সম্প্রতি ‘সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া এক গবেষণাপত্রে, একদল গবেষক বলেছেন অন্ত্রে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান তারা পেয়েছেন, যার থেকে DNA নষ্টকারী যৌগিক পদার্থ বেরোয়, যা কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের জন্য দায়ী। এই ব্যাটেরিয়ার উপস্থিতির কারণে ইনফ্ল্যামেটারি বাওয়েল ডিজিজে (IBD) (IBD বলতে আলসারাইটিভ কোলাইটিস এবং ক্রন’স ডিজিজ বোঝায়, যাতে অন্ত্র ও মলদ্বারে ঘা হয় ও জ্বালা করে) আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোলোরেক্টাল ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বেশি। তারা বলেছেন, মর্গানেলা মরগনি নামে একটা ব্যাকটেরিয়া IBD ও কোলোরেক্টাল ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অন্ত্রে প্রভূত পরিমাণে পাওয়া যায়। তারা এই ব্যাকটেরিয়া থেকে একধরনের DNA নষ্টকারী যৌগ বা জিনোটক্সিনের হদিশ পেয়েছেন, এবং নামকরণ করেছেন ‘ইন্ডোলিমাইন্স”।
গবেষকরা DNA নষ্টকারী যৌগিক পদার্থের খোঁজে প্রথমে ১১ জন IBD রোগীর মলের নমুনা নিয়ে ১০০ ধরনের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া চিহ্নিত করেছিলেন। এরপর প্রত্যেকটা ব্যাকটেরিয়ার সাথে DNA দিয়ে তাদের গবেষণাগারে বৃদ্ধি ঘটিয়ে এমন ১৮টা প্রজাতি সনাক্ত করেছিলেন যেগুলো DNA ধ্বংস করে দিয়েছিল। শেষে এই ১৮টা প্রজাতি থেকে যে যে যৌগ বেরোচ্ছে তার প্রত্যেকটা আণবিক স্তরে চিহ্নিত করে, কোনটা DNA নষ্টের জন্য দায়ী তাকে চিহ্নিত করেছিলেন।
গবেষণাগারে পরীক্ষা করে তারা দেখেছেন, ইন্ডোলিমাইন্স DNA -কে নষ্ট করে ফেলছে; পাশাপাশি ইঁদুরের শরীরে কোলোরেক্টাল টিউমার তৈরি করে তা ক্যান্সারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তারা এটাও দেখেছেন, যখন মর্গানেলা মরগনি থেকে ইন্ডোলিমাইন্স তৈরি হওয়া তারা আটকে দিতে পারছেন, তখন ইঁদুরের টিউমার রোধ হচ্ছে। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ও অঙ্কোলজির প্রফেসর, সিন্থিয়া সিয়ার্স বলেছেন আগেও কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের সাথে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছিল, যেমন এসচেরেশিয়া কোলাই-এর কিছু প্রজাতি থেকে কোলিব্যাকটিন নামে জিনোটক্সিন বেরিয়ে DNA নষ্ট করে ইঁদুরের অন্ত্রে টিউমার তৈরি করে। তার মতে গবেষকদের মর্গানেলা মরগনি -র ওপর কাজের ফলে তথ্য ভাণ্ডারে আরো নতুন আণবিক জীব ও কোলন ক্যান্সারের সম্পর্ক যুক্ত হল। ভবিষ্যতে এই সমস্ত কাজের ফলে, মলের নমুনা থেকেই কোন কোন রোগীর কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে তা চিহ্নিত করতে সুবিধা হতে পারে। আবার, কোলন ক্যান্সারের সঙ্গে যুক্ত ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে ক্যান্সারের বিপদ কমানো যেতে পারে। কিন্তু তিনি এও বলেন ব্যাকটেরিয়া, তাদের উপস্থিতি এসব জানা থাকলেও তাদের বৃদ্ধি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা এখনও জানা যায়নি। এর জন্য আণবিক স্তরে আরো কাজ করতে হবে, যাতে রোগীরা সুবিধা পায়।
ইন্ডোলিমাইন্স- এর ওপর কাজ করা গবেষকরা তাদের নিবন্ধে বলেছেন, যে জিনোটক্সিন তারা পেয়েছিলেন, তা আগে চিহ্নিত কোলিব্যাকটিন ছিল না। তাই তারা মর্গানেলা মরগনি – র ওপর মনোযোগ দেন, কারণ এটা IBD ও কোলন ক্যান্সারের রোগীদের শরীরে পাওয়া যায়। সেখান থেকে তারা ইন্ডোলিমাইন্স – এর অস্তিত্ব খুঁজে পান। তার সাথে যে ব্যাকটেরিয়ার জিন ইন্ডোলিমাইন্স তৈরির জন্য দায়ী – ‘অ্যাস্পারটেট অ্যামাইনোট্রান্সফারেজ’ তাকেও তারা চিহ্নিত করেন।
প্রফেসর সিয়ার্স এই নতুন গবেষকদের প্রশংসা করে বলেছেন, এই নতুন গবেষণার সবচেয়ে ভালো দিক হল ইন্ডোলিমাইন্স তৈরি বন্ধ করে ইঁদুরদের মধ্যে টিউমার রোধ করার প্রচেষ্টা। যদিও তিনি মনে করেন, ইঁদুরদের ওপর এই গবেষণার সীমাবদ্ধতা আছে, কারণ মানুষের অন্ত্রে আণবিক জীবের অস্তিত্ব আরো বেশি জটিল। IBD ও কোলোরেক্টাল ক্যান্সারে মর্গানেলা মরগনি–র প্রভাব বোঝা ও তা প্রতিরোধ করার জন্য আরো কাজ করতে হবে।