ক্যানসার সৃষ্টিকারী প্লাস্টিক শিল্পের উপাদান বাতাসে ঘুরছে

ক্যানসার সৃষ্টিকারী প্লাস্টিক শিল্পের উপাদান বাতাসে ঘুরছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১১ অক্টোবর, ২০২৪

 

রান্নাঘরের তাক, ফ্রিজ, জামাকাপড়ের প্যাকেট, খাবারের মোড়ক, বাচ্চাদের খেলনা, প্রসাধনী দ্রব্যের কৌটো, শিশি সর্বত্র যার উপস্থিতি সে হল প্লাস্টিক। প্লাস্টিক ছাড়া আমাদের আধুনিক জীবন যেন অসম্পূর্ণ। এতদিনে প্লাস্টিকের নানা কুফল আমাদের জানা হয়ে গেছে কিন্তু তবুও প্লাস্টিক ছাড়া আমাদের এক দিন কাটেনা। মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণার সন্ধান আমাদের রক্তে, মস্তিষ্কে, হৃদযন্ত্রে পাওয়া যাচ্ছে। এবার ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, রিভারসাইডের গবেষকরা জানিয়েছেন, প্লাস্টিক নরম করে তাকে আকার দেওয়ার জন্য যে রাসায়নিক ব্যবহার হয় তার সংস্পর্শে মানুষ নিজের অজান্তেই চলে আসছে। এই রাসায়নিকগুলো প্লাস্টিসাইজার নামে পরিচিত, যাদের বেশিরভাগ শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। এই প্লাস্টিসাইজারগুলোর মধ্যে থ্যালেট গ্রুপের রাসায়নিক শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক তার প্রমাণ ইতিমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট লেজিসলেচার ব্যাগ ও ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত ডিইএইচপি নামে থালেট রাসায়নিক নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এটা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়, জননতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকারক, শিশুর বিকাশে বাধা দেয়। ২০০৯ সাল থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় শিশুদের পণ্যে ডিইএইচপি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। থ্যালেট খাদ্যের মোড়কে, ভিনাইল, প্রসাধনী, নানা গৃহস্থালীর দ্রব্যে পাওয়া যায়। এগুলো আমরা ত্বকের মাধ্যমে বা শ্বাসের সাথে শরীরে গ্রহণ, শোষণ করে থাকি। খুব স্বল্প সময়ের জন্য এটা শরীরে থাকে কিন্তু আমেরিকানদের মূত্রের নমুনায় এর উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে।
ইউসিআর-এর মোট ১৩৭ জন শিক্ষার্থী স্বাভাবিক জীবনযাপনের সময় পাঁচ দিন ধরে সিলিকন রিস্টব্যান্ড পরেছিল। ইউসিআর ও ডিউক ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এই ব্যান্ডগুলোয় ১০টা পরিচিত প্লাস্টিসাইজার পাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে ভেবেছিলেন। এই উপাদানগুলো পরিবেশ থেকে ব্যান্ড শোষণ করতে পারে বলে তাদের ধারণা ছিল। কিন্তু তারা আশ্চর্য হয়ে দেখেন এর মধ্যে প্রচুর ঘনত্বে বিপজ্জনক দূষকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এই ফলাফল আমেরিকার দক্ষিণ প্রান্ত ছাড়াও পূর্ব উপকূলে দেখা গেছে। প্লাস্টিসাইজারগুলোর মধ্যে ৯৪% থেকে ৯৭% ডিআইএনপি, ডিইএইচপি আর ডিইএইচটি দেখা গেছে। ডিইএইচপি-র মতো ডিআইএনপি-ও থ্যালেট, আর এর ক্ষেত্রেও ক্যানসারের ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে, তাই এটাও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ডিইএইচটি থ্যালেট না হলেও এর থেকে শরীরে কী ধরনের বিষাক্ততা সৃষ্টি হতে পারে তা এখনও জানা যায়নি। থ্যালেট বহু শিল্পে ও ভোক্তা পণ্যে ব্যবহার করা হয়, খাদ্যেও শনাক্ত করা গেছে, মানুষের মধ্যেও এগুলো পরিমাপ করা গেছে। কিন্তু গবেষণা অনুসারে থ্যালেট থেকে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই গবেষণা এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ-এ প্রকাশিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty + 15 =