কাঠবিড়ালী যখন মাংসাশী এক শিকারী

কাঠবিড়ালী যখন মাংসাশী এক শিকারী

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

‘কাঠবিড়ালি কাঠবিড়ালি, পেয়ারা তুমি খাও?’ – নাহ, পেয়ারা বাদেও নাকি তুলোর বলের মতো ছোট্ট নিরীহ প্রাণীটা মাংস খেতে শিখেছে! এই বাদামখেকো তৃণভোজী প্রাণী নির্মম শিকারী হয়ে উঠছে! উইসকনসিন-ইউ ক্লেয়ার ইউনিভার্সিটির গবেষণা একথা জানাচ্ছে। জার্নাল অফ ইথোলজিতে এই প্রাণীর শিকার ধরার ওপর গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক, জেনিফার ই. স্মিথ বলেছেন, যতই প্রযুক্তির অগ্রগতি হোক, এই পরিবর্তিত বিশ্বে, আমাদের বাড়ির উঠোনে, বাগানে ঘুরে বেড়ানো কাঠবিড়ালি, পাখি, প্রাকৃতিক জগৎ সরাসরি পর্যবেক্ষণের কোনও বিকল্প নেই। ক্যালিফোর্নিয়ার কন্ট্রা কোস্টা কাউন্টির ব্রায়োনেস রিজিওনাল পার্কে দীর্ঘমেয়াদী এক গবেষণার দ্বাদশ বছরে, জুন থেকে জুলাই মাসে গবেষকরা ক্যালিফোর্নিয়ার গ্রাউন্ড কাঠবিড়ালি এবং ভোলের (এক ধরনের ছোটো ইঁদুর) মধ্যে ৭৪টা মিথস্ক্রিয়া রেকর্ড করেন, যার মধ্যে ৪২ শতাংশ ক্ষেত্রে কাঠবিড়ালি সক্রিয়ভাবে এই ছোটো ইঁদুর শিকার করেছে।
আগে জানা ছিল ৩০ টা প্রজাতির কাঠবিড়ালি সুযোগ পেলে মাংস খায়, যা মূলত ছোটো মাছ বা পাখি। কিন্তু এই আচরণ মৃত প্রাণী খাওয়া নাকি সক্রিয় শিকারের ধরন তা স্পষ্ট ছিল না। এই গবেষণা জানাচ্ছে, শিকার করা বেশ সাধারণ এক আচরণ। গবেষকরা দেখেছেন কাঠবিড়ালিরা তাদের শিকারের ওপর অতর্কিত হামলা চালানোর আগে মাটিতে নীচু হয়ে ঝুঁকে পড়ে। আবার প্রায়শই, তারা ভোল অর্থাৎ এই ইঁদুরগুলো তাড়া করে, ধাক্কা মেরে, তাদের ঘাড় কামড়ে ধরে প্রবল ঝাঁকুনি দিয়ে শিকার করে। সমীক্ষায় দেখা গেছে জুলাইয়ের প্রথম দুই সপ্তাহে কাঠবিড়ালিদের মাংসাশী আচরণ সর্বোচ্চ হয়। আইন্যাচারালিস্ট অ্যাপে নাগরিক বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই সময়ে ভোলের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
গবেষকরা জানিয়েছেন, মানুষের কাজের ফলে পরিবর্তিত হয়েছে এমন পরিবেশে র‍্যাকুন, কোয়োটস, স্পটেড হায়েনা, তাদের শিকারের কৌশলগুলো মানিয়ে নিতে পারে। পরিবর্তিত বিশ্বে, মানুষের উপস্থিতির জন্য বাসস্থানের ক্ষতি, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাণীদের ওপর এত চ্যালেঞ্জ আসছে, যা মোকাবিলা করা তাদের পক্ষে খুব দুঃসাধ্য। স্মিথ বলেছেন, তাদের অধ্যয়ন কিছু প্রাণীর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অবিশ্বাস্য নমনীয়তা দেখায়। গবেষকরা দেখতে চাইছেন এই শিকার করার আচরণ কাঠবিড়ালীর পরবর্তী প্রজন্মে বাহিত হয় কিনা। আর এই আচরণ পরিবেশের বাস্তুতন্ত্রে কী প্রভাব ফেলে তা নিয়েও তারা গবেষণা করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 2 =