
সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের ভেতর লুকিয়ে আছে অসাধারণ ক্ষমতা। ক্ষত হলে বা শরীরে ফাঁক তৈরি হলে, কোষ নিজের আকার বদলে সেই ফাঁক পূরণ করতে শুরু করে। তারা দ্রুত সেই জায়গাটা ঢেকে দেয়। অনেকটা ছেঁড়া জামা সেলাই করার মতন। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, এই প্রক্রিয়ার নেপথ্যে রয়েছে এপিথেলিয়াল কোষ ও তাদের ভেতরকার বিশেষ অঙ্গাণু ‘এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম ‘ (ই আর)।
এপিথেলিয়াল কোষ আমাদের শরীরের বাইরের আবরণ তৈরি করে। এগুলো শুধু আঘাত, জীবাণু ও শরীরের জলশূন্যতা থেকেই যে রক্ষা করে তাই নয়, পুষ্টি শোষণ, বর্জ্য নির্গমন ও হরমোন-উৎসেচক উৎপাদনেও কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্ষতের বক্রতা বা আকৃতি অনুযায়ী কোষের ভেতরের ই আর নিজের গঠন বদলায়। যদি ক্ষত বাহিরের দিকে উঁচু (উত্তল) হয়, তখন ই আর নলের মতো আকার নেয় আর কোষরা হাত-পা মেলে যেন হেঁটে হেঁটে ক্ষত ঢেকে ফেলে। আর যদি ক্ষত ভেতরের দিকে বাঁকানো (অবতল) হয়, তখন ই আর চ্যাপ্টা পাতার মতো হয়ে যায়। তখন কোষরা থলির মুখের দড়ি টানার মতো টান দিয়ে ক্ষতর মুখ বন্ধ করে (“পার্স-স্ট্রিং কনস্ট্রাকশন”)।
গবেষকরা উন্নত প্রযুক্তি সহযোগে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, ই আর কোনো স্থির অঙ্গাণু নয়, তারা আশপাশের চাপ ও সংকেত অনুযায়ী মুহূর্তেই পরিবর্তিত হয়। সহজভাবে বললে, ক্ষতের অবস্থান দেখে কোষরা ঠিক করে নেয় কীভাবে কাজ করবে।
এই প্রক্রিয়াকে আরও পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য বিজ্ঞানীরা গাণিতিক মডেল ব্যবহার করেছেন। ফলাফলে প্রমাণিত হয়েছে, শুধু যান্ত্রিক সংকেতই ই আর -কে বদলাতে যথেষ্ট। আর এই বদলই কোষকে সঠিকভাবে চলতে সাহায্য করে, যার ফলে ক্ষত দ্রুত সেরে ওঠে।
এই গবেষণায় ভারত ও বিদেশের একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা অংশ নিয়েছেন। তাঁরা দেখিয়েছেন, কোষের অঙ্গাণু ও কোষের আকারের মধ্যে এক নতুন ধরনের সম্পর্ক রয়েছে। ই আর শুধু অভ্যন্তরীণ কাজই করে না, বাইরের যান্ত্রিক সংকেতকেও রাসায়নিক বার্তায় রূপান্তর করে। যাকে বলা হয় মেকানোট্রান্সডাকশন। এই প্রক্রিয়া আমাদের স্পর্শ, শ্রবণ ও ভারসাম্য বজায় রাখার মতো মৌলিক শারীরবৃত্তীয় কাজেও জরুরি।
সবশেষে বলা যায়, ক্ষত সারানোর মতো সাধারণ একটি ঘটনার ভেতরে লুকিয়ে আছে এক অভাবনীয় বিজ্ঞান। কোষের ভেতরের অঙ্গাণু কীভাবে যান্ত্রিক শক্তিকে বুঝে নিয়ে নিজের আকার বদলে নিয়ে ক্ষত সারায়, তা জানার ফলে চিকিৎসাবিজ্ঞান আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এ আবিষ্কার শুধু ক্ষত চিকিৎসার ক্ষেত্রেই নয়, বরং ক্যানসার কোষের বিস্তার রোধ, কলা পুনর্গঠন কিংবা ক্যানসার প্রতিরোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেও যুগান্তকারী থেরাপি তৈরি করতে পারবে।
সূত্র :Edge curvature drives endoplasmic reticulum reorganization and dictates epithelial migration mode by Simran Rawal, et.al ; Nature Cell Biology (18.8.2025).