
বর্তমান বিশ্বের প্রতিটি স্মার্টফোন, কম্পিউটার, গাড়ি কিংবা বিমান আজ মাইক্রোচিপ ছাড়া কল্পনা করা যায় না। কিন্তু যত প্রযুক্তি এগোচ্ছে, ততই চাহিদা বাড়ছে আরও ক্ষুদ্র, আরও দ্রুত এবং কম খরচে উৎপাদনযোগ্য চিপের। এই ধরনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তু তৈরির জন্য চাই এমন এক নির্ভুল ও সাশ্রয়ী প্রযুক্তি যা অত্যন্ত ছোট আকারের সার্কিট বানাতে সক্ষম । এবার সেই জটিল সমস্যার এক নির্ভরযোগ্য সমাধান দিয়েছেন জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।তাঁরা আবিষ্কার করেছেন এক নতুন রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যা মাইক্রোচিপকে এত ক্ষুদ্র আকারে বানাতে সক্ষম যে তা খালি চোখে দেখাই যায় না।
গবেষকরা দেখিয়েছেন, ধাতব উপাদান এবং আলোক-সংবেদী রাসায়নিক একত্র করে ন্যানোমিটার স্কেলে সূক্ষ্ম আকারে সার্কিট আঁকা সম্ভব। এই কৌশলকে বলা হচ্ছে কেমিক্যাল লিকুইড ডিপোজিশন (সি এল ডি)। এর মাধ্যমে সিলিকন পাতের ওপর অত্যন্ত পাতলা স্তরে ধাতব জৈব যৌগ বসানো যায়, এবং সেটি এতটাই নির্ভুল যে প্রতিটি স্তরের স্থূলতাও ন্যানোমিটার স্কেলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ফলে বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন করাও সহজ ও সাশ্রয়ী হয়ে উঠছে।
আজকের চিপ তৈরির মূল প্রযুক্তি হলো রশ্মি ব্যবহার করে সিলিকন পাতে সূক্ষ্ম নকশা খোদাই করা। কিন্তু যতই ক্ষুদ্র আকারে সার্কিট বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, ততই দেখা দিচ্ছে সমস্যা। কারণ এদের মধ্যে বিদ্যমান রোধক উপাদানগুলো উচ্চক্ষমতার রশ্মির সঙ্গে যথেষ্ট কার্যকরভাবে প্রতিক্রিয়া ঘটায় না। ফলে ১০ ন্যানোমিটারের নীচে নকশা আঁকা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
জনস হপকিন্সের গবেষক দল দেখিয়েছেন যে, বিশেষ ধাতব জৈব যৌগ যেমন- জিঙ্ক ও ইমিডাজল ব্যবহার করলে ‘বিয়ন্ড এক্সট্রিম আল্ট্রাভায়োলেট’ (বি-ই ইউ ভি) রশ্মি দিয়ে অতি সূক্ষ্ম প্যাটার্ন তৈরি করা সম্ভব।সেখানে জিঙ্ক আলো শোষণ করে ইলেকট্রন উৎপন্ন করে, যা জৈব স্তরে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটিয়ে বর্তনীর ( সার্কিটের) নকশা ফুটিয়ে তোলে। এভাবে আগে যেখানে সীমা ছিল ১০ ন্যানোমিটার, এখন আরও ক্ষুদ্র কাঠামো তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে।
এই গবেষণায় শুধু জনস হপকিন্স নয়, চীন, সুইজারল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নানা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা অংশ নিয়েছেন। তাঁরা যৌথভাবে শত শত ধাতব জৈব যৌগের জুটি পরীক্ষা করেছেন, এবং দেখেছেন যে প্রতিটি ধাতু ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোতে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া ঘটায়। কোনো ধাতু এক রশ্মিতে দুর্বল হলেও অন্য রশ্মিতে অসাধারণ কার্যকর হতে পারে। এর মানে ভবিষ্যতে আরও নতুন জুটি আবিষ্কার করে চিপ প্রযুক্তিকে বহু গুণ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে বি-ই ইউ ভি নির্ভর উৎপাদন শিল্পে বড় ভূমিকা পালন করতে চলেছে। তখন স্মার্টফোন থেকে শুরু করে মহাকাশযান পর্যন্ত সবজায়গায়ই আরও শক্তিশালী, ছোট ও সাশ্রয়ী মাইক্রোচিপ ব্যবহার হবে। এর ফলে কম শক্তি খরচ করে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন প্রযুক্তি তৈরি করা সম্ভব হবে। তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের আমূল পরিবর্তন ঘটাবে।
সূত্র: “Spin-on deposition of amorphous zeolitic imidazolate framework films for lithography applications” by Yurun Miao, Shunyi Zheng,et.al;(11.09.2025) , Nature Chemical Engineering.
DOI: 10.1038/s44286-025-00273-z