কোয়াণ্টাম কম্পিউটার ও জেনারেটিভ মডেল

কোয়াণ্টাম কম্পিউটার ও জেনারেটিভ মডেল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ জানুয়ারী, ২০২৫

মেশিন লার্নিং-এর ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা হল জেনারেটিভ মডেলের উদ্ভব। জেনারেট করা মানে এক জিনিস থেকে অন্য জিনিস উৎপাদন করা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত এইসব মডেল মানুষের তৈরি বিপুল পরিমাণ বিষয়বস্তু হজম করে তা থেকে এমন কিছু তৈরি করতে পারে যা বুদ্ধিমত্তার পরিচয়বাহী বলে মনে হয়। শুধু লেখা নয়, ছবি, গানের স্বরলিপি এ সবই ওই ‘বিষয়বস্তু’র অন্তর্গত। ধরা যাক কম্পিউটারকে বঙ্কিমচন্দ্রর উপন্যাস ‘খাওয়ানো’ হল। বঙ্কিমচন্দ্র কী ধরনের ভাষা বা অভিব্যক্তি পছন্দ করতেন, কী তাঁর ব্যাকরণের বৈশিষ্ট্য, কী ধরনের শব্দ তাঁর পছন্দ, এক এক পাতায় কতবার কত লাইন পরপর কী ধরনের শব্দ ব্যবহার করতেন সেগুলির পরিসংখ্যান নিল সে। বঙ্কিমচন্দ্রের শৈলী পাঠকের চেনা, কিন্তু এতসব পরিসংখ্যানগত খুঁটিনাটি মনে রাখা মানুষ-পাঠকের কর্ম নয়। এইবার তাকে বলা হল বঙ্কিমচন্দ্রের মতো করে একটা রচনা লেখো তো। সে তখন তার স্মৃতিভাণ্ডার ঘেঁটে প্রচুর শব্দ ও অভিব্যক্তি তুলে এনে, যেসব শব্দ বা অভিব্যক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি তার ভিত্তিতে বঙ্কিমচন্দ্রর ঢঙে একটি রচনা লিখবে। একটি লিখিত বিবরণ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে অতি সুন্দর ছবিও তৈরি করতে পারছে এই জেনারেটিভ মডেল। কী করে এর পটুতা আরও বাড়ানো যায় তা নিয়ে চলছে নানারকম পরীক্ষানিরীক্ষা। অস্ট্রিয়ার ইন্‌সব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা বিভাগের একদল বিজ্ঞানী কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রোগ্রাম করার একটি নতুন মডেল বানিয়েছেন। এই নতুন মডেল ওই একই কাজ করবে, কিন্তু অন্যভাবে। যেসব কোয়ান্টাম ক্রিয়া তাকে সম্পাদন করতে হবে, তার বিবরণের ভিত্তিতে সে কোয়ান্টাম সার্কিট (বর্তনী) তৈরি করবে। কোয়ান্টাম জগতের অদ্ভুত অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যর দরুন এ কাজটা খুবই কঠিন। প্রচলিত মেশিন লার্নিং মডেলগুলোকে এই নতুন পদ্ধতিতে প্রশিক্ষিত করা খুবই শক্ত। কিন্তু নতুন যে-মডেল, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডিফিউশন মডেল’, তাতে এসব অসুবিধা অনেকটাই দূর হবে বলে বিজ্ঞানীদের আশা। এগুলিকে দিয়ে নির্দিষ্ট প্রয়োজন অনুসারে এমন সব সার্কিট বানানো যাবে যা কোয়ান্টাম হার্ডওয়ারের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি খেয়াল রাখবে। এই কোয়ান্টাম কম্পিউটারটি ব্যবহারকারীর নির্দিষ্ট প্রয়োজনসমূহ মেটানোর জন্য কোয়ান্টাম সার্কিট তৈরি করবে, আবার একই সঙ্গে যে-মেশিনে এটিকে চালানো হবে তার কোয়ান্টাম হার্ডওয়ারের বৈশিষ্ট্যগুলির সঙ্গেও খাপ খাইয়ে নেবে। কোয়ান্টাম কম্পিউটারশাস্ত্রে এ এক মস্ত অগ্রগতি। এর খরচও খুব কম। একবার প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করে নিলে এটিকে কাজে লাগিয়ে অনেক কৌতূহলজনক কোয়ান্টাম ক্রিয়ার ব্যাপারে নতুন নতুন অন্তর্দৃষ্টি লাভ করা যাবে। ইন্‌সব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রটি ‘নেচার মেশিন ইন্টেলিজেন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অস্ট্রিয়ার বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা এবং ইউরোপীয় সঙ্ঘর টাকায় এই গবেষণা চলেছে।
সূত্র: “Quantum circuit synthesis with diffusion models” by Florian Fürrutter, Gorka Muñoz-Gil and Hans J. Briegel, 20 May 2024, Nature Machine Intelligence.
DOI: http://10.1038/s42256-024-00831-9