
মানবদেহের ক্ষতিগ্রস্ত কোষকলা বা অঙ্গ মেরামত করার স্বপ্ন বিজ্ঞানীদের অনেকদিনের। এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে কাজ করছেন এমআইটি ও ইতালির পলিমি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। সেই স্বপ্ন পূরণের পথে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো ত্রিমাত্রিক বায়োপ্রিন্টিং প্রযুক্তি। প্রযুক্তিটি প্রচলিত ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারের মতোই, তবে এখানে কালি হিসেবে ব্যবহার করা হয় জীবন্ত কোষ, বায়ো-জেল আর বাড়বৃদ্ধির অনুকূল উপাদান। এগুলি ব্যবহার করে স্তরের ওপর স্তর বসিয়ে তৈরি হয় জীবন্ত কোষকলার মতো ত্রিমাত্রিক কাঠামো । এ ধরনের কৃত্রিমভাবে তৈরি কোষকলা রোগের মডেল তৈরি, ওষুধ আবিষ্কার এবং শরীরে প্রতিস্থাপনযোগ্য গ্রাফট তৈরিতে বিপুল সম্ভাবনা রাখে।
কিন্তু একটি বড় সমস্যা এতদিন পথ আটকে রেখেছিল। প্রিন্টিংয়ের সময় কোনো ত্রুটি ঘটছে কি না, সেটি আগেভাগে বোঝার উপায় ছিল না। প্রিন্টিংয়ের সময় ত্রুটি নিয়ন্ত্রণ বা “প্রসেস কন্ট্রোল” ব্যবস্থা না থাকায় কখনো বেশি বায়ো-ইঙ্ক জমে যাচ্ছিল, কখনো-বা কম পড়ছিল। ফলে তৈরি কোষকলার মানে অসমতা আসছিল, আর অপচয় হচ্ছিল মূল্যবান উপকরণের।
এ সমস্যার সমাধান খুঁজে পেয়েছেন তরুণ গবেষক রিতু রমন। ইতালির বিয়াঙ্কা কোলোসিমোর সঙ্গে মিলে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডেটা মাইনিংকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা তৈরি করেছেন এক অভিনব মনিটরিং প্রযুক্তি, যা প্রিন্টিং প্রক্রিয়াকে করে তুলবে অনেক বেশি উন্নত , কার্যকর ও নির্ভুল। এই পদ্ধতিতে প্রিন্টিং চলাকালীন একটি ছোট ডিজিটাল অণুবীক্ষণ প্রতিটি স্তরের উচ্চ-রেজোলিউশন ছবি তোলে। এরপর কৃ বু-ভিত্তিক সফটওয়্যার সেই ছবিটি ডিজাইনের সঙ্গে মেলায়। কোথাও বেশি বায়ো-ইঙ্ক জমেছে নাকি কম পড়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা শনাক্ত করা যায়। ফলে গবেষকরা দ্রুত প্রিন্ট পরিমানক পরিবর্তন করে সঠিক গঠন পেতে সক্ষম হন। সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো এই পুরো সিস্টেমটির খরচ ৫০০ ডলারেরও কম। অর্থাৎ, দামী যন্ত্রপাতির প্রয়োজন নেই, যেকোনো সাধারণ ত্রিমাত্রিক বায়োপ্রিন্টারে এটি সহজে বসানো যাবে। ইতিমধ্যেই এমআইটির দ্য শেড গবেষণাগারে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। গবেষকদের মতে, এটি শুধু মনিটরিং উপকরণ নয়, এটি উন্নত প্রসেস কন্ট্রোলের প্রথম ধাপ। ভবিষ্যতে এটি কোষকলা প্রিন্টিংয়ে স্বয়ংক্রিয় সমন্বয়, ত্রুটি সংশোধন, এবং উৎপাদন দ্রুততর করার ক্ষমতা এনে দেবে। ফলে কৃত্রিম কোষকলা হবে আরও নির্ভরযোগ্য, টেকসই এবং চিকিৎসায় ব্যবহারের উপযোগী।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, এই অগ্রগতি শুধু বায়োপ্রিন্টিং নয়, পুরো কোষকলা ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রেই বিপ্লব ঘটাবে। এর ফলে আঘাত সারানো, জটিল রোগ নিরাময়, এমনকি ভবিষ্যতে মানব অঙ্গের ক্ষতিগ্রস্ত কোষকলা সহজেই প্রিন্ট করে চিকিৎসকেরা নতুন একটা প্রতিরূপ তৈরি করে ফেলতে পারবেন । সেই দিন আর হয়তো খুব বেশি দূরে নয় । আজকের এই গবেষণাই আমাদের সেই স্বপ্নের পথে একটু একটু করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
সূত্রঃ Modular and AI diven insitu monitoring platform for realtime process analysis in embedded bioprinting by Giovanni Zanderigo, Ferdows Afgagh et.al;(15.09.2025).
DOI: 10.1016/j.device.2025.100927.