কমল রানাদিভেকে জানেন? ভারতের হাতে গোনা মহিলা বিজ্ঞানীদের একজন। কী কাজ তার? ক্যানসারের সঙ্গে যে জিনগত মিউটেশনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে এবং এখানে বংশগতি একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে সেটা আজ সর্বজনবিদিত। কিন্তু যোগসূত্রটির আবিষ্কারক? কমল রানাদিভে!
১৯১৭-তে পুণেতে জন্ম কমলের। বাবা দীনেশ দত্তাত্রেয় সমরাথ ছিলেন পুণের ফার্গুসন কলেজের জীবিদ্যার অধ্যাপক ছিলেন। উদার মানসিকতার মানুষ দীনেশের মেয়ের পড়াশুনো নিয়ে কোনও সংকোচ ছিল না। মেয়েকেও ছেলেদের মত সমান আন্তরিকতায় পড়াশুনো করিয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যাপারে। বাবার মতই জীববিদ্যা নিয়ে পড়াশুনো করেছিলেন তিনি। ফার্গুসন কলেজ থেকে স্নাতক পর্যায়ের পড়াশুনো শেষ করে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে গবেষণার কাজ করছিলেন তিনি। সেই অবস্থায় বিশেষ বৃত্তি নিয়ে বাল্টিমোরের হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওখানে পড়াশুনো শেষ করে কমল ভারতে ফেরেন। সেই সময়ে মুম্বইয়ে স্থাপিত হয়েছে ইন্ডিয়ান ক্যানসার রিসার্চ সেন্টার। সেখানেই কমলের যোগ দেওয়া সিনিয়র সায়েন্টিফিক রিসার্চ অফিসার হয়ে। পরবর্তীকালে পাঁচ বছর (১৯৬৬ থেকে ১৯৭০) সংস্থার ডিরেক্টর হয়েও কাজ করেছেন।
কোষবিজ্ঞানের ওপর অজস্র গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কমলের। শুধু কি তাই? সদ্য স্বাধীন হওয়া ভারতে মহিলাদের মধ্যে বিজ্ঞানচর্চার প্রসারের জন্য দেশজুড়ে তার ঘুরে বেড়ানো, গ্রামাঞ্চলগুলোতে খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রচার করে বেড়ানোর মত কাজও কমল রানাদিভে করে গিয়েছেন। তার শরীর সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছিল প্রবল এই পরিশ্রমের কাজ করে। মহিলাদের নিয়ে তৈরি হওয়া ইন্ডিয়ান উওম্যান সায়েন্টিস্ট অ্যাসোশিয়েশন কমল রানাদিভেরই সৃষ্টি করা। ভারতে তিনিই প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী যিনি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম আন্দোলন করেছিলেন দেশে অত্যাধুনিক মানের গবেষণাগার তৈরি করার জন্য। একইসঙ্গে বিদেশে গবেষণারত সমস্ত ভারতীয় বিজ্ঞানীদের তিনি আবেদন নিয়মিত করতেন দেশে ফিরে কাজ করতে। ২০০১ সালে ৮৩ বছর বয়সে প্রয়াত হন কমল রানাদিভে।
কে মনে রেখেছে কমল রানাদিভেকে? ভারত মনে রেখেছে? কোথাও তার নামে সরকারের কোনও বৈজ্ঞানিক সংস্থা? বা তার জন্মদিন বা মৃত্যুদিন পালন করে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ? চোখে পড়ে না!
তিন দিন আগে কমলের ১০৪তম জন্মদিন গেল। গুগুল তাকে সম্মান জানিয়েছে। মাইক্রোস্কোপে চোখ রাখা কমল রানাদিভের ছবি দিয়েই তৈরি হয়েছিল সেদিনের গুগুল ডুডল!