ক্রাস্টেসিয়ান, পোকামাকড় বা মাশরুমে থাকা ফাইবার হজমে সাহায্য করে

ক্রাস্টেসিয়ান, পোকামাকড় বা মাশরুমে থাকা ফাইবার হজমে সাহায্য করে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের করা ইঁদুরের উপর একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে ক্রাস্টেসিয়ান, পতঙ্গের বাইরের শক্ত আবরণ বিপাকীয় প্রক্রিয়ার জন্য উপকারী। প্যাথলজি এবং ইমিউনোলজির সহকারী অধ্যাপক স্টিভেন ভ্যান ডাইকেনের নেতৃত্বে গবেষকরা দেখেন যে কীটপতঙ্গের বাইরের শক্ত খোলশে থাকা কাইটিন যা আবার ব্যাঙের ছাতা ও ক্রাস্টেসিয়ানের খোলশেও পাওয়া যায় তাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সক্রিয় রাখে। এর ফলে ওজন বৃদ্ধি কম হয়, শরীরের চর্বি হ্রাস পায় ও স্থূলতা প্রতিরোধে করে। গবেষণাটি সায়েন্স পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
ভ্যান ডাইকেনের মতে বর্তমানে স্থূলতা একটি মহামারী মতো। মানুষ যা খায় তা তার দেহ এবং কীভাবে সে খাদ্যকে বিপাক করে তার উপর গভীর প্রভাব ফেলে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে স্থূলতা প্রতিরোধ করার উপায় গবেষকরা অনুসন্ধান করছেন। ইমিউন সিস্টেম ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, অ্যালার্জেন এমনকি ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শরীরকে রক্ষা করার জন্য সুপরিচিত। গবেষকরা দেখেছেন যে ইমিউন সিস্টেমের একটি বিশেষ অংশ কাইটিন হজমের সাথে যুক্ত। কাইটিন খাওয়ার পর পেটের মধ্যে একটি সহজাত ইমিউন প্রতিক্রিয়া সক্রিয় হয়ে ওঠে যা পাকস্থলীর কোশে কাইটিনেস নামে পরিচিত এনজাইমের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। কাইটিন অদ্রবণীয়- তরলে দ্রবীভূত হয়না এবং তাই কাইটিন হজমের জন্য এনজাইম এবং আম্লিক অবস্থার প্রয়োজন। কাইটিনেস কাইটিন ভেঙে দেয়।
ভ্যান ডাইকেন বলেন যে কাইটিন হজম প্রধানত হোস্টের নিজস্ব কাইটিনেসের উপর নির্ভর করে। পাকস্থলীর কোশগুলো একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের এনজাইমেটিক আউটপুট পরিবর্তন করে। তবে এটি আশ্চর্যজনক যে এই প্রক্রিয়াটি মাইক্রোবিয়াল ইনপুট ছাড়াই ঘটছে, কারণ পৌষ্টিক নালীর ব্যাকটেরিয়াও কাইটিনেসের উত্স যা কাইটিনকে ভেঙে দেয়। পাকস্থলী থেকে খাদ্য যখন অন্ত্রে ঢোকে তখন অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াও কাইটিনযুক্ত খাবারের সাথেও খাপ খাইয়ে নেয়। গবেষকরা দেখেন যে ইঁদুরের স্থূলতার উপর সবচেয়ে বড়ো প্রভাব ঘটে যখন কাইটিন ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করে কিন্তু হজম হয়না। ইঁদুরকে বেশি চর্বিযুক্ত খাবারের সাথে কাইটিন দেওয়া হয়েছিল। কিছু ইঁদুরের কাইটিনেস তৈরি করার ক্ষমতা ছিল না। দেখা গেছে যে ইঁদুর কাইটিন খায়নি এবং যে ইঁদুর কাইটিন খেয়ে তা ভাঙতে পেরেছিল তাদের তুলনায় যে ইঁদুরগুলো কাইটিন খেয়েছিল কিন্তু তা ভাঙতে পারেনি তারা সর্বনিম্ন ওজন অর্জন করেছিল, তাদের শরীরের চর্বির পরিমাণ কম ছিল এবং তারা স্থূলতা প্রতিরোধ করেছিল। যে ইঁদুরগুলো কাইটিন ভেঙে ফেলতে পেরেছিল তারাও বিপাকীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপকৃত হয়েছিল । ভ্যান ডাইকেন এবং তার দল পরবর্তী ক্ষেত্রে দেখতে চান মানুষের খাবারে কাইটিন যোগ করলে তা স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে কিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen + 12 =