
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কচ্ছপের বিস্ময়কর দীর্ঘ আয়ু মানুষকে অবাক করেছে, যদিও কচ্ছপের গড় আয়ু তাদের প্রজাতি, বাসস্থান, খাদ্য এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় আরও আশ্চর্যজনক তথ্য উঠে এসেছে — কচ্ছপের মধ্যে ক্যান্সারের হার অত্যন্ত কম। ফলে তারা ক্যান্সার গবেষণার জন্য একটি সম্ভাবনাময় মডেল হয়ে উঠেছে। আশা করা যায় ভবিষ্যতে মানুষের ক্যান্সার প্রতিরোধে এটি বড় ভূমিকা পালন করবে।
ইউনিভার্সিটি অব নটিংহ্যামের ড. ইয়লেনিয়া কিয়ারির নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, কচ্ছপদের মধ্যে ক্যান্সার মাত্র ১ শতাংশ বা তারও কম। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন চিড়িয়াখানার কয়েক দশকের স্বাস্থ্য রেকর্ড বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, শত শত কচ্ছপের নেক্রোপ্সি (মৃতদেহ পরীক্ষা) রিপোর্টে মাত্র ০.৩৪% ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধির চিহ্ন মিলেছে এবং ক্যান্সার অত্যন্ত বিরল ঘটনা।
কিন্তু স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে এই সংখ্যা গড়ে ১০% এবং পাখিদের মধ্যে প্রায় ৩%। কচ্ছপদের শরীরে নির্দিষ্ট কোনো অঙ্গভিত্তিক ক্যান্সারের প্রবণতাও নেই। তার মানে,
কচ্ছপদের শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধের শক্তিশালী প্রক্রিয়া রয়েছে। তাদের ধীর বিপাক ক্রিয়া ও দেহে ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদান সংরক্ষণ (অক্সিডেটিভ স্ট্রেস) প্রতিরোধের ক্ষমতা কোষের ক্ষয় রোধ করে। বিশেষ করে গ্যালাপাগোস ও আলডাব্রা প্রজাতির কচ্ছপদের জিনে এমন পরিবর্তন পাওয়া গেছে যা টিউমার দমন করে এবং ডিএনএর স্থায়িত্ব বজায় রাখে। দেখা গেছে, কচ্ছপের কোষ প্রয়োজনে দ্রুত নিজেদের ধ্বংস করতে পারে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত কোষ ক্যান্সারে পরিণত না হয়।
এমনকি বড় ও দীর্ঘজীবী কচ্ছপদের মধ্যেও ক্যান্সারের হার কম, যা জৈবিক নিয়মের ব্যতিক্রম। কারণ সাধারণত বৃহৎ ও দীর্ঘজীবী প্রাণীর কোষ সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকিও বেশি হয়। গ্যালাপাগোস এবং আলডাব্রা কচ্ছপের ওজন ৬৬০ পাউন্ডেরও বেশি, লেদারব্যাক সামুদ্রিক কচ্ছপের ওজন ১১০০ পাউন্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবুও তাদের ক্যান্সারের হার অত্যন্ত কম ।
তবে এইসব গবেষণা মূলত চিড়িয়াখানার কচ্ছপদের ওপর চালানো হয়েছে, যাদের জীবনকাল মুক্ত কচ্ছপদের তুলনায় বেশি। তাই মুক্ত কচ্ছপদের নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। বিজ্ঞানীরা কচ্ছপের কোষ নিয়ে ল্যাবরেটরিতে গবেষণার প্রস্তাব দিচ্ছেন, যাতে বোঝা যায় কিভাবে তারা ডিএনএ ক্ষয়, স্ট্রেস বা ক্যান্সার উৎপাদনকারী উপাদানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে ।
সবশেষে গবেষকরা বলেন, কচ্ছপদের সংরক্ষণ শুধু জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য নয়, মানবস্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জিনে লুকানো ক্যান্সার প্রতিরোধের রহস্য ভবিষ্যতের চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম চাবিকাঠি হয়ে উঠতে পারে।
সূত্রঃ BioScience Journal.