কোভিড ১৯-এর জন্য ভারতে মানুষের আয়ু কমেছে?

কোভিড ১৯-এর জন্য ভারতে মানুষের আয়ু কমেছে?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৫ জুলাই, ২০২৪
কোভিড ১৯

কোভিড-১৯ এর পর তার প্রভাব নিয়ে নানা সমীক্ষা, গবেষণায় নানা দিক উঠে এসেছে। স্বাস্থ্যের ওপর যেমন এর প্রভাব অপরিসীম তেমন বিশ্ব জুড়ে মানুষের গড় আয়ুষ্কালের ক্ষেরেও পরিবর্তন দেখা গেছে। সায়েন্স অ্যাডভান্সেস-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে ভারতে মানুষের গড় আয়ুর ওপর কোভিড১৯ এর প্রভাব দেখা হয়েছে। দেখা গেছে ভারতে মানুষের গড় আয়ু ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ২.৬ বছর কমে গেছে। আর এই কম আয়ুর শিকার বেশি হয়েছেন মহিলা এবং প্রান্তিক সামাজিক গোষ্ঠীর মানুষ৷ সমাজবিজ্ঞান বিভাগ এবং লেভারহুলমে সেন্টার ফর ডেমোগ্রাফিক সায়েন্সের ডক্টর আশিস গুপ্ত এবং অধ্যাপক রিধি কাশ্যপের আন্তর্জাতিক গবেষণা জানাচ্ছে কোভিড ১৯ মহামারী চলাকালীন ভারতে মানুষের আয়ু কমেছে এবং এই আয়ু হ্রাস অসম। সামগ্রিকভাবে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ভারত জুড়ে মৃত্যুহার ১৭% বেশি ছিল, তাতে ভারতে ১.১৯ মিলিয়ন অতিরিক্ত মৃত্যু হয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেমোগ্রাফি এবং কম্পিউটেশনাল সোশ্যাল সায়েন্স গবেষকদের এই মৃত্যুর গণনা ভারতে কোভিড-১৯ মৃত্যুর সরকারি সংখ্যার থেকে প্রায় আট গুণ বেশি, আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান থেকে ১.৫ গুণ বেশি।
গবেষণায় দেখা গেছে ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারীর জন্য কম বয়সী, মহিলা এবং প্রান্তিক সামাজিক গোষ্ঠীর ব্যাপক হারে মৃত্যু হয়েছে। দেখা গেছে ভারতের প্রান্তিক সামাজিক গোষ্ঠীদের আয়ু সুবিধাপ্রাপ্ত সামাজিক গোষ্ঠীর তুলনায় বেশি হ্রাস পেয়েছে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য আগেই প্রান্তিক সামাজিক গোষ্ঠীদের গড় আয়ু কম ছিল, কোভিড-১৯ সুবিধাপ্রাপ্ত গোষ্ঠীর সাথে তাদের আয়ুর পার্থক্য আরও বাড়িয়ে দিয়ে গেল। যেখানে উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের গড় আয়ুষ্কাল ১.৩ বছর কমেছে, মুসলিমদের ক্ষেত্রে এই হ্রাস ৫.৪ বছর, তফসিলি উপজাতিদের ক্ষেত্রে এই হ্রাস ৪.১ বছর। অর্থাৎ কোভিড -১৯ এর জন্য সমস্ত সামাজিক গোষ্ঠীতে আয়ুর ক্ষেত্রে বৈষম্য বেড়ে গেল।
এই সমীক্ষায় দেখা গেছে উচ্চ-আয়ের দেশের প্যাটার্নের বিপরীতে দাঁড়িয়ে প্রায় সমস্ত ভারতীয় সামাজিক গোষ্ঠী ও শ্রেণির মধ্যে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ক্ষতি বেশি দেখা গেছে। কিন্তু উচ্চ আয়ের দেশে মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে অতিরিক্ত মৃত্যুর হার বেশি দেখা গিয়েছে। ভারতে মহিলাদের ৩.১ বছর আয়ু হ্রাস পেয়েছে, যা পুরুষদের আয়ু হ্রাসের তুলনায় এক বছর বেশি। আবার দেখা গেছে উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে আয়ু হ্রাস ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে অধিক। ভারতে প্রায় সমস্ত বয়সের গোষ্ঠীতে আর সবচেয়ে কম বয়সী ও বয়স্কদের মধ্যে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পেয়েছে। কনিষ্ঠ বয়সে অতিরিক্ত মৃত্যুহার হওয়ার কারণ নির্দিষ্ট এলাকার শিশুরা কোভিড-১৯-এর জন্য বেশি সংবেদনশীল ছিল। তার ওপর মহামারী এবং পরবর্তী লকডাউনের পরোক্ষ প্রভাবে অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি এবং জনস্বাস্থ্য পরিষেবায় ব্যাঘাত ঘটে, যার ফল তাদের স্বাস্থ্যের ওপর পড়ে।
কাশ্যপ বলেছেন, জনসংখ্যাগত এবং স্বাস্থ্য সমীক্ষার তথ্য ব্যবহার করে তাদের গবেষণায় মৃত্যুর হার পরিমাপ করার সময় অসমতার উপর ফোকাস করা হয়েছে। তাতে বোঝা গেছে মহামারীর ফলে বিদ্যমান সামাজিক বৈষম্য আরও বেড়ে গিয়ে খারাপ হতে পারে৷ স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে প্রাক-মহামারী লিঙ্গ বৈষম্যের প্রভাব আরও বেড়ে গেছে। এই গবেষণা ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য সংকটের প্রভাব প্রশমিত করার জন্য স্বাস্থ্যের অন্তর্গত সামাজিক নির্ধারকগুলোর ওপর কাজ করে এমন নীতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।