ক্যালিফোর্নিয়ার সামুদ্রিক সিংহের হিংসাত্মক ব্যবহার

ক্যালিফোর্নিয়ার সামুদ্রিক সিংহের হিংসাত্মক ব্যবহার

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ জুলাই, ২০২৩

সি- লায়ন বা সামুদ্রিক সিংহ “পিনিপেডস” নামক সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের অন্তর্গত। ল্যাটিন ভাষায় ‘পিনিপড’ মানে ফিন বা ফ্লিপার-ফুটেড। এই প্রাণী তাদের বেশিরভাগ সময় সমুদ্রে কাটায়, তবে দীর্ঘ সময়ের জন্য এরা তীরেও আসে। সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার সমুদ্র সৈকত জুড়ে, সামুদ্রিক সিংহদের মধ্যে এক অদ্ভুত আচরণ দেখা যাচ্ছে, যেমন তাদের মাথা সামনে পিছনে দোলানো, মুখে ঝাপটা দেওয়া এবং স্পর্শ করলে অস্বাভাবিকভাবে হিংস্র হয়ে ওঠা। সাধারণত এই সামুদ্রিক সিংহরা মানুষের প্রতি আক্রমণাত্মক হয় না, তবে ইদানিং বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে যেখানে এরা সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের কামড়ে দিয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় এক হাজারেরও বেশি সামুদ্রিক সিংহ একটি বিষাক্ত অ্যালগাল ব্লুমের কারণে বিষাক্ত ডমোইক অ্যাসিডের প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এর ফলে খিঁচুনি, মস্তিষ্কের ক্ষতি এবং মৃত্যুও হচ্ছে।
অরেঞ্জ কাউন্টির প্যাসিফিক মেরিন ম্যামল সেন্টারের এক পশুচিকিৎসক আলিসা ডেমিং বলেছেন মানুষকে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আক্রমণ করছে না বরং যখন একটি অসুস্থ, বিভ্রান্ত সামুদ্রিক সিংহ ভয় পায় বা কিছুতে ধাক্কা খায় তখন এটা খুব সাধারণ একটা অভিব্যক্তি।
গবেষকদের মতে এই বিপর্যয়টি জলবায়ু পরিবর্তন এবং এল নিনোর প্রভাবে এবং মানুষের দূষণসৃষ্টিকারী ক্রিয়াকলাপের পরিণতি। যার ফলে সমুদ্রে পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এই ঘটনার কারণে সিউডো-নিটসচিয়া নামক আণুবীক্ষণিক সামুদ্রিক প্লাঙ্কটন সংখ্যায় বেড়েছে। এটি ‘রেড টাইড’ নামে পরিচিত। এই সিউডো-নিটসচিয়া ডমোইক অ্যাসিড নামে এক শক্তিশালী নিউরোটক্সিন তৈরি করে। মাছেরা এই শৈবাল খায় ফলে খাদ্য শৃঙ্খলে এই নিউরোটক্সিন জমা হয়। সামুদ্রিক সিংহ, যারা বেশিরভাগ অ্যাঙ্কোভি এবং সার্ডিন খায়, তাদের দেহে তাই এই টক্সিন ঢুকে পড়ে।
বছরের জুন মাসে প্রায় ৭০,০০০ স্ত্রী প্রেজাতির সামুদ্রিক সিংহ লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে চ্যানেল আইল্যান্ডে তাদের বাচ্চা জন্ম দেওয়ার জন্য যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, এরা অতিরিক্ত ক্ষতিকারক শৈবাল বৃদ্ধি বা অ্যালগাল ব্লুমের সম্মুখীন হয়। এই বিষে কয়েক ডজন ডলফিনও মারা যায়। ডেমিং-এর মতে এই অ্যালগাল ব্লুমের ফলে যে ডমোইক অ্যাসিড তৈরি হয়েছে তা খুবই ক্ষতিকারক। বিগত ২০ বছরে, ক্যালিফোর্নিয়া পাঁচটি ক্ষতিকারক অ্যালগাল ব্লুম দেখেছে। সাধারণত, সামুদ্রিক সিংহ তিন দিন পর স্বাভাবিকভাবেই এই বিষকে শরীর থেকে বের করে দেয়। কিন্তু তাদের খাবারে ডমোইক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি থাকলে তারাও মারা যেতে পারে।