খরা -সহনশীল কৃত্রিম উদ্ভিদ

খরা -সহনশীল কৃত্রিম উদ্ভিদ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৬ আগষ্ট, ২০২৫

উদ্ভিদের শিকড় বিকশিত হওয়ার সাথে সাথে তারা জল এবং পুষ্টি স্থানান্তর করার পদ্ধতিতে একটি মৌলিক পরিবর্তন ঘটায়। প্রথমে কোষগুলোর মধ্যে জল ও পুষ্টির অবাধ দ্বিমুখী প্রবাহ হয়। কিন্তু পরিণত শিকড়ে এই প্রবাহ একমুখী হয়ে যায়। শুধু বাইরের দিক থেকে ভেতরের দিকে, যাতে পুষ্টি ও জল দ্রুত ভাসকুলার কোষে পৌঁছায়।
উদ্ভিদের শিকড় পেঁয়াজের মতো স্তরযুক্ত। কার্যকর পুষ্টি সরবরাহ শুধুমাত্র মূল কতটা শোষণ করে তার উপর নির্ভর করে না। তা কতটা নির্ভরযোগ্যভাবে ভিতরে যায় সেটাও একটা বড়ো ভূমিকা পালন করে।
সুইজারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব জেনেভার গবেষকরা জীবন্ত শিকড়ে এই পরিবর্তনটি চিহ্নিত করে দেখেছেন যে এটি কোষগুলিকে সংযুক্ত করে -রাখা ক্ষুদ্র ছিদ্রযুক্ত ‘প্লাজমোডেসমাটা’র সঙ্গে সম্পর্কিত। আগে ধারণা ছিল, এই ছিদ্রগুলো সবসময় দুই দিকেই পরিবহন চালায়, কিন্তু সরাসরি প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
গবেষকরা আরবিডোপসিস থালিয়ানা নামক উদ্ভিদ মডেল ব্যবহার করে আলোকপ্রভ প্রোটিন দিয়ে পরীক্ষা করেন। তরুণ শিকড়ে রঞ্জক উভয় দিকেই চলাচল করছিল। কিন্তু শিকড় পরিণত হওয়ার সাথে সাথে কেবল বাইরের স্তর থেকে ভেতরের দিকে প্রবাহ দেখা যায়, ভেতর থেকে বাইরে আর ফেরত আসে না।
এই পদ্ধতিটি বোঝার জন্য তারা একটি জিন- পরিবর্তিত তিল গাছ নেন । এ গাছের প্লাজমোডেসমাটা অস্বাভাবিক চওড়া, ফলে দুই দিকেই প্রবাহ সম্ভব হয়। সাধারণ অবস্থায় পুষ্টি পরিবহনে বড় পরিবর্তন দেখা না গেলেও খরার সময় এই পরিব্যক্ত গাছগুলো অদ্ভুত ভালোভাবে টিকে থাকে। দুই সপ্তাহ জল না পেয়েও পুনরায় জল দেওয়ার পর অধিকাংশ তিল গাছ স্বাভাবিকভাবে বাড়ে, যেখানে বুনো প্রজাতিও নিজেদের তেমনভাবে পুনরুদ্ধার করতে পারেনি।
গবেষকরা এখনো নিশ্চিত নন কীভাবে ছিদ্রের আকার পরিবর্তন খরা-সহনশীলতা বাড়ায়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ছিদ্রের আকার ও প্রবাহের দিক নিয়ন্ত্রণ করে উদ্ভিদের জল ধরে রাখা বা কম জলে পুষ্টি পরিবহনের দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব।
এই আবিষ্কার কৃষি ও উদ্ভিদ প্রজনন বিজ্ঞানে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। যদি প্লাজমোডেসমাটার ঘনত্ব, প্রস্থ নিয়ন্ত্রণ করা যায় তবে খরা বা পুষ্টিহীন মাটিতেও ফসলের উৎপাদন ধরে রাখা সম্ভব হবে। অর্থাৎ, শিকড়ের বিকাশ প্রক্রিয়া কেবল এক নিষ্ক্রিয় বাধা নয়, আসলে এটি একটি সক্রিয় নেটওয়ার্কের পুনর্গঠন।

এই গবেষণায় পাওয়া ইঙ্গিত থেকে আগামী গবেষণায় মূল প্রশ্নগুলো হল : কোন আণবিক উপাদান ছিদ্রের আকার ও দিকনির্দেশ নির্ধারণ করে? এন্ডোডার্মাল প্রতিবন্ধক ও প্লাজমোডেসমাটার পারস্পরিক সম্পর্ক কীভাবে একমুখী প্রবাহ গঠন করে? এসব উত্তর পাওয়া গেলে কৃত্রিমভাবে খরা-সহনশীল, পুষ্টি-দক্ষ উদ্ভিদ তৈরির পথে বড় অগ্রগতি সম্ভব হবে।

সূত্র : A developmental switch controls cell-to-cell transport in roots via pectin-linked plasmodesmata changes by Léa Jacquier, et.al; Molecular Plant(Volume 18; Issue 8) (4.8.2025) .

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − 13 =