আজ আর এটা অজানা নয় যে কাক জাতীয় পাখিরা বেশ সৃজনশীল এবং বুদ্ধিদীপ্ত চিন্তাভাবনা করতে পারে আর এই ক্ষমতা দিয়েই তারা আশ্চর্যজনক কাজ করে ফেলে। এক নতুন গবেষণা তাদের ক্ষমতার এক আশ্চর্য দিক তুলে ধরেছে, হতবাক করেছে আমাদের। বিজ্ঞানীদের একটি দল দেখিয়েছে যে কাক উচ্চস্বরে গণনা করতে পারে – চাক্ষুষ এবং শ্রবণীয় কিছু ইঙ্গিতের প্রতিক্রিয়া হিসাবে তারা কা—কা করে নির্দিষ্ট সংখ্যক ডাক ডাকে। পূর্বে গবেষণা দেখিয়েছে মৌমাছি ও কিছু প্রাণীর সংখ্যা বোঝার ক্ষমতা রয়েছে কিন্তু গণনা করার ক্ষমতা এখনও মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রজাতির মধ্যে পরিলক্ষিত হয়নি। কিন্তু এই গবেষণায় জানা গেছে ঠিক যেমন আমাদের শিশুরা সংখ্যা গুনতে এবং চিনতে শেখে কাকেদেরও গণনার ক্ষমতা রয়েছে। জার্মানির টিউবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোবায়োলজির গবেষক ডায়ানা লিয়াও-এর মতে এই প্রথমবার কোনও প্রাণী প্রজাতির মধ্যে এই দক্ষতা দেখা গেছে। তবে মনে করা হয় কাকেরা সংখ্যার প্রতীক চিনতে পারে না। আমরা জানি সংখ্যার দুটি অংশ- এক তার পরিমাণ আর অপরটি সংখ্যাটি চিনতে তার নির্দিষ্ট প্রতীকের ব্যবহার। এই দুটির সাহায্যে একটি সংখ্যা চেনার দক্ষতা আমরা অর্জন করি। এখনও পর্যন্ত মানুষের এই দক্ষতা রয়েছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু কাকেরা এই পদ্ধতি অনুসরণ করে না। তারা সংশ্লিষ্ট সংকেতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কণ্ঠস্বরের নিয়ন্ত্রণ করে কা…কা ডেকে গণনা করে – ঠিক যেমন ছোটো বাচ্চারা যারা সংখ্যার প্রতীকের সাথে অভ্যস্ত নয় তারা গণনা করে। ধরা যাক একজন শিশুকে জিজ্ঞাসা করা হল যে গাছে কতগুলো পেয়ারা আছে? শিশুটি উত্তর দিতে পারে, “এক, এক, এক” বা “এক, দুই, তিন”। এইভাবে উত্তর দিতে সে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করবে, কারণ সে যে সংখ্যক বস্তু দেখছে সেই সংখ্যকই আওয়াজ সে করবে; সে কখনই বলবে না- “তিন।” কাকেরাও একইভাবে গণনা করে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। নতুন এই গবেষণায়, লিয়াও এবং তার সহকর্মীরা গবেষণাগারে তিনটি ক্যারিয়ন কাক- কর্ভাস করোন, নিয়ে পরীক্ষা করেন। তারা কাকেদের কিছু নির্দিষ্ট সংকেত দেখায়, যার মধ্যে চারটি রঙিন আরবি সংখ্যা দেখে গণনা করে বলা এবং অপর চারটি শোনার অর্থাৎ বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ। সঠিকভাবে সংখ্যাটি গণনার জন্য তাদের খাবার দিয়ে পুরস্কৃতও করা হয়েছিল। গবেষণায় দেখা গেছে ১৬৬ থেকে ১৮৯ বার প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর, সব কাকই ইঙ্গিতগুলোর সাথে যুক্ত সঠিক সংখ্যা কা–কা ডেকে বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল। গবেষকদের মতে পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে গণনা করার ক্ষমতা মস্তিষ্কের বিবর্তনের একটি স্বাক্ষর। পৃথিবীর বুকে লড়াই করে বেঁচে থাকার চ্যালেঞ্জগুলোর ক্ষেত্রে কার্যত একই সমাধান উভয় দলই খুঁজে নিয়েছে, সুতরাং কাকেরাও ছোটো বাচ্চাদের মতো শেখে, মনে রাখে, পরিকল্পনা করে, কাজ করে এবং ভুল করে।