কী দেখছি, কেন দেখছি

কী দেখছি, কেন দেখছি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২১ এপ্রিল, ২০২৫

দেখা মানে কি কেবল অক্ষিপটের ওপর আলো এসে পড়া? নতুন গবেষণা বলছে, না, তা নয়। এর সঙ্গে কী উদ্দেশ্যে দেখছি তার সম্বন্ধ আছে। আমরা কেবল একটা আকার দেখি না, তার ওপর একটা অর্থ আরোপ করি। কলম্বিয়া ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রফেসর নাট্টিডা রুংরত সামীতা উইমানা-র পরিচালনায় এ বিষয়ে গবেষণা চলছে। পরীক্ষায় গবেষকরা এমন কতকগুলো বিমূর্ত আকার সৃষ্টি করলেন যারা দুটি মাত্রা ধরে স্বতন্ত্র হয়ে যায়। এবার এফ এম আর আই স্ক্যানিংয়ের সময় অংশগ্রহণকারীদের বলা হল ওই আকারগুলিকে বর্গে বর্গে সাজাতে। কিন্তু সাজানোর নিয়মগুলো ক্রমাগত বদলাতে লাগল। কোথাও কোথাও বর্গগুলির সীমানার আকার সোজা সরল, কোথাও বা তা দৃষ্টিপাল্লা বরাবর জটিলভাবে বেঁকে বেঁকে যায়। একবার যে-আকারটাকে এই বর্গে দেখা গেল, অন্যবার সেটাকেই অন্য বর্গে দেখা গেল। অংশগ্রহণকারীদের খুব তাড়াতাড়ি এই অদলবদলগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হল। নিয়ম বদলে বদলে যাওয়ার এই পরিপ্রেক্ষিতে গবেষকরা অনুসরণ করতে পারলেন একই চিত্ররূপের ব্যাখ্যা যখন অন্যভাবে দিতে হয় তখন মস্তিষ্ক কীভাবে সাড়া দেয়। তাঁরা দেখলেন কোন নিয়মটা এখন চালু রয়েছে সেটা বিচার করেই মস্তিষ্কের প্রাথমিক দর্শন অঞ্চলগুলো নিজেদের কর্মকাণ্ড বদলে নিল, যদিও আকারগুলো কিন্তু বদলাল না। মস্তিষ্কবল্কলের দৃষ্টি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের কর্মকাণ্ডে সবচেয়ে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে যখন আকারগুলো কোনো একটা বর্গের সীমানার কাছাকাছি থাকে। এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়াই সবচেয়ে কঠিন, কেননা আকারগুলো দ্ব্যর্থব্যঞ্জক, তারা যেকোনো বর্গেই স্থান পতে পারে। এইসব ক্ষেত্রেই মস্তিষ্ক সবচেয়ে ধারালোভাবে প্রভেদগুলো বুঝতে পারে।
এক কথায় বললে, দৃষ্টি-সিস্টেমটা কেবল যে পর্যবেক্ষণ করে তাই নয়, সমস্যা সমাধানেও সাহায্য করে। যে-জায়গাটা স্পষ্ট করে দেখা বেশি জরুরি মস্তিষ্ক সেটাকেই আগে স্পষ্ট করে দেখে। কিনার, বক্ররেখা, প্রতিসাম্য এই সব সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যকে মস্তিষ্ক এই মুহূর্তে কোনটা প্রাসঙ্গিক তা বুঝে নিয়ে আগে প্রক্রিয়াকরণ করে।
এই ধরণের নমনীয় পুনঃ-বর্গীকরণের ব্যাপারেইসবচেয়ে অগ্রসর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও খুব অসুবিধায় পড়ে। কৃ বু-র অধিকাংশই প্রত্যক্ষকরণ (পার্সেপশন) আর সিদ্ধান্তগ্রহণকে দুটি স্বতন্ত্র ধাপ বলে গণ্য করে। কিন্তু এই গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রত্যক্ষকরণ একটা চলমান ব্যাপার। করণীয় কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী তা বেঁকেচুরে গিয়ে নানাবিধ নিয়মের মধ্যে অনায়াস উত্তরণ ঘটায়, এমনকি যখন প্রেরিত তথ্য অপরিবর্তিত থাকে তখনও। এই অন্তর্দৃষ্টি কাজে লাগিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নকশা হয়তো পালটানো হবে যা অপ্রত্যাশিত পরিপার্শেও কাজ করতে পারবে। এই নমনীয়তা ভেঙে পড়লে বোধবুদ্ধির যে সমস্যা দেখা দেয় সেগুলির অনুধাবনে সহায়ক হবে তা। অটিজম প্রভৃতি যেধরনের মানসিক সমস্যায় একটি মানসদশা থেকে অন্যটিতে সরে যেতে অসুবিধা হয়, ভবিষ্যতে হয়তো অভিযোজন-ক্ষমতা বাড়িয়ে তাদের চিকিৎসায় সুফল পাওয়া যাবে। নেচার কমিউনিকেশন্‌স-এ এ গবেষণার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × one =