মহামারীর শুরু থেকেই, করোনাভাইরাসের এক অপ্রত্যাশিত, অনিশ্চিত রূপ মানুষের সামনে ফুটে উঠেছে।কিছু মানুষ হালকা সর্দি- কাশি- জ্বরে ভুগছেন, কিছু মানুষ সংক্রমিত হলেও তাদের কোনো উপসর্গ থাকছে না আবার কেউ কেউ ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এবং মারা যাচ্ছেন। ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হলে ভবিষ্যতে কার কী ঘটবে তা যেমন জটিল তেমনি রহস্যাবৃত। ভাইরাসের এই অনিশ্চিত প্রকৃতির জন্য গবেষকরা বিভিন্ন ধরনের কারণ চিহ্নিত করেছেন – জনসংখ্যা থেকে শুরু করে, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, টিকাকরণের অবস্থা এমনকি জেনেটিক সূত্রও। গবেষকরা দেখেছেন যে বয়স্ক ব্যক্তিরা এই রোগে আক্রান্ত হলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা যাচ্ছে। কোভিড টিকা নেওয়া রোগীদের তুলনায় যারা কোভিড টিকা নেননি এমন রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি।
ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের অগাস্টের তথ্য থেকে জানা যায়, ৫০ বছর বা তার ঊর্ধে টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের তুলনায় টিকা না দেওয়া ব্যক্তিদের COVID-19 রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা ১২ গুণ বেশি। উদাহরণ স্বরূপ ২৮শে অগাস্টের তথ্য অনুযায়ী টিকা না পাওয়া প্রতি ১০০,০০০ জনের মধ্যে ৫.৪৬ জন মারা গিয়েছেন অন্যদিকে দুটি বুস্টার ডোজ পাওয়া ব্যক্তিদের প্রতি ১০০,০০০ জনের মধ্যে ০.৪৯ জন মারা গিয়েছেন।
এমনকি এক মাসের তথ্যে দেখা গেছে যে পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিরা যারা প্রথম দুটো টিকাকরণ এবং শুধুমাত্র একটা বুস্টার ডোজ পেয়েছেন তাদের মৃত্যু তাদেরই সমবয়সী যারা দুই বা তার বেশি বুস্টার ডোজ পেয়েছেন তাদের তুলনায় প্রায় তিনগুণ (প্রতি ১০০,০০০ জনে ১.২৭ মৃত্যু) ।
পূর্বের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা
হৃদরোগ, কিডনির রোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD), ডায়াবেটিস এবং স্থূলতা সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যায় আক্রান্ত যেকোনো বয়সের মানুষ, COVID-19-এ আক্রান্ত হলে শারীরিক ঝুঁকি অনেকাংশ বেশি। তবে কিছু ধরনের হাঁপানি রোগ আছে যা COVID-19 রোগের থেকে রক্ষা করতে পারে। ক্যান্সার রোগীর ক্ষেত্রেও COVID-19 সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। তবে কিছু ক্যান্সার রোগী আছেন যাদের ঝুঁকি অন্যান্য ক্যান্সার রোগীর তুলনায় অনেক বেশি।
যে সব ক্যান্সার রোগীরা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সংক্রান্ত সমস্যার কারণে বা বিভিন্ন ধরনের আটো ইমিউন রোগের জন্য ওষুধ খাচ্ছেন তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই সব রোগীরা COVID-19-এ আক্রান্ত হলে গুরুতরভাবে অসুস্থ হওয়ার বা মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। গবেষকরা ৩রা নভেম্বর JAMA অনকোলজিতে একটি রিপোর্টে বলেছেন মানব দেহের সারা শরীরের বিভিন্ন কোশ থেকে ছোটো ছোটো গ্লাইকোপ্রোটিন বা সাইটোকাইন নির্গত হয়। অনেক সময় এই সব রোগীদের রক্তে সাইটোকাইনের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায় এবং দেহের রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় যার ফলে শরীরের কোশ এবং অঙ্গের ক্ষতি হয়। যে সমস্ত ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কেমোথেরাপির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন বা যারা চিকিত্সাধীন ছিলেন না তাদের তুলনায় ইমিউনোথেরাপি নেওয়া ইমিউনোসাপ্রেসড ব্যক্তিদের জন্য করোনা ভাইরাসের প্রভাব আরও ক্ষতিকারক।
বোস্টনের ডানা-ফারবার ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের এক ক্যান্সার গবেষক, ক্রিস লাবাকি বলেছেন, যে ক্যান্সার রোগীদের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে তাই COVID-19 রোগ থেকে তাদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা উচিত। যতটা সম্ভব মাস্ক ব্যবহার করা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা ও হাত ধোয়া সহ বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। জনবহুল এলাকায় যেখানে সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকে সেই সব এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে। যে সমস্ত ব্যক্তিদের ক্যান্সার রোগীর সংস্পর্শে আসতে হয় তাদেরও যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হবে।