
কাছিম সমেত সরীসৃপদের নিয়ে বৈজ্ঞানিক ও জনমানসে এক ধরনের ভাবনা গেঁথে আছে: এদের নাকি মন বা অনুভূতি নেই, আছে কেবল প্রতিক্রিয়া। সরীসৃপরা যেন ঠান্ডা রক্তের সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা হৃদয়েরও প্রতীক। কিন্তু ইউনিভার্সিটি অফ লিঙ্কনের একটি গবেষণা অন্য কথা বলছে। লাল-পায়ের কচ্ছপদের (Chelonoidis carbonaria) উপর পরিচালিত তাদের গবেষণা বলছে, এরা শুধু অনুভবই করে না, কোনো ঘটনার বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী মেজাজও ধরে রাখতে পারে। আগে মনে করা হত, এমনটা কেবল স্তন্যপায়ী বা পাখিদের ক্ষেত্রেই হয়। গবেষকরা জানিয়েছেন, কচ্ছপের মেজাজ তাদের আচরণে প্রভাব ফেলে। আশা কিংবা নিরাশা তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পরিবেশ পর্যবেক্ষণ ও প্রতিক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। এটি কোন ‘ভাসমান মানসিক অবস্থা’-র কারণে ঘটে না, এ তাদের সার্বিক মনোভাবের প্রতিফলন। মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ীর ক্ষেত্রে এই মেজাজ বোঝার জন্য ব্যবহৃত হয় বোধবুদ্ধির পক্ষপাত বোঝার পরীক্ষা। সরীসৃপদের ওপর এই প্রথমবার সেই পরীক্ষা প্রয়োগ করা হলো। ১৫টি লাল-পায়ের কচ্ছপকে একটি পরীক্ষাযর সম্মুখীন করা হয়, যেখানে তারা খাবারের অবস্থান শিখে নেয়। এরপর নতুন অবস্থানে খাবারের দিকে এগোনোর গতি তাদের মেজাজের ইঙ্গিত দেয়। প্রায় সব কচ্ছপ ইতিবাচক মেজাজে দ্রুত এগিয়ে যায়, যা ‘আশাবাদী পক্ষপাত’-এর নির্দেশক। পরবর্তীতে কচ্ছপদের অপরিচিত বস্তু ও পরিবেশে রাখা হয়; আশাবাদীরা সেখানে বেশি আত্মবিশ্বাসী ও কৌতূহলী আচরণ দেখায়। অধ্যাপক আনা উইলকিনসন বলেন, “এই ফলাফল থেকে বোঝা যায়, কচ্ছপ নিছক প্রতিক্রিয়া দেয় না, মূল্যায়ন করে, আগাম অনুমান করে, এবং অনুভব করে। তাই যত্ন নিয়ে, ওদের আচরণগত চাহিদা মাথায় রেখে ওদের আবাস পুনর্বিবেচনা করা উচিত।” সহ-গবেষক অলিভার বুরম্যান বলেন, “কচ্ছপ আজকাল অনেকের ঘরেই পোষ্য হিসেবে গৃহীত হচ্ছে। তাই তাদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং আবেগ-সংবেদনশীলতা নিয়ে চিন্তা করা অত্যন্ত জরুরি।”
এ গবেষণার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, বিবর্তনের দিক থেকে এরা বহু পুরোনো প্রজাতি। তাই যদি কচ্ছপের মতো সরীসৃপরাও ‘মেজাজ’ অনুভব করতে পারে, তাহলে বুঝতে হবে, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির শিকড় প্রাণীজগতের অনেক গভীরে রয়ে গেছে। মেজাজ বা অনুভূতি কেবল ‘উন্নত প্রাণী’র গুণ নয়, জীবনেরই এক মৌলিক বৈশিষ্ট্য।
তথ্য সূত্রঃ Animal Cognition Journal