ক্ষুদ্র পরিবর্তনও ডেকে আনতে পারে মহাবিপর্যয়

ক্ষুদ্র পরিবর্তনও ডেকে আনতে পারে মহাবিপর্যয়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৮ আগষ্ট, ২০২৪
মহাবিপর্যয়

মৌমাছিরা পরিবেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কৃষিজ ফসল সহ অগণিত উদ্ভিদ প্রজাতির বেঁচে থাকা, তাদের প্রজনন নিশিত করে এই মৌমাছি। খাবারের সন্ধানে তারা যখন উড়ে বেড়ায় তখন তাদের ডানায় বা পায়ে লেগে থাকা পরাগ ছড়িয়ে যায় আশেপাশে। দুর্ভাগ্যবশত, তাদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে এই সংখ্যা হ্রাসের একাধিক কারণ থাকলেও সঠিক কারণটি আজও রহস্যে আবৃত। নেচার সাসটেইনেবিলিটিতে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণা একটি সম্ভাব্য কারণের উপর আলোকপাত করেছে: কীটনাশক ব্যবহার। গবেষণায় দেখা গেছে মৌমাছির সংখ্যায় ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। যে সব এলাকায় কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে সেখানে মৌমাছির সংখ্যা অন্যান্য এলাকার তুলনায় ৫৬% পর্যন্ত কমে গেছে। বন্য মৌমাছি সংখ্যায় হ্রাস পেলে সমগ্র বাস্তুতন্ত্রকে ব্যাহত করতে পারে। শুধু গাছপালা নয়, খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য সেই উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল বন্যপ্রাণীকেও প্রভাবিত করে। কোটি কোটি টাকার কৃষি শিল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। মৌমাছি তিন-চতুর্থাংশ খাদ্য ফসল এবং প্রায় ৯০% ফুলের উদ্ভিদের প্রজাতির পরাগায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষকদের মতে কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পৃথিবীতে পরাগসংযোগী পতঙ্গগুলোর সংখ্যা তলানিতে পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি শিল্প। ধান, গম যেমন বায়ুপরাগী, তেমন কাজু, আপেল, সর্ষে, তিল, কুমড়ো, লাউ, শসা মূলত মৌমাছি-নির্ভর। গবেষকদের মতে বিকল্প কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ কৌশল ব্যবহার, যেমন নানাধরনের পোকামাকড়ের জন্য সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, এই গুরুত্বপূর্ণ পরাগায়নকারীদের সংরক্ষণের জন্য অপরিহার্য। প্রাকৃতিক শিকারি ব্যবহার করে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করা, ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ যাতে বাসা বাঁধতে না পারে তার জন্য আগে থেকেই ব্যবস্থাপনা, ফাঁদ পাতা প্রভৃতি ব্যবস্থাপনা নেওয়া যেতে পারে। অন্যান্য উপায় কাজ না করলে শেষ অবলম্বন হিসাবে কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। দলটি আরও দীর্ঘমেয়াদী গবেষণার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে। পরিবেশ-প্রকৃতির বদল, বিশ্ব উষ্ণায়ন বিভিন্ন পতঙ্গের প্রজননের সময়কাল বিগড়ে দিয়েছে। বাসস্থান ধ্বংস, কীটনাশক প্রয়োগ— পতঙ্গদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়েছে। পরিবেশে এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে ‘বাটারফ্লাই এফেক্ট’। গবেষকরা আশঙ্কা করছেন ক্ষুদ্র পরিবর্তনও ডেকে আনতে পারে মহাবিপর্যয়। তাই মৌমাছি ও অন্যান্য পতঙ্গের গুঞ্জন কমলে বিশ্ব জুড়ে খাদ্য-সঙ্কট অবশ্যম্ভাবী।