কোষের সংকেত নিয়ন্ত্রণ-প্রক্রিয়াঃ নতুন অন্তর্দৃষ্টি

কোষের সংকেত নিয়ন্ত্রণ-প্রক্রিয়াঃ নতুন অন্তর্দৃষ্টি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৩ জুলাই, ২০২৫

জোহানেস গুটেনবার্গ ইউনিভার্সিটি মেইনজ (JGU), ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর পলিমার রিসার্চ এবং টেক্সাস ইউনিভার্সিটি অফ অস্টিনের গবেষকরা আণবিক গতির একটি অদৃশ্য রূপ আবিষ্কার করেছেন। যখন তথাকথিত “অতিথি অণু” অর্থাৎ একটি আশ্রিত অণু ডিএনএ পলিমারের ফোঁটায় প্রবেশ করে, তখন তারা এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে পড়ে না। তার বদলে, তারা ফোঁটায় ফোঁটায় স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত সম্মুখবর্তী ( ফ্রন্টাল) তরঙ্গের মাধ্যমে চলাচল করে। নেচার ন্যানোটেকনোলজিতে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রটি কোষ কীভাবে সংকেত নিয়ন্ত্রণ করে সে সম্পর্কে এক গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি দিয়েছে। এটি বুদ্ধিমান জৈব উপাদান, অভিনব ঝিল্লি প্রযুক্তি, প্রোগ্রামেবল ওষুধ সরবরাহ ব্যবস্থা এবং জৈবিক প্রক্রিয়াগুলির জটিল সংগঠনের প্রতিলিপি তৈরি করে এমন কৃত্রিম কোষের বিকাশও ঘটাতে পারে।

অণুগুলি সাধারণত সরল বিস্তারের মাধ্যমে তরল পদার্থের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, এক গ্লাস জলে নীল রঞ্জক যোগ করলে এটি ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে, নরম, ঝাপসা রঙের গ্রেডিয়েন্ট তৈরি করে। কিন্তু ডিএনএ ফোঁটায় অতিথি অণুগুলির আচরণ এই প্যাটার্ন অনুসরণ করে না। কারণ অণুগুলি এমন এক কাঠামোগত এবং নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে চলাচল করে যা চিরাচরিত মডেলের বিপরীত। এটিই অণুর তরঙ্গ বা একটি সচল সীমানার রূপ নেয় । গবেষণা দলটি হাজার হাজার পৃথক ডিএনএ সূত্রর সমন্বয়ে গঠিত ফোঁটা নিয়ে কাজ করেছে, যা জৈব-আণবিক ঘনীভবন নামেও পরিচিত। এই কাঠামোর একটা প্রধান সুবিধা হল, এটি ডিএনএ ক্রম এবং লবণের ঘনত্ব প্রভৃতি পরিবেশগত কারণগুলির মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে তাদের বৈশিষ্ট্যগুলিকে সূক্ষ্মভাবে সুরক্ষিত করতে পারে। এই কৃত্রিম ফোঁটাগুলি জৈবিক কোষে পাওয়া প্রাকৃতিক ফোঁটারই মতো। এরা জটিল জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলি সংগঠিত করতে ঝিল্লির বদলে ঘনীভবনকে ব্যবহার করে। চেন জোর দিয়ে বলেন, ” আমাদের কৃত্রিম ফোঁটাগুলি এইভাবে একটি চমৎকার মডেল সিস্টেমের প্রতিনিধিত্ব করে। এর সাহায্যে আমরা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলিকে অনুকরণ করতে ও আরও ভালভাবে বুঝতে পারি।”

গবেষকরা বিশেষ নকশায় নির্মিত অতিথি ডিএনএ সূত্রসমূহকে ফোঁটাগুলির মধ্যে প্রবেশ করান। এই সূত্রগুলি ফোঁটার অভ্যন্তরীণ কাঠামো চিনতে এবং তাকে আবদ্ধ করতে সক্ষম। প্রথমবারের মতো পর্যবেক্ষণ-করা অস্বাভাবিক গতির আংশিক কারণ হল, যোগ-করা ডিএনএ আশ্রয়দাতা (হোস্ট) ডিএনএর সাথে ‘তালাচাবি’ প্রক্রিয়ায় মিথস্ক্রিয়া ঘটায়। এই মিথস্ক্রিয়া পার্শ্ববর্তী উপাদানের ঘনত্ব কমায়, স্থানীয় অঞ্চলগুলিকে আরও তরল এবং গতিশীল হতে দেয়। চেন আরও বলেন: “সু-সংজ্ঞায়িত, অত্যন্ত ঘনীভূত সম্মুখটি (ফ্রন্ট) সময়ের সাথে সাথে রৈখিক পদ্ধতিতে এগিয়ে চলেছে। এটি রাসায়নিক বন্ধন, উপাদান রূপান্তর এবং প্রোগ্রামেবল ডিএনএ মিথস্ক্রিয়া দ্বারা চালিত। নরম পদার্থের ক্ষেত্রে এটি সম্পূর্ণ নতুন এক পর্যবেক্ষণ।”

কিন্তু কেবল নরম পদার্থের পদার্থবিদ্যাই তো নয়, এ আবিষ্কার কোষের মধ্যে ঘটে-যাওয়া রাসায়নিক প্রক্রিয়া সম্পর্কেও আমাদের জ্ঞান উন্নত করবে। স্নায়ু-ক্ষয়জনিত ব্যাধিগুলির চিকিৎসার ক্ষেত্রেও এটি আগ্রহের বিষয় হবে, যেখানে কোষের নিউক্লিয়াস থেকে প্রোটিন সাইটোপ্লাজমে স্থানান্তরিত এবং ঘনীভূত হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে, তারা গতিশীল থেকে অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল অবস্থায় রূপান্তরিত হয়ে সমস্যাযুক্ত ফাইব্রিল তৈরি করে। ফাইব্রিল হলো জৈবিক কোষকলাতে উপস্থিত সুতোর মতো কাঠামো। সাধারণত এর ব্যাস ১০ থেকে ১০০ ন্যানোমিটার। এগুলি কোষকলা গঠন এবং তার কার্যকারিতা বজায় রাখতে মৌলিক ভূমিকা পালন করে ।

সূত্র: “Ballistic diffusion fronts in biomolecular condensates” by Weixiang Chen, Brigitta Dozs, Pablo G. Argudo, Sebastian V. Bauer, Wei Liu, Avik Samanta, Sapun H. Parekh, Mischa Bonn and Andreas Walther, 6 June 2025, Nature Nanotechnology.
DOI: 10.1038/s41565-025-01941-0

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 + 20 =