
কৃত্রিমভাবে সংশ্লেষিত উৎসেচক (এনজাইম) বানাতে পারলে নতুন ধরনের ওষুধ বা উৎপাদন-শিল্পক্ষেত্রের প্রয়োজনীয় রাসয়নিক পদার্থ তৈরির পথ খুলে যাবে। কিন্তু এতদিন কম্পিউটার অ্যালগরিদ্মের সাহায্যে উৎসেচকের নকশা বানানোর প্রয়াস খুব সফল হয়নি। সম্প্রতি ইজ্রায়েলের রেহোভোট-এর ভাইজমান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের কম্পিউটেশনাল প্রোটিন নকশার গবেষক সারেল ফ্লেশমান একটা নতুন পরিমার্গ অনুসরণ করে এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছেন।
ফ্লেইশমান ও তাঁর সহকর্মীরা প্রকৃতিতে মেলে না এমন রাসায়নিক বিক্রিয়ার সাহায্য নিয়েছেন, যার নাম ‘কেম্প এলিমিনেশন”। এতে কতকগুলি ধারকমাধ্যমে (সাবস্ট্রেট) কার্বন পরমাণু থেকে একটি প্রোটন সরিয়ে ফেলা হয়। শুরুতেই তাঁরা প্রকৃতিতে প্রাপ্ত একদল উৎসেচকের একটা তালিকা বানিয়ে নিলেন। তারপর কম্পিউটারের সাহায্যে তাদের প্রোটিন পরম্পরাগুলোকে কয়েকটি টুকরোয় ভেঙে নিলেন। টুকরোগুলোকে এবার ঝাঁকিয়ে নিয়ে পুনর্মিলিত করলেন এমন এক বিন্যাসে যেখানে সবকটি সম্ভাব্য সজ্জাই উপস্থিত। এই বিন্যাসগুলিকে এবার কম্পিউটার অ্যালগরিদ্মে ফেলা হল। এই অ্যালগরিদ্মগুলি প্রোটিনের পরমাণুগুলো কেমন আচরণ করবে তার মডেল ব্যবহার করে পূর্বাভাস দিল কোন কোন বিন্যাস নতুন এনজাইমের জন্য আদর্শ রাসায়নিক ‘মেরুদণ্ড’ গড়ে দেবে। গবেষক দল উৎসেচকের সক্রিয় ক্ষেত্রটিতেও মোচড় মারলেন। সেখানেই রাসায়নিক অনুঘটনের প্রক্রিয়াটি সাধিত হয়। এতদিন জানা ছিল, ওই ক্ষেত্রটির কাছে একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বলয় আকারের কোনো অ্যামিনো অ্যাসিড রাখা আবশ্যিক। কিন্তু অ্যালগরিদ্ম জানাল, অ-বলয়াকার কোনো অ্যামিনো অ্যাসিড ওই জায়গায় রাখলে ফল ভালো হবে। সেইমতো কাজ করেই তাঁরা চমকে গেলেন। ফ্লেইশমান বলেন, “আমি একেবারে তাজ্জব!” শেষ পর্যন্ত যা বেরিয়ে এল তার সঙ্গে প্রকৃতিতে প্রাপ্ত নিকটতম গড়নের উৎসেচকের ফারাক ১৪০টিরও বেশি অ্যামিনো অ্যাসিডের। এর আগে কৃ বু-র (এ আই) সাহায্য নিয়ে যতগুলো অনুরূপ উৎসেচক বানানো গেছে তার থেকে এটা ১০০ গুণ বেশি পটু।
কিন্তু ওঁদের বানানো উৎসেচকটি প্রকৃতিতে প্রাপ্ত বহু উৎসেচকের তুলনায় বড়োই সরল। রাসায়নিক বিক্রিয়ার অনুঘটনের জন্য অনেকগুলি ধাপে তাদের মধ্যে জটিল গঠনগত পরিবর্তন আনা দরকার। ওঁরা এখন চেষ্টা করছেন তাঁদের এই প্রণালীতে রুবিস্কো নামক একটি উৎসেচকের কর্মপটুতা বাড়ানো যায় কিনা তা দেখা। রুবিস্কো সালোকসংশ্লেষের জন্য জরুরি।
এতদিন বিজ্ঞানীরা উৎসেচকরা কীভাবে কাজ করে তার পদার্থবৈজ্ঞানিক বৈশিষ্ট্যটা না বুঝে কেবল তাদের ক্রিয়াপদ্ধতি নকল করেই নতুন উৎসেচক তৈরি করতে চাইতেন। ফ্লেইশমানের সঙ্গে এইখানেই তাঁদের তফাত। প্রোটিনের নকশা বানানোর কাজে কতকগুলো প্রায়োগিক ব্যাপারে কৃ বু এখনও মহামূল্যবান। কিন্তু যেসব প্রোটিন রাসায়নিক বিক্রিয়ার অনুঘটক হিসেবে কাজ করে সেগুলো এত বড় আর এত জটিল যে কৃবু-র পক্ষে তাদের আয়ত্ত করা মুশকিল। সুতরাং পদার্থবিজ্ঞান আর কৃ বু, দুয়ের সম্মিলিত পরিমার্গই শ্রেয়।
নেচার পত্রিকায় ১৮ জুন এই গবেষণার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র: doi: https://doi.org/10.1038/d41586-025-01897-0