কেন আমরা ভুলে যাই?

কেন আমরা ভুলে যাই?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
কেন আমরা ভুলে যাই?

অনেক সময় আমরা ঘরে ঢুকেও ভুলে যাই কী কারণে ঘরে এসেছি। অথবা কথা বলতে বলতে খেই হারিয়ে ফেলি, ভুলে যাই কী নিয়ে কথা বলছিলাম। বন্ধুদের জন্মদিন মনে থাকে না, চেনা লোকদের নাম হঠাৎ করে ভুলে যাই, যেখানে সেখানে ছাতা, চাবি ভুলে ফেলে চলে আসি। প্রায়ই সবাই মশকরা করে এই ভুলো মন নিয়ে। আমাদের মস্তিষ্ক সাধারণত অগণিত তথ্য, চিন্তাভাবনা এবং কাজের ভারসাম্য বজায় রাখে, তবে কখনও কখনও সেটিও ভুল করে। আমরা কেন ভুলে যাই তা বোঝার জন্য প্রথমে আমাদের স্মৃতি কীভাবে কাজ করে তা বোঝার প্রয়োজন। নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক সুজান জায়েগি বলেন, স্মৃতিতে শুধুমাত্র একটি উপাদান রয়েছে তা নয়, স্মৃতির বিভিন্ন উপাদান রয়েছে এবং সেগুলো বিভিন্ন বৌদ্ধিক প্রক্রিয়ার সাথেও সম্পর্কিত।
এই ক্ষেত্রে, দুটি ভিন্ন ধরনের স্মৃতির কথা বিজ্ঞানীরা বলছেন- দীর্ঘমেয়াদী বা লং টার্ম মেমরি এবং স্বল্প মেয়াদী বা ওয়ার্কিং মেমরি। দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি অনেক বিস্তৃত, বহুমুখী এবং জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বহু সময়ের জন্য মস্তিষ্কে সঞ্চিত থাকে – কয়েক ঘন্টা থেকে পুরো জীবনকাল পর্যন্ত। অন্যদিকে, স্বল্প মেয়াদী স্মৃতি মস্তিষ্কে কয়েক সেকেন্ড বা মিনিটের জন্য সঞ্চিত থাকে। এখন প্রশ্ন হল আমরা কেন ভুলে যাই? প্রথমত, স্বল্প মেয়াদী স্মৃতির ক্ষমতা খুব সীমিত। এই সীমা ঠিক কতটা এবং কীভাবে এর পরীক্ষা করা যায় তা নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে, তবে মনোবিজ্ঞানীদের অনুমান মানুষ স্বল্প মেয়াদী স্মৃতিতে প্রায় চার থেকে সাতটি “খণ্ড” তথ্য – যেমন অক্ষর, অঙ্ক, শব্দ বা বাক্যাংশ ধরে রাখতে পারে। তবে একই সময়ে একই সাথে এই সমস্ত “খণ্ডগুলো” সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পরিবর্তে, মস্তিষ্ক একটি তথ্য থেকে অন্য তথ্যে বিচরণ করে, ফলে তথ্য এলোমেলো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। দ্বিতীয়ত, নতুন তথ্যের জন্য জায়গা করে দিতে মস্তিষ্ক স্বল্প মেয়াদী স্মৃতি থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোকে দ্রুত মুছে ফেলে। একত্রীকরণ নামের এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মস্তিষ্ক সেই স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিগুলো দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিতে রূপান্তরিত করে। ফলে অনেকসময় স্বল্প মেয়াদী স্মৃতি দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিতে রূপান্তরিত হওয়ার আগেই আমাদের সচেতন চিন্তাভাবনা থেকে চলে যায়। স্নায়ুবিজ্ঞানী মিলারের মতে আমাদের মস্তিষ্ক অনেকগুলো কাজ একসাথে করতে পারে না। কোনও জিনিস মনে রাখার জন্য আমাদেরকে অনেক বেশি সচেতন ও সচেষ্ট হতে হয়, মনোযোগ দিতে হয়। আর এই কাজটি করে আমাদের মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স যা শিখন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং যুক্তির সাথে সম্পর্কিত। কখনও যদি কোনও একটি বিষয়ে আমরা মনঃসংযোগ করি তবে মস্তিষ্ক আগের বিষয়ের ট্র্যাক হারিয়ে ফেলে। ঘুমের সময়, বিভিন্ন ওষুধের কারণে বা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের স্বল্প মেয়াদী স্মৃতির কার্যক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। মিলারের মতে স্বল্প মেয়াদী স্মৃতির কার্যক্ষমতা একজন ব্যক্তির কুড়ি বছর বয়সে সবচেয়ে বেশি থাকে এবং মধ্য বয়স থেকে এটি হ্রাস পেতে শুরু করে।