কোষীয় অঙ্গাণু মাইটোকন্ড্রিয়া আমাদের মস্তিষ্কে ঝাঁপিয়ে পড়ছে

কোষীয় অঙ্গাণু মাইটোকন্ড্রিয়া আমাদের মস্তিষ্কে ঝাঁপিয়ে পড়ছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৮ আগষ্ট, ২০২৪
মস্তিষ্কে

মাইটোকন্ড্রিয়া, কোষের পাওয়ার হাউস নামে পরিচিত। কিন্তু আমাদের সমস্ত কোষের অভ্যন্তরে বাস করলেও, তা অন্যান্য অঙ্গাণুর মতো নয়। প্রাচীন ব্যাকটেরিয়ার সরাসরি বংশধর মাইটোকন্ড্রিয়া একটু অন্যরকম। মাইটোকন্ড্রিয়ার তিন ডজন জিন সহ একটা ছোটো বৃত্তাকার নিজস্ব ডিএনএ স্ট্র্যান্ড রয়েছে। প্রায় ১৫০ কোটি বছর পূর্বে প্রাচীন ব্যাকটেরিয়া আমাদের এককোষী পূর্বপুরুষদের মধ্যে বসতি স্থাপন করেছিল, তার অবশিষ্টাংশ হল মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ। গত কয়েক দশকে গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ মাঝে মাঝে অঙ্গাণু থেকে মানুষের ক্রোমোজোমে “ঝাঁপিয়ে পড়েছে”। মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ কখনও ভাইরাসের মতো বা কখনও জাম্পিং জিনের মতো আচরণ করে। ভাইরাসের মতো এটা জিনোমের কাটা অংশে নিজের ডিএনএ আটকে দেয়। অথবা রেট্রোট্রান্সপোসন নামে পরিচিত জাম্পিং জিনের মতো মানুষের জিনোমের চারপাশে ঘোরাফেরা করে।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরভিং মেডিক্যাল সেন্টারের গবেষণায় দেখা গেছে যে আমাদের মস্তিষ্কের কোষের নিউক্লিয়াসে মাইটোকন্ড্রিয়া তাদের ডিএনএ ঘন ঘন প্রবেশ করায়, আর মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ আমাদের ক্রোমোজোমে একত্রিত হয়ে সম্ভবত কোষের ক্ষতি করে। এই গবেষণা প্রায় ১২০০ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর করা হয়েছে। দেখা গেছে, যাদের মস্তিষ্কের কোষে বেশি মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ সন্নিবিষ্ট হয়েছে তাদের অন্যান্যদের তুলনায় মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আগে মনে করা হত মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ মানুষের জিনোমে পাওয়া বিরল ঘটনা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, একজন মানুষের জীবনে এটা বিভিন্ন সময়ে বারেবারে ঘটতে থাকে, আর এর অস্তিত্ব মস্তিষ্কের কোষে পাওয়া যায়, রক্তকোষে নয়। সন্নিবেশগুলো নিউক্লিয়ার-মাইটোকন্ড্রিয়াল সেগমেন্ট (NUMTs) নামে পরিচিত, যা লক্ষ লক্ষ বছর ধরে আমাদের ক্রোমোজোমে জমা হচ্ছে। যার জন্য আমরা সকলেই আমাদের ক্রোমোজোমে শত শত নিষ্ক্রিয়, ক্ষতিকারক নয় এমন মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ-র অংশ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। এগুলো আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পেয়েছি।
গবেষকদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে পারমাণবিক মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ সন্নিবেশ মূলত মানুষের মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সে একজন ব্যক্তির জীবদ্দশায় বারে বারে ঘটে। তারা আরও দেখেছেন যাদের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সে বেশি NUMT আছে তারা, যাদের কম NUMT রয়েছে তাদের তুলনায় আগে মারা যাচ্ছেন। প্রথমবার এই ধারণা করা হচ্ছে, NUMTs-এর কার্যকরী পরিণতি রয়েছে, যা জীবনকালকে প্রভাবিত করতে পারে। NUMT সঞ্চয় বার্ধক্য, কার্যগত অক্ষমতা ও আয়ুষ্কালে অবদান রাখতে পারে। গবেষকরা মানুষের ত্বকের কোষ কয়েক মাস ধরে পেট্রিডিশে বৃদ্ধি করে দেখেছেন, এই কোষগুলো প্রতি মাসে NUMT জমা করে। আর কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া চাপজনিত কারণে অকার্যকর হয়ে গেলে, এই কোষগুলো চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি দ্রুত NUMTs জমা করে৷ এর থেকে বোঝা যায় চাপ কীভাবে আমাদের কোষের বয়সকে প্রভাবিত করতে পারে।