কেন্দ্রহীন মহাবিশ্বের প্রসারণ

কেন্দ্রহীন মহাবিশ্বের প্রসারণ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২২ জুন, ২০২৫

বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কোনো কেন্দ্র আছে কি? বহু বছর ধরেই মানুষ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে। কিন্তু আধুনিক পদার্থবিদ্যা বলছে এই ধারণাটি ভুল। ইউনিভার্সিটি অব রোড আইল্যান্ড-এর পদার্থবিদ রব কয়েন পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে, আমাদের মহাবিশ্বের কোনও কেন্দ্র নেই।

এক সময় মনে করা হতো, মহাবিশ্ব স্থির এবং অপরিবর্তনীয়। এমনকি আইনস্টাইনও প্রথমে এই বিশ্বাসই করেছিলেন। কিন্তু যখন জ্যোতির্বিদরা উন্নত টেলিস্কোপ দিয়ে দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলিকে পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করলেন, তখন দেখা গেল যে মহাবিশ্ব আসলে প্রসারিত হচ্ছে। এই পর্যবেক্ষণ থেকে বোঝা গেল, দূরের গ্যালাক্সিগুলো আমাদের থেকে সরে সরে যাচ্ছে এবং যত দূরে, ততই দ্রুত সরে যাচ্ছে।

এই আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের বুঝতে সাহায্য করল যে আইনস্টাইনের সা র্বি ক আপেক্ষিকতার তত্ত্ব একটি প্রসারণশীল মহাবিশ্বকেই সমর্থন করে, যা তিনি ১৯১৫ সালে প্রকাশ করেছিলেন। এ থেকেই বিগ ব্যাং তত্ত্বের জন্ম। এ থেকেই মহাবিশ্বের একটি চলমান ও পরিবর্তনশীল কাঠামোর ধারণা গড়ে ওঠে।

আমরা প্রায়ই ভাবি, যেহেতু মহাবিশ্ব বিস্ফোরণের মতো করে প্রসারিত হয়েছে, তাই অবশ্যই কোনো একটা কেন্দ্র থেকে এই বিস্তার শুরু হয়েছে। কিন্তু এই ধারণা ভুল। বাস্তবে, গ্যালাক্সিগুলো স্থানচ্যুত হচ্ছে না বরং দেশ -কাল নিজেই প্রসারিত হচ্ছে। এর অর্থ হলো, গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যে যে ফাঁকা স্থান আছে, সেটিই বড় হচ্ছে।

জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি একটি চমৎকার তুলনা দিয়েছে — একটি বেলুনের গায়ে বিন্দু আঁকা থাকলে, বেলুনতা ফোলার সঙ্গে সঙ্গে বিন্দুগুলোর দূরত্ব বাড়ে। কিন্তু বিন্দুগুলো বেলুনের উপরেই থাকে, তারা কোথাও চলে যায় না। মহাবিশ্বেরও ঠিক তেমন সর্বত্রই প্রসারণ হচ্ছে, কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে নয়। ফলে আমরা যেদিকেই তাকাই না কেন, মনে হবে আমরা বুঝি কেন্দ্রেই আছি।

আমাদের মহাবিশ্ব তিনটি স্থানিক মাত্রা এবং একটি কালগত মাত্রা নিয়ে গঠিত, অর্থাৎ এটি একটি চতুর্মাত্রিক দেশ -কাল সমন্বিত জটিল বিন্যাসের স্বাভাবিক পরিণতি। ফলে সাধারণ দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা দিয়ে মহাবিশ্বকে বোঝা কঠিন।

কয়েনের এই ব্যাখ্যাটি দ্য কনভার্সেশন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়,পরে সায়েন্স এলার্ট এটি ২০২৫ সালের ১১ জুন পুনঃপ্রকাশ করে।এই উপলব্ধিটি আমাদের সাধারণ বোধের সঙ্গে মেলে না, কিন্তু আধুনিক পদার্থবিদ্যা ঠিক এটিই নির্দেশ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − 13 =