ক্লাসঘরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রকোপ

ক্লাসঘরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রকোপ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৮ মে, ২০২৫

চ্যাটজিপিটির সহযোগিতায় আজকাল যেকোনো বিষয়েই একটি ঝকঝকে প্রবন্ধ লিখে ফেলা কোনো ব্যাপারই নয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত যন্ত্র কি সত্যিই মানুষের চিন্তাভাবনার সূক্ষ্ম ব্যঞ্জনাগুলি ফুটিয়ে তুলতে পারে?
ইস্ট অ্যাংলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জিলিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁরা ১৪৫ জন শিক্ষার্থীর রচনা এবং চ্যাটজিপিটি-র তৈরি ওই একই সংখ্যার রচনার তুলনামূলক বিচার করেছেন। প্রতিটি রচনাতে ঠিক কোন জিনিসগুলি পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করছে তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বিচার করেছেন। কলেজের ছাত্রছাত্রীদের রচনার ধরণ বিশ্লেষণ করে কতকগুলি চিহ্ণায়কের সাহায্যে বুঝে ফেলা যায়, কোন জায়গার তাদের লেখার মধ্যে থেকে ব্যক্তিগত ঝোঁকগুলি টুক করে খসে পড়েছে। এর ফলে বিদ্যায়তনিক মূল্যায়ন অনেক স্বচ্ছ হবে।

ইউইএ’র স্কুল অব এডুকেশন অ্যান্ড লাইফলং লার্নিংয়ের প্রফেসর কেন হিল্যান্ড এ বিষয়ে তাঁর উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন। তাঁর মতে চ্যাটজিপিটি এবং অনুরূপ লিখন-যন্ত্রগুলি অসাধুতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। মৌলিক ভাষাবোধ আর বিশ্লেষণী চিন্তার ক্ষমতারও হানি ঘটাতে পারে। “কারণ এখনো আমাদের হাতে এমন কোনো নির্ভরযোগ্য হাতিয়ার নেই যার সাহায্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-প্রসূত রচনাগুলিকে শনাক্ত করা যায়”।
রচনার মধ্যে প্রশ্ন, ব্যক্তিগত মন্তব্য প্রভৃতি যেসব জিনিস ‘মনোযোগ কাড়ে” তার চিহ্ণ খোঁজার জন্য বিশেষ আগ্রহ দেখান গবেষকরা। “আমরা দেখেছি যে প্রকৃত শিক্ষার্থীর রচিত প্রবন্ধগুলি আগাগোড়া এই ধরণের মনোযোগ-কাড়া বৈশিষ্ট্যে অনেক বেশি সমৃদ্ধ। সেগুলিতে পারস্পরিক আন্তঃক্রিয়ার সুযোগ ও প্রত্যয় উৎপাদনের ক্ষমতা বেশি”। সেগুলি আলঙ্কারিক প্রশ্ন, ব্যক্তিগত কটাক্ষ এবং পাঠকের কাছে সরাসরি আবেদনে পূর্ণ। এই সমস্ত কৌশল স্পষ্টতই সংযোগ বাড়ায় এবং একটি জোরালো যুক্তিধারা তৈরি করে। অন্যদিকে চ্যাটজিপিটির লেখাগুলি বিদ্যায়তনিক রচনার শৈলীকে নকল করে বটে, কিন্তু তার মধ্যে ব্যক্তিগত স্পর্শের অভাব থাকে এবং স্পষ্ট কোনো অবস্থান থাকে না। “ওই কৃত্রিম বুদ্ধি-যন্ত্রকে কী ধরনের উপাত্ত (ডেটা) দিয়ে প্রশিক্ষিত করা হয়েছিল এর মধ্যে তার আভাস পাওয়া যায়। “
ক্লাসে ছাত্রদের তো কেবল কী করে লিখতে হয় তা শেখানো হয় না, কী করে ভাবতে হয় সেটাই শেখানো হয়। কোনো অ্যালগরিদ্‌মই তার জায়গা নিতে পারে না। ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে ভর্তি হবার অনেক আগে থেকেই প্রচুর যন্ত্র-প্রসূত রচনা পড়ে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। ওই ধরণের রচনার কোনো একটি বাক্য কে লিখেছেন এবং কেন লিখেছেন সে-প্রশ্ন করাটা এখন তাদের পড়ানোর একটি মূল অঙ্গ হয়ে উঠেছে। এতে করে অনামা কোনো একটা লেখার বক্তব্য বিনা প্রশ্নে মেনে নেওয়ার অভ্যেস থেকে তাদের কিছুটা মুক্ত করা যাবে।
গবেষকরা অবশ্য এআই যন্ত্র সরঞ্জামগুলিকে বরবাদ করছেন না। খোলা মনে ব্যবহার করলে এগুলি নিশ্চয়ই শিক্ষাদানের কাজে সাহায্য করতে পারবে।
এই গবেষণার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে ‘রিট্‌ন কমিউনিকেশন’ পত্রিকায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − 6 =