কোলেস্টেরল কমলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমে

কোলেস্টেরল কমলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৪ অক্টোবর, ২০২৫

কোলেস্টেরল নামটা শুনলেই আমাদের মাথায় প্রথমেই আসে যে এটি কেবল হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত। অর্থাৎ কোলেস্টেরল মানেই হৃদযন্ত্রের শত্রু। কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে, এই চর্বি-জাতীয় উপাদানটি শুধু হৃদয়ের নয়, মস্তিষ্কের ভবিষ্যতের সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত। এ নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টল এবং কোপেনহেগেন ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল যৌথভাবে পরিচালিত এক বিশাল গবেষণা হয়েছে। ডেনমার্ক, ইংল্যান্ড ও ফিনল্যান্ডের এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে নিয়ে গবেষণা চলেছে। দেখা গেছে, যাদের শরীরে জন্মগতভাবে কোলেস্টেরল কম, তাদের ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আশ্চর্যজনকভাবে কম।

গবেষক দলটি দেখেছেন, কিছু কিছু মানুষের হয়তো এমন জিনগত বৈশিষ্ট্য থাকে যা বিনা ওষুধে স্বাভাবিকভাবেই কোলেস্টেরল কম রাখে। গবেষক ড. লিভ টিবিয়ার্গ নর্ডেস্টগার্ড এই বিশেষ জিনগুলোর সাহায্যে বুঝেছেন কীভাবে কোলেস্টেরল কম থাকলে মস্তিষ্ক রক্ষা পায়।

তাঁরা ব্যবহার করেছেন মেন্ডেলিয়ান র‍্যান্ডোমাইজেশন নামক এক অভিনব গবেষণাপদ্ধতি, যা ওষুধ (যেমন – স্ট্যাটিন বা ইজেটিমাইব) সেবনের প্রভাব অনুকরণ করে কিন্তু খাদ্যাভ্যাস বা ব্যায়ামের মতো জীবনযাত্রার প্রভাব বাদ দেয়। ফলাফলে ছিল বেশ চমক। দেখা গেছে, প্রতি লিটার রক্তে মাত্র ১ মিলিমোল কোলেস্টেরল কমলেই ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমতে পারে প্রায় ৮০% পর্যন্ত।

নন-এইচ ডি এল বা এল ডি এল কোলেস্টেরল হলো সেই ক্ষতিকর চর্বি জাতীয় অংশ যা ধমনীগাত্রে জমে ধমনীর পথ সরু করে দেয় বা একপ্রকার বন্ধ করে দেয়। এরফলে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে এবং মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি নষ্ট করে দেয়।

ড. নর্ডেস্টগার্ড বলেন, যা হৃৎপিন্ডর জন্য ক্ষতিকর, তা মস্তিষ্কের জন্যও সমান ক্ষতিকর।

তাই দেখা গেল যাদের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাদের মস্তিষ্কও বয়সের সঙ্গে ভালো থাকে, সজাগ থাকে।

গবেষকরা HMGCR, NPC1L1,সহ ছয়টি জিন বিশ্লেষণ করেছেন। এগুলিই সেই প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ করে যেগুলোর ওপর জনপ্রিয় স্ট্যাটিন ওষুধ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে কাজ করে । দেখা গেছে, যাদের ক্ষেত্রে এই জিনগুলো স্বাভাবিকভাবে কোলেস্টেরল কমায়, তাদের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকিও কম। বিশেষত রক্তনালীর ক্ষতির সঙ্গে যুক্ত “ভাসকুলার ডিমেনশিয়া”-তে এই প্রভাব সবচেয়ে বেশি।

বর্তমানে কোলেস্টেরল কমাতে স্ট্যাটিন সবচেয়ে জনপ্রিয়, কিন্তু ভবিষ্যতে PCSK9 ইনহিবিটার, CETP ইনহিবিটার, ও ANGPTL4 টার্গেটিং ওষুধ হয়তো মস্তিষ্ক রক্ষার নতুন সৈনিক হয়ে উঠবে। এই নতুন ওষুধগুলোও আশাব্যঞ্জক ফল দেখাচ্ছে।

গবেষকদের মতে, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ যত আগে শুরু হবে, মস্তিষ্ক তত বেশি সুরক্ষিত থাকবে। এমনকি যাদের APOE ɛ4 নামক আলঝেইমার-ঝুঁকিপূর্ণ জিন আছে, তাদের ক্ষেত্রেও কোলেস্টেরল কম থাকলে মস্তিষ্ক সুরক্ষিত থাকে।

অর্থাৎ, এই প্রভাব জিনগত ঝুঁকির বাইরে গিয়ে সারাজীবনের প্রতিরোধক ঢাল হিসেবে কাজ করে।

 

 

সূত্র: Cholesterol-lowering drug targets reduce risk of dementia: Mendelian randomization and meta-analyses of 1 million individuals by George Davey Smith, Børge G. Nordestgaard,et.al; published in the journal Alzheimer’s & Dementia, (08.10.2025).

https://doi.org/10.1002/alz.70638

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 1 =