কম্পিউটার/কম্পিউটেশনাল লিঙ্গুইস্টিক্স-এর কাজ হল মানুষের লিখিত ভাষা ও মুখের ভাষাকে বিশ্লেষণ করে কম্পিউটার কীভাবে তার ওপর নানান কারিকুরি করতে পারে তা নিয়ে চর্চা করা। বাংলায় বলতে পারি কম্পিউটার ভাষাতত্ত্ব। জ্ঞানবিজ্ঞানের অনেক শাখা এই চর্চার সঙ্গে যুক্ত, যথা গণিত, কম্পিউটার সায়েন্স, ভাষাতত্ত্ব, দর্শন, যুক্তিশাস্ত্র, বোধবিজ্ঞান (কগনিটিভ সায়েন্স), কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইঞ্জিনিয়ারিং, স্নায়ুবিজ্ঞান এবং মানববিজ্ঞান (অ্যান্থ্রপলজি) প্রভৃতি। ১৯৫০-এর দশকে ঠাণ্ডা লড়াইয়ের জমানায় রুশ বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রগুলিকে দ্রুত ইংরেজিতে অনুবাদ করতে গিয়ে আমেরিকায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চর্চার সঙ্গে জড়িয়ে যায় এই কম্পিউটার ভাষাতত্ত্ব। তারপর ১৯৭০-১৯৮০-র দশকে ন্যাচরাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং নামক বৃহত্তর চর্চা-ক্ষেত্রটির সঙ্গে এটি মিশে যায়। কম্পিউটার ভাষাতত্ত্বর বিকাশে বিশেষভাবে কাজে লেগেছে নোয়ম চোম্স্কির তত্ত্ব, বিশেষ করে শিশুরা কী করে ব্যাকরণের জটিল নিয়ম শিখে ফেলে সে-বিষয়ে তাঁর যুগান্তকারী গবেষণা।
কম্পিউটার ভাষাতত্ত্ব চর্চায় ভাষাকে নিয়ে স্বয়ংক্রিয় কারিকুরি করার জন্য বিভিন্ন অ্যালগরিদ্ম আর রাশিবৈজ্ঞানিক (স্ট্যাটিস্টিকাল) প্রক্রিয়া তৈরি করে কম্পিউটারে পাঠানো হয়।
এই অ্যালগরিদ্ম কথাটা বিশ্ববরেণ্য আরবি বিজ্ঞানী আল খোয়ারিজ্মি (আনু. ৭৮০- আনু. ৮৫০) -র নামের লাতিন অপভ্রংশর ইংরিজি অপভ্রংশ। খোয়ারিজমি ভারতীয় অঙ্কপাতন পদ্ধতি শিখে নিয়ে সে বিষয়ে আরবি ভাষায় বই লেখেন। তাঁর আরবি গ্রন্থগুলি থেকেই ইউরোপের পণ্ডিতরা প্রথম ভারতীয় অঙ্কপাতন পদ্ধতি শেখেন, কী করে পাটীগণিতের অঙ্ক করতে হয়, তাও শেখেন। সেই সূত্রেই তাঁর লাতিন নাম ইউরোপে চালু হয়ে যায়, ভুল উচ্চারণে যদিও।
আজকের দিনে অ্যালগরিদ্ম, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এর অপরিহার্য অঙ্গ। অ্যালগরিদ্ম মানে হল নির্দিষ্ট কোনো একটা কাজ ধাপে ধাপে সম্পন্ন করবার জন্য কম্পিউটারকে বিশেষ কতকগুলো নির্দেশমালা দেওয়া আর সেই সঙ্গে এক বা একাধিক ইনপুট ঢোকানো। তারই ভিত্তিতে কম্পিউটার বাধ্য এবং নিপুণ ভৃত্যের মতো সেই বিশেষ কাজটা নিষ্পন্ন করে। কম্পিউটার ভাষাবিজ্ঞানের লক্ষ হল, বিশেষ বিশেষ অ্যালগরিদ্মের সাহায্যে এমন কম্পিউটার বানানো যার সাহায্যে লোকে আরও সুষ্ঠুভাবে যন্ত্র আর সফটওয়ারের সঙ্গে ভাব বিনিময় করতে পারে। নানা ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ হয়, যথা:
যন্ত্র সহযোগে অনুবাদ: নানা ভাষার মধ্যে ভাববিনিময় করার জন্য।
মুখের ভাষা চেনা: এর সাহায্যে কম্পিউটার মানুষের মুখের কথা বুঝতে পারে।
লিখিত রচনা থেকে মুখের কথায় রূপান্তর: এর দৌলতে কম্পিউটারের পক্ষে কথা বলা সম্ভব হয়।
বাক্-ইঞ্জিন: ইন্টারনেট থেকে তথ্য সন্ধানে মানুষকে সাহায্য করে।
চ্যাটবট ও ভার্চুয়াল সহায়ক: কম্পিউটারের পক্ষে এর সাহায্যে কম্পিউটার ব্যবহারকারীর জিজ্ঞাসাগুলিকে বোঝা ও সেই অনুযায়ী উত্তর দেওয়া সম্ভব হয়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর কম্পিউটার/কম্পিউটেশনাল লিঙ্গুইস্টিক্স-এর দৌলতে মানবসমাজ কি সভ্যতা-সংস্কৃতির এক নবযুগের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে? এ প্রশ্ন অনেকেরই।