কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পরে মৃত্যুর অভিজ্ঞতা স্মরণ করছে পুনরুজ্জীবিত কিছু রোগী

কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পরে মৃত্যুর অভিজ্ঞতা স্মরণ করছে পুনরুজ্জীবিত কিছু রোগী

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

হৃৎপিণ্ড স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার এক ঘণ্টা পর, কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) দ্বারা পুনরুজ্জীবিত কিছু রোগীর মৃত্যুর পরে স্পষ্ট স্মৃতিশক্তি ছিল এবং অচেতন অবস্থায় তাদের মস্তিষ্কে চিন্তা ও স্মৃতির সংযোগের একটা প্যাটার্ন লক্ষ্য করা গেছে। এলসেভিয়ার দ্বারা প্রকাশিত রিসাসিটেশন জার্নালে গবেষকরা এই রিপোর্টই করেছেন। এনওয়াইইউ গ্রসম্যান স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষকদের নেতৃত্বে ২৫ টি মার্কিন এবং ব্রিটিশ হাসপাতালের সহযোগিতায় গবেষকরা তুলে ধরছেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার পরও আবার বেঁচে যাওয়া কিছু ব্যক্তি সেই সময়ে আপাতদৃষ্টিতে অচেতন অবস্থায় ঘটে যাওয়া ঘটনার স্পষ্ট অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সত্ত্বেও, গবেষণার অন্তর্গত ৫৬৭ জন রোগী যারা হাসপাতালে সিপিআর পেয়েছিল, তাদের মধ্যে ১০%- এরও কম রোগী হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ছাড়া পেয়েছে। তবে বেঁচে থাকা রোগীদের ১০ জনের মধ্যে ৪ জন, সিপিআর-এর সময় অল্প মাত্রায় চেতনা ফিরে পেয়েছে যা স্ট্যান্ডার্ড ব্যবস্থা দ্বারা ধরা পড়েনি। সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে যে সব রোগীদের মস্তিষ্কের মনিটরিং বা নিরীক্ষণ করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে প্রায় ৪০% রোগীর সিপিআর-এর এক ঘন্টার মধ্যে মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ “ফ্ল্যাটলাইন” অবস্থা থেকে স্বাভাবিক বা প্রায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। ইইজি একটি প্রক্রিয়া যেখানে ইলেক্ট্রোডের সাহায্যে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ রেকর্ড করা হয়। এই ইইজি-তে রোগীদের উচ্চতর মানসিক ক্রিয়াকলাপের সাথে যুক্ত গামা, ডেল্টা, থিটা, আলফা এবং বিটা তরঙ্গের স্পাইক দেখা গেছে। গবেষকদের মতে বেঁচে থাকা ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে সচেতনতার সঙ্গে স্পষ্ট অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন যেমন- শরীর থেকে বিচ্ছিন্নতার উপলব্ধি, ব্যথা বা কষ্ট ছাড়াই ঘটনা পর্যবেক্ষণ করা এবং তাদের কর্ম ও সম্পর্কের অর্থপূর্ণ মূল্যায়নের উপলব্ধি। এই ঘটনা বা অভিজ্ঞতাকে হ্যালুসিনেশন, বিভ্রম, স্বপ্ন বা সিপিআর-প্ররোচিত চেতনা থেকে আলাদা বলে মনে করেছেন গবেষকরা। শৈশব থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমস্ত সঞ্চিত স্মৃতির স্পষ্ট স্মরণ ও তা নৈতিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করার এই প্রক্রিয়া, যা সম্মিলিতভাবে ‘ডিসইনহিবিশন’ হিসাবে পরিচিত, “বাস্তবতার নতুন মাত্রা” দিতে সক্ষম। যদিও এই ঘটনার বিবর্তনীয় উদ্দেশ্য জানা নেই তবে এটি কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হলে কী ঘটে তার একটি পদ্ধতিগত অন্বেষণের দরজা খুলে দেয়। চিকিত্সকদের আগেই ধারণা ছিল যে হৃৎপিণ্ডে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হওয়ার প্রায় ১০ মিনিট পরে মস্তিষ্ক স্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হয়, তবে এই গবেষণা দেখিয়েছে যে মস্তিষ্ক সিপিআর পর্যন্ত বৈদ্যুতিক পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখাতে পারে। এই গবেষণা দেখায় যে এই স্মৃতি এবং মস্তিষ্কের তরঙ্গের পরিবর্তন তথাকথিত কাছাকাছি-মৃত্যুর অভিজ্ঞতার লক্ষণ হতে পারে। ডাঃ পার্নিয়ার মতে এই অভিজ্ঞতা মৃত্যুর সাথে সাথে মানুষের চেতনার একটি বাস্তব, অথচ খুবই স্বল্পভাবে বোধগম্য একটা দিকের আভাস দেয়। এর ফলে হার্ট পুনরায় চালু করতে বা মস্তিষ্কের আঘাত প্রতিরোধ করার জন্য নতুন পদ্ধতি পরিচালনা করতে এবং প্রতিস্থাপনের প্রভাব দেখতে সাহায্য করবে।