
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বুশল্যান্ডে বিজ্ঞানীরা ক্যাঙ্গারুর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এক নতুন মারসুপিয়াল প্রজাতির (থলেওয়ালা স্তন্যপায়ী প্রাণী) জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছেন। তবে এই আবিষ্কার যতটা আনন্দের, ততটাই দুঃখজনকও, কারণ প্রমাণ বলছে প্রজাতিটি আজ পৃথিবীতে আর নেই।
কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম এবং মারডক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল নালারবার ও দক্ষিণ-পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার গুহায় লুকিয়ে থাকা প্রাচীন জীবাশ্ম থেকে এই রহস্য উদঘাটন করেছেন। তাদের বিশ্লেষণে শুধু একটি সম্পূর্ণ নতুন বেটং প্রজাতিই নয়, বরং ওয়াইলি বা ব্রাশ টেইল্ড বেটং-এর দুটি নতুন উপপ্রজাতিও শনাক্ত হয়েছে।
এই ওয়াইলি আকারে ছোট হলেও প্রকৃতির জন্য এদের অবদান নেহাৎই কম না। এরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতান্ত্রিক প্রকৌশলী। এরা ভূগর্ভস্থ ছত্রাক খুঁজে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রতি বছর কয়েক টন মাটি উল্টেপাল্টে দেয়। এই প্রক্রিয়ায় মাটির উর্বরতা বাড়ে, নতুন বীজের অঙ্কুরোদগম সহজ হয় এবং পুরো পরিবেশ সজীব থাকে। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় প্রাণী প্রজাতি এই ওয়াইলি বর্তমানে দেশটির সর্বাধিক পুনর্বাসিত স্তন্যপায়ী প্রজাতি, কারণ সংরক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের বিপন্ন জনসংখ্যা বাঁচিয়ে রাখতে বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানান্তর করা হয়।
গবেষণার প্রধান লেখক জেক নিউম্যান-মার্টিন জানান, ওয়াইলি দীর্ঘদিন ধরেই সংরক্ষণ কর্মসূচির মূল কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু এইবার প্রথমবারের মতো জীবাশ্ম গবেষণা তাদের বৈচিত্র্য সম্পর্কে নতুন তথ্য দিল। তিনি বলেন , তাঁরা একটি সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতি ও দুটি উপপ্রজাতি শনাক্ত করেছেন। দুঃখের কথা, এদের অনেকেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অথচ বিজ্ঞানীরা তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে আগে নাকি জানতেনই না।
এই গবেষণায় দেখা গেছে যে গুরুতর রূপে বিপন্ন ওয়াইলি আসলে দুইটি ভিন্ন জীবিত উপপ্রজাতিতে বিভক্ত। অর্থাৎ ভবিষ্যতের প্রজনন ও পুনর্বাসন কর্মসূচি সাজাতে গেলে এই বৈচিত্র্যকে মাথায় রাখা জরুরি। এতে শুধু সংখ্যাই বাড়বে না, উপরন্তু প্রজাতির দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকার সম্ভাবনাও বাড়বে।
সহ-গবেষক ড. কেনি ট্র্যাভুইয়ন জানান, তাঁরা খুলি ও দেহের হাড় মেপে প্রজাতির ভিন্নতা নির্ণয় করেছেন। আগে যেসব জীবাশ্ম উপেক্ষিত ছিল, সেগুলোই এখন বৈচিত্র্যের নতুন তথ্য দিচ্ছে। তার মতে, জীবাশ্ম বিশ্লেষণকে আধুনিক জিনতাত্ত্বিক গবেষণার সঙ্গে মেলালে সংরক্ষণ প্রচেষ্টায় আরও কার্যকর ফল পাওয়া সম্ভব।
নতুন আবিষ্কৃত প্রজাতিটির বৈজ্ঞানিক নাম রাখা হয়েছে বেটোঙ্গিয়া হাউচারে। তবে গবেষকরা স্থানীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কৃষ্টিগত দিক থেকে উপযুক্ত একটি নাম নির্ধারণ করতে চান। কারণ “ওয়াইলি” শব্দটি মূলত নুংগার জনগোষ্ঠীর ভাষা থেকে এসেছে।
এ আবিষ্কার শুধু বিলুপ্ত এক অজানা প্রজাতির খোঁজ দেয়নি, এও দেখিয়েছে যে জীবাশ্ম গবেষণা এবং আধুনিক জিনতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের সমন্বয় ভবিষ্যতে বিপন্ন প্রজাতি সংরক্ষণে অমূল্য ভূমিকা পালন করবে।
সূত্র: “A taxonomic revision of the Bettongia penicillata (Diprotodontia: Potoroidae) species complex and description of the subfossil species Bettongia haoucharae sp. nov.” by Jake Newman-Martin, Kenny J. Travouillon,et.al;(5.09.2025), Zootaxa.
DOI: 10.11646/zootaxa.5690.1.1