
উত্তর সামুদ্রিক দ্বীপ হেলিগোল্যান্ডে ফেরি যখন থামল লেখক ভাবছিলেন, ১০০ বছর আগে কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যর ভিত্তি রচয়িতা জার্মান বিজ্ঞানী ভার্নার হাইজেনবার্গওকি এভাবেই সমুদ্রপথে বমি করতে করতে করতে পৌঁছেছিলেন? হামবুর্গ থেকে চার ঘণ্টার অপ্রীতিকর যাত্রা শেষে লেখক আসেন একটি বিশেষ সম্মেলনে অংশ নিতে, যেখানে প্রায় ৩০০ জন পদার্থবিজ্ঞানী, এমনকি চারজন নোবেল বিজয়ীও উপস্থিত। আয়োজকরা এটিকে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জন্মদিনের পার্টি হিসেবে উল্লেখ করছেন।
১৯২৫ সালের জুনে মাত্র ২৩ বছর বয়সে হাইজেনবার্গ হেলিগোল্যান্ডে আসেন তাঁর তীব্র হে ফিভার (অ্যালার্জিজনিত সমস্যা) থেকে মুক্তি পেতে। দ্বীপে ঘুমাতে না পেরে তিনি রাত জেগে চিন্তা করতে করতে এমন এক ধারণায় পৌঁছান যা পরবর্তীতে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ভিত্তি হয়ে ওঠে। তিনি উপলব্ধি করেন যে, পরমাণুর ইলেকট্রন কণার গতি বা অবস্থান নয়, বরং তাদের পর্যবেক্ষণযোগ্য রূপান্তর বা ‘জাম্প’-কে বিশ্লেষণ করা উচিত। এই ভাবনার ফলেই ‘ম্যাট্রিক্স মেকানিক্স’ নামে একটি নতুন গাণিতিক পদ্ধতি তৈরি হয়, যা কোয়ান্টাম যুগের সূচনা করে।
তবে হাইজেনবার্গ তখনও বুঝতে পারেননি তার আবিষ্কারের গুরুত্ব। বাড়ি ফিরে তিনি বাবাকে লিখেছিলেন, তার কাজ খুব ভালো এগোচ্ছে না। পরে ম্যাক্স বর্ন ও পাস্কুয়াল জর্ডান তার তত্ত্বকে পরিপূর্ণ রূপ দেন। হেলিগোল্যান্ডের লাল পাথরের খাড়া টিলা, বাতাসের ধাক্কা ও নিস্তব্ধ প্রকৃতি যেন সত্যিই গভীর চিন্তার জন্য উপযুক্ত স্থান।
দ্বীপটির প্রতিটি রাস্তায়, ক্যাফেতে দেখা যায় পদার্থবিজ্ঞানীদের, যারা নিজেদের মধ্যে তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করছেন। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, বিজ্ঞানীদের আলাদা করে চেনা যায়। সম্মেলনের সময়সূচিও অদ্ভুত, সকালের বৈঠক শেষে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিরতি, যাতে অংশগ্রহণকারীরা দ্বীপটি ঘুরে দেখার ও ভাবনার সময় পান।
হেলিগোল্যান্ড শুধু কোয়ান্টাম বিজ্ঞানের জন্য নয়, ঐতিহাসিক ভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। দ্বীপটি একাধিকবার ব্রিটিশ, ডেনিশ ও জার্মানদের মধ্যে হাতবদল হয়েছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক প্রাণী ও পাখির অভয়ারণ্য। এমনকি ১৯৪৭ সালে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় অ-নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণের শিকার হয়েছিল হেলিগোল্যান্ডে এখনো হাইজেনবার্গের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে একটি স্মারকফলক রয়েছে।