিলেন তা অন্ধকার পদার্থ অনুসন্ধানের জন্য আগে ব্যবহৃত অ্যান্টেনার মতোই। বিজ্ঞানীরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশের পরিবর্তনের প্রতি প্রাণীরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় তা পরীক্ষা করছেন। এই পদ্ধতির মাধ্যমে একটি নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষাগারে দ্রুত তথ্য সংগ্রহ এবং আরও ভালোভাবে গবেষণা করা সম্ভব হবে। লগারহেডরা একাধিক চৌম্বক ক্ষেত্র মনে রাখতে পারে কিনা এবং কত দ্রুত নতুন সংকেতের সাথে খাপ খাইয়ে নেয় তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন। তারা আরও জানতে চান যে এই দক্ষতাগুলি কীভাবে বিকশিত হয় এবং কচ্ছপগুলি তাদের বাচ্চাদের কোনো জ্ঞান শেখায় কিনা।
ভবিষ্যতের গবেষণাগুলি তদন্ত করবে কচ্ছপ কীভাবে সমুদ্রে চলাচলের জন্য চৌম্বকীয় তথ্য ব্যবহার করে এবং পরিবেশগত কারণগুলি এই ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে কিনা। তাদের এই শেখার কোনো সীমা আছে কিনা। মাছ এবং কচ্ছপের মতো কিছু সামুদ্রিক প্রাণী চৌম্বক ক্ষেত্র অনুভব করতে পারে। বিজ্ঞানীরা বুঝতে চান এটি কীভাবে কাজ করে এবং বিভিন্ন প্রাণীর ক্ষেত্রে এটি একই রকম কিনা। গবেষণা থেকে পাওয়া জ্ঞান সামুদ্রিক জীবনের চাহিদার সাথে মানুষের কার্যকলাপের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 3 =