কাঁচা দুধে জীবাণু সংক্রমণ

কাঁচা দুধে জীবাণু সংক্রমণ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৫ আগষ্ট, ২০২৫

ফ্লোরিডার একটি দুগ্ধ খামারের কাঁচা দুধ খাওয়ার ফলে ই-কোলাই এবং ক্যাম্পিলোব্যাকটর সংক্রমণের নতুন প্রাদুর্ভাব নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে সেখানকার স্বাস্থ্য বিভাগ। এ পর্যন্ত ২১ জন এই সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন, যার মধ্যে ১০ বছরের কম বয়সী ৬টি শিশু রয়েছে। সাত জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজনের গুরুতর জটিলতা দেখা দিয়েছে।
নির্দিষ্ট কোন খামার থেকে এই দুধ এসেছে তা অবশ্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে সংশ্লিষ্ট খামারটির স্বাস্থ্যবিধি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। রাজ্যে আইন অনুযায়ী কাঁচা দুধ শুধুমাত্র পশু খাদ্যের উদ্দেশ্যে বিক্রি করা যায়। কিন্তু অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে পোষা প্রাণীর দুধের নাম করে নিজের জন্য এই দুধ সংগ্রহ করেন।
সাধারণত, নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও হ্রাসের মাধ্যমে দুধকে জীবাণুমুক্ত করা হয় (পাস্তুরায়ন)। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সি ডি সি) জানিয়েছে, এইভাবে জীবাণু মুক্ত দুধ কাঁচা দুধের মতোই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন, কিন্তু এতে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে না। অন্যদিকে, কাঁচা দুধে ই-কোলাই, লিস্টেরিয়া, সালমোনেল্লা, ক্যাম্পিলোব্যাকটর এবং ব্রুসেল্লা সহ নানা রোগজীবাণুর ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতায় দুর্বল ব্যক্তিরা এর সম্ভাব্য শিকার। মার্কিন কৃষি বিভাগ ১৯৮৭ সাল থেকে মানুষের পানযোগ্য কাঁচা দুধের আন্তঃরাজ্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছে। অনেকেই কাঁচা দুধকে স্বাস্থ্যকর মনে করেন, যদিও তার কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র নিজেও কাঁচা দুধ পান করেন এবং এর বৈধতা প্রসারে সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁর ‘আমেরিকার স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনো’ কর্মসূচিতে কাঁচা দুধকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে।
সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর বারবার সতর্কতার পরেও এই ধরনের অসুস্থতা প্রতিরোধে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে অনেকেই মনে করছেন। এফ ডি এ জানিয়েছে, ১৯৮৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কাঁচা দুধ ও তার উৎপাদিত পণ্যের মাধ্যমে ১৪৩টি সংক্রমণের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে গর্ভপাত, কিডনি বৈকল্য, এমনকি মৃত্যু ।
এর আগেও কাঁচা দুধ সংক্রান্ত বড় ধরনের সংকট দেখা গেছে। গত বছর ক্যালিফোর্নিয়ায় বার্ড ফ্লু ভাইরাসসের অস্তিত্ব থাকায় একাধিক খামারের কাঁচা দুধ বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়। তবুও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কাঁচা দুধ কিছু রাজনৈতিক ও বিশেষ আখড়া গোষ্ঠীর মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে, বিশেষ করে কিছু রক্ষণশীল ও ভিন্ন ধরনের বিশ্বাসের মানুষের মধ্যে।
কেনেডির এফ ডি এ দপ্তরের কর্মীসংকটের কারণে দুধের মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষার একটি কর্মসূচি সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তিনি কাঁচা দুধের ফেডারেল নিয়মকানুনে বড় কোনো পরিবর্তন আনতে পারেননি, যা সমর্থকরা আশা করেছিলেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার ‘কাঁচা খামারে’র মালিক মার্ক ম্যাক্যাফি বলেছেন, প্রথমে তাকে কাঁচা দুধের নিয়ম পরিবর্তনের জন্য সাহায্য করতে উৎসাহ দেওয়া হলেও পরে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বৈঠকের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়। তিনি এটিকে প্রতারণামূলক বদল বলেই অভিহিত করেছেন।
কাঁচা দুধ খেলে যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে, তা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ফ্লোরিডার এই সাম্প্রতিক সংক্রমণ।

সূত্র : Florida Department of Health Provides Update on Raw Milk by Florida Health (4.8.2025) .

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × four =