কমলা রঙের কুমির !

কমলা রঙের কুমির !

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৪ জানুয়ারী, ২০২৫

গ্যাবন, মধ্য আফ্রিকার আটলান্টিক উপকূলের একটি দেশ। এই দেশের গুহায় বসবাস করে বামন আকারের কিছু কুমির। বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেছেন তাদের চামড়ার রঙ কমলা হয়ে উঠছে। বিজ্ঞানীদের অনুমান তাদের এই রঙ পরিবর্তনের কারণ হতে পারে ‘গুয়ানো’র মধ্যে তাদের সাঁতার কাটা। পাখি বা বাদুড়ের বিষ্ঠা বা শরীর থেকে নিষ্কাশিত বর্জ্যকে বলে গুয়ানো। জেনেটিক গবেষণা থেকে জানা যায় যে এই বামন কুমিরগুলো একটি নতুন প্রজাতিতে রূপান্তরিত হতে পারে। গ্যাবনের গুহার গভীরে, নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে বসবাসকারী কমলা রঙের বামন কুমিরের সংখ্যা কত তা বিজ্ঞানীদের অজানা। বিজ্ঞানীরা এও জানেন না ঠিক কখন থেকে তারা বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো বন্ধ করে গুহাবাসী হয়ে উঠেছে। তবে জানা গেছে তারা সেই গুহায় বাদুড় ভক্ষণ করে আর তাদের বিষ্ঠার মধ্যে সাঁতরে বেড়ায়। বিজ্ঞানীদের ধারণা তারা হয়তো এই ভূগর্ভস্থ জীবনধারায় হাজার হাজার বছর ধরে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। সম্ভবত শুরু হয়ে গেছে নতুন প্রজাতিতে বিবর্তিত হওয়ার প্রক্রিয়া। গুহাবাসী কুমিরদের নিয়ে বিজ্ঞানীরা অধ্যয়ন শুরু করেন ২০১০ সালে। ২০১৬ সালে এই গুহাবাসীদের সঙ্গে বনে বসবাসকারী কুমিরের তুলনা করে বেশ কিছু পার্থক্য দেখা যায়, বিশেষ করে তাদের খাদ্যাভ্যাসে। একচেটিয়াভাবে গুহার দেয়ালে আঁকড়ে থাকা ঝিঁঝিঁ পোকা ও বাদুড়ের অনুগ্রহে তাদের খাবারের অভাব হয় না। তাই বনের কুমিরদের তুলনায় তারা সর্বদা প্রচুর শিকার পায় এবং গুহার ভিতরে শিকারীদেরও চোখ এড়িয়ে থাকে। ধীরে ধীরে সংখ্যায় তারা বৃদ্ধি পায়। বামন আকারের এই কুমিরগুলো গুহার মুখে তাদের ডিম পাড়ে, ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলে বাচ্চাগুলো গুহায় প্রবেশ করে। তারপর বড়ো হলে তাদের আর সচরাচর বাইরে দেখা যায় না। বিজ্ঞানীদের ধারণা প্রাপ্তবয়স্ক কুমিরের অস্বাভাবিক কমলা রঙের কারণ হল তারা ওই ইউরিয়া সমৃদ্ধ ‘গুয়ানো’-তে সাঁতারে বেড়ায়। ফলে তাদের ত্বকের রাসায়নিক ব্লিচিং ঘটছে বলে মনে করছেন গবেষকরা। কুমিরের জেনেটিক বিশ্লেষণের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে কমলা রঙের কুমিরগুলোর মধ্যে সম্ভবত পরিব্যক্তি ঘটছে। এদের এমন একটি ডিএনে গ্রুপ রয়েছে যা তারা তাদের বাবামায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে আর এটি বনের কুমিরের মধ্যে দেখা যায়না। এই জেনেটিক পরিবর্তন প্রমাণ করে যে গুহাবাসী কুমিরগুলো ধীরে ধীরে একটি নতুন প্রজাতিতে বিবর্তিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 − two =