
মানুষ একে অপরের সাথে কথা বলার সময় চোখ পিটপিট করলে অন্য ব্যাক্তিটিও পাল্টা চোখ পিটপিট করে। এই সূক্ষ্ম অমৌখিক ভাববিনিময় থেকেই বন্ধন তৈরি হয়।সম্প্রতি রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্সে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র অনুযায়ী কুকুররাও মানুষের মতো অজান্তেই সংযোগ স্থাপনের জন্য দ্রুত চোখ বন্ধ করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে পশু আচরণবিদ মার্টিনা ফ্রান্সেসকোনি বলেছেন, কুকুরেরা হয়তো এত সূক্ষ্মভাবে একে অপরের সাথে সমন্বয় সাধন করছে যা আমরা পুরোপুরি বুঝতে পারি না।
কুকুররা অন্যান্য কুকুর এবং মানুষের চারপাশে থাকলে উত্তেজনা কমানোর জন্য আরও বেশি করে চোখ পিটপিট করে। তারা হাই তোলা ও খেলার ভঙ্গির মতো মুখের ভাবও অনুকরণ করে,যা থেকে বোঝা যায় তারা যোগাযোগ এবং বন্ধনের জন্য মুখের অনুকরণ করে। গবেষক কিয়ারা ক্যানোরি মনে করেছেন চোখ পিটপিট করাও হয়তো এই অনুকরণের অংশ।
কুকুরের প্রতিক্রিয়া অনুসন্ধান করার জন্য গবেষকরা কয়েকটি ১২ সেকেন্ডের ভিডিও তৈরি করেছেন। তাতে একটি টেরিয়ার, একটি ককার স্প্যানিয়েল, ও একটি বর্ডার কোলি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে একটি খেলনা বা খাবারের দিকে মনোযোগী ছিল। কতকগুলি ভিডিওতে কুকুরগুলো চোখ পিটপিট করছিল, কতকগুলোয় করছিল না। আবার অন্য কয়েকটি ভিডিওতে কুকুরেরা নাক চেটে আগ্রহ প্রকাশ করছিল। গবেষকরা এই ছোট ছোট ভিডিওগুলো একত্রিত করে ৭১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও বানিয়েছিলেন । চোখ পিটপিট করা বা নাক চাটার ভিডিওগুলোতে, এই নড়াচড়াগুলো প্রতি ৪ সেকেন্ড একবার করে ঘটছিল। এরপর গবেষকরা ৫৪টি পোষা কুকুরকে একটি বড় স্ক্রিনে এলোমেলোভাবে ভিডিও গুলো দেখান ।গবেষকরা কুকুরের মানসিক প্রতিক্রিয়া মূল্যায়ন করার জন্য হার্ট মনিটর পরিয়ে দিয়েছিলেন ও চোখের পলক এবং অন্যান্য আচরণ দেখার জন্য ভিডিও করেছিলেন ।
অন্যান্য ধরণের ভিডিওর তুলনায় চোখ পিটপিট করার ভিডিও দেখার সময় বেশিরভাগ কুকুরই গড়ে ১৬ শতাংশের বেশি চোখ পিটপিট করেছিল।
গবেষকরা মনে করেন কুকুরগুলি সম্ভবত চোখের পলক ফেলা অনুকরণ করছে, ঠিক যেমন মানুষ কখনও কখনও অচেতনভাবে একে অপরের অনুকরণ করে। তারা বলেন কুকুরগুলি ইচ্ছাকৃতভাবে চোখের পলক ফেলছে না,এটি কেবল একটি অচেতন প্রতিক্রিয়া। কুকুরগুলি স্ক্রিনে চোখের পলক ফেললে কত দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখায় তা এখনো গবেষকরা জানেন না। এটি বের করার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।ফ্রান্সেসকোনি বলেন, কুকুররাও ইচ্ছাকৃতভাবে একে অপরের সাথে কথা বলার জন্য চোখের পলক ফেলে। তিনি লক্ষ্য করেন ভিডিও দেখার সময়
প্রাণী গুলির মুখে বা হৃদস্পন্দনে কোন উদ্বেগের লক্ষণ দেখা যায়নি। ভিডিওতে কুকুরকে নাক চাটতে দেখে কুকুররা নিজের নাক নিজে চাটত না। তবে, তাদের চোখের সাদা অংশ বেশি দেখা যেত।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন কুকুররা যখন সত্যিই উত্তেজিত থাকে অথবা ভালো বা খারাপ কোন তীব্র আবেগ অনুভব করে তখন এই প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি। প্রাণীদের যোগাযোগের প্রক্রিয়া জটিল এবং তা বোঝা অত্যন্ত কঠিন। আমরা প্রায়শই প্রাণীদের নানা ধরনের সংকেতের অর্থ কী, তা নিয়ে অনুমান করি। কিন্তু এই গবেষণাটি প্রমাণ করে প্রাণীদের আচরণ সম্পর্কে আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রাণীদের সত্যিকার অর্থে বুঝতে গেলে আরও ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।