কার্বন অপসারণের সম্ভাব্য পথ

কার্বন অপসারণের সম্ভাব্য পথ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৫ এপ্রিল, ২০২৫

কার্বন ডাই অক্সাইড এক বিরাট উদ্বেগের কারণ। বিশ্ব উষ্ণায়ন কমাতে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন রুখতে বহু দেশ সচেষ্ট হলেও, সেই চেষ্টা যথেষ্ট নয়। বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষিত হয়ে পৃথিবীপৃষ্ঠের গভীরে প্রবেশ করে- এই বিষয়টি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে বিশেষজ্ঞদের। নেদারল্যান্ডের টুয়েন্টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কো ডি পাওলি এবং টিইউ উইয়েনের ইনস্টিটিউট অফ ফ্লুইড মেকানিক্স অ্যান্ড হিট ট্রান্সফার এই প্রকৌশল নিয়ে কাজ করছেন।
কার্বন ডাই অক্সাইড, পৃথিবীপৃষ্ঠের নীচে প্রবেশ করলে শুধু যে অদৃশ্যই হয় তা নয়, এটি ভূগর্ভস্থ শিলাগুলিতে একটা জায়গা দখল করে এবং ভূগর্ভস্থ জলের সঙ্গে মিশে যায়। এই প্রক্রিয়াটা শুনতে যতটা সহজ, বোঝা ততটাই জটিল। বিশুদ্ধ কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব জলের তুলনায় কম অথচ জলে দ্রবীভূত হওয়ার পর এর ঘনত্ব বদলে যায়। কার্বন-সমৃদ্ধ জল ভারী হয়ে গেলে ভূপৃষ্ঠের দিকে ভাসমান হওয়ার পরিবর্তে, গর্ভ থেকে আরো নিচে তলিয়ে যায়। অভ্যন্তরীণ ডুবন্ত গতির মাধ্যমে তখন এই তরলের স্তর, মাটির নিচে আটকা পড়ে যায়। পাথরের স্তরের নিচে কার্বন ডাই অক্সাইড আটকে রাখার এই কৌশলকেই বিশেষজ্ঞরা একটি ‘বাস্তব সুযোগ’ হিসাবে দেখছেন। দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু ঝুঁকি কমাতে এই কৌশলই বিশেষ সহায়ক হবে। “এই ধরনের ভূতাত্ত্বিক পরিস্থিতি বিরল নয়”, মন্তব্য করেছেন গবেষক ডি পাওলি । ভূগর্ভস্থ জল ধরে রাখার জন্য একটি ছিদ্রযুক্ত স্তরের উপরে একটি মোটা এবং তুলনামূলক অভেদ্য ঢাকনা থাকতে হবে। কার্বন ডাই-অক্সাইড সম্পূর্ণরূপে দ্রবীভূত হয়ে নিচের দিকে স্থানান্তরণ শুরু না হওয়া পর্যন্ত, এটিকে যদি একটি নিরাপদ স্থানে রাখা যায় তাহলেই কেল্লা ফতে! কার্বন সংরক্ষণের জন্য ইতিমধ্যেই বেশ কিছু স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে সমুদ্রের তলদেশের অঞ্চলগুলিও রয়েছে, রয়েছে অকেজো তৈল ক্ষেত্র এবং লবণাক্ত জলধারগুলি।
এক্ষেত্রে দেখার বিষয় হল, কার্বন-ভরা জল যখন তার ক্ষুদ্র পথগুলি দিয়েও প্রবেশ করে তখন শিলা কিভাবে তাতে প্রতিক্রিয়া জানায়। কিছু শিলা রাসায়নিকভাবে দ্রবীভূত হতে পারে আবার কিছু শিলা স্থানান্তরিত হয়ে নতুন পথ তৈরি করতে পারে। অপরদিকে অন্যগুলো অক্ষত থাকে, কার্বন-বোঝাই জলকে আরো শক্ত করে আটকে দেয়। এইসব রাসায়নিক পরিবর্তন শিলাকাঠামোকে শক্তিশালী করে নাকি দুর্বল করে, তা নির্ণয় করার জন্য গবেষকরা উন্নত কৌশল ব্যবহার করেছেন। উদ্দেশ্য, কার্বনের স্থায়ী সংরক্ষণ পরিকল্পনায় অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি এড়ানো।
সাশ্রয়ী কার্বন সংরক্ষণের জন্য জন্য এই আচরণকে কাজে লাগানোর উপায় খুঁজছেন প্রকৌশলীরা। কার্বন ডাই-অক্সাইড ভূগর্ভস্থ জলের সাথে মিলিত হবে, তারপর সেই ভারী তরলটি সম্ভাব্য ফাটল থেকে দূরে এবং গভীরে একটি স্থিতিশীল অঞ্চলে পরিণত হবে – এই হলো লক্ষ্য। দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ থেকে বোঝা যাবে প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে নিরূপণ করা গেল কিনা ! এমনকি বড় বড় ভূকম্পনও যাতে নিমজ্জিত তরলটিকে ভূপৃষ্ঠে ফিরিয়ে না আনতে পারে সেরূপ ব্যবস্থা নিতে হবে। গবেষকদের গণনা ইঙ্গিত দেয়, সময়ের সাথে সাথে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কার্বন ধরে রাখার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। এই গবেষণায় কার্বন-সমৃদ্ধ জল এবং শিলাগুলির রাসায়নিক বিক্রিয়ার সূক্ষ্ম আচরণ পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভারী তরল কত দ্রুত নিচের দিকে যায় এবং স্থানভেদে কিভাবে পরিবর্তিত হয়। এভাবে, নিছক অনুমানের উপর নির্ভর করে নয় বরং সঠিক তথ্যর মাধ্যমে ভবিষ্যতের কার্বন সংরক্ষণ পরিকল্পনাগুলি পরিচালিত করা যাবে। সারা বিশ্ব জুড়ে কার্বন সংরক্ষণের ব্যাপারে এগিয়ে আসছে বিভিন্ন রকমের সরকারি বেসরকারি প্রকল্প । ভূতত্ত্ব, ফ্লুইড বলবিদ্যা এবং নিরাপদ কার্বন সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে যাবতীয় জ্ঞান যদি একে অপরের সাথে ভাগ করে নেওয়া যায়, তাহলে কার্বন সম্পর্কিত সমস্যা অনেকটাই সমাধানের পথ খুঁজে পাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × two =