কিছু ব্যক্তি দীর্ঘস্থায়ী সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন

কিছু ব্যক্তি দীর্ঘস্থায়ী সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২১ অক্টোবর, ২০২৩

কোভিডে সংক্রামিত অন্তত ১০ শতাংশ ব্যক্তির ক্ষেত্রে দেখা যায় কোভিড ভাইরাসের লক্ষণ, সংক্রমণের পর চার সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে থাকে। ৭৭০ মিলিয়নেরও বেশি সংক্রমণ করার পাশে, “লং কোভিড” নামে পরিচিত কোভিডের দীর্ঘমেয়াদী ছাপ কয়েক মিলিয়ন মানুষের মধ্যে পাওয়া যায়। লং কোভিড বা দীর্ঘ কোভিডে ২০০টিরও বেশি লক্ষণ অধ্যয়ন করা হয়েছে, যার মধ্যে সাধারণ ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট এবং বৌদ্ধিক অসুবিধা যেমন স্মৃতির সমস্যা বা মস্তিষ্কের ধোঁয়াশা রয়েছে।
গবেষকরা তিনটি গোষ্ঠীর ১০০০০ জনেরও বেশি মানুষকে ১৬ টি লক্ষণ সম্পর্ক রিপোর্ট করতে বলেছেন যা সাধারণত দীর্ঘ কোভিডে হয়, যেমন ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট, ব্যথা এবং মাথা ঘোরা। এই তিন গোষ্ঠীর ব্যক্তিরা হলেন হল যাদের কোভিড হয়েছিল, বা যাদের তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ হয়েছিল কিন্তু কোভিড নয়, এবং তৃতীয় গোষ্ঠী হল যাদের এধরনের কোনও সংক্রমণ হয় নি। চার সপ্তাহেরও বেশি আগে সংক্রামিত হওয়া ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে গবেষকরা তিনটি গোষ্ঠীর মধ্যে এই দীর্ঘমেয়াদী লক্ষণগুলি দেখেছেন, ও তার তুলনা করেছেন। সংক্রামিত হওয়ার আগে তাদের সাধারণ স্বাস্থ্য এবং তাদের শ্বাসকষ্ট ছিল কিনা তাও তারা বিবেচনা করেছেন। গবেষকদের অনুসন্ধানগুলি অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ যেমন সর্দি, ফ্লু বা নিউমোনিয়া থেকে, লং কোল্ড বা দীর্ঘমেয়াদী সর্দি কাশি অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়। দীর্ঘ সর্দির কিছু সাধারণ লক্ষণ হল কাশি, পেটে ব্যথা এবং ডায়রিয়া। এই লক্ষণগুলি গড়ে সংক্রমণের ১১ সপ্তাহ পরে রিপোর্ট করা হয়েছিল।
গবেষকদের এমন কোনো প্রমাণ পাননি যে দীর্ঘ সর্দি-কাশির লক্ষণগুলির তীব্রতা বা সময়কাল দীর্ঘ কোভিডের মতো। প্রকৃতপক্ষে, দুটি গ্রুপের রিপোর্ট করা লক্ষণগুলির মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হল যারা কোভিডে আক্রান্ত ছিলেন, তারপর সুস্থ হয়েছেন তাদের হালকা মাথা ব্যথা বা মাথা ঘোরা এবং স্বাদ এবং গন্ধের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই ফলাফলগুলি কেবল মানুষের জীবনে দীর্ঘ কোভিডের প্রভাব নয়, অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ নিয়েও জানায়। শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের পরে দীর্ঘস্থায়ী লক্ষণ কোনো নতুন ঘটনা নয়। আগের দুটি করোনভাইরাস, সার্স ও মার্স প্রাদুর্ভাবে আক্রান্ত হওয়ার পর যারা সুস্থ হয়েছেন, তাদের অধ্যয়ন করে দেখা গেছে, ফুসফুসের কার্যকারিতা, জীবনযাত্রার মান এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়েছে। আবার ইনফ্লুয়েঞ্জা এ-তে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কিছু ব্যক্তি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার অন্তত দুই বছর পর শ্বাসকষ্ট ও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন এমনও দেখা গেছে।
তবে এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ গবেষণায় গুরুতর রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে, যা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো গুরুতর। যাদের রোগের তীব্রতা কম গুরুতর তাদের মধ্যে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। প্রাথমিক সংক্রমণের সময় সমস্ত স্তরের লোকেদের মধ্যে অধ্যয়ন করে দেখা গেছে লং কোভিডের বা দীর্ঘমেয়াদী কোভিডের প্রবণতা রয়েছে। তবে গবেষকরা দেখেছেন কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে যেমন কোভিডের সুদূরপ্রসারী ছাপ আছে, তেমন কিছু ব্যক্তি শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণেও নানা ধরনের দীর্ঘমেয়াদী সর্দি, কাশি, অন্যান্য অসুস্থতার শিকার হচ্ছেন। আমাদের দেশে শীতকাল আসতে চলেছে, তাই নিজেদের সুস্থ রাখার চেষ্টা করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty + eleven =